ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮, নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৯:৪৯ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

সাকরাইন ঘিরে পুরান ঢাকায় উৎসবের আমেজ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:২৩ এএম, ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ শনিবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

পৌষ মাসের শেষ দিন বাংলাদেশসহ পুরো উপমহাদেশেই একটি উৎসবের আয়োজন করা হয় যা পৌষসংক্রান্তি হিসেবে পরিচিত। রাজধানীর পুরান ঢাকায় এ উৎসবকে বলা হয় 'সাকরাইন'। উৎসব, অনুষ্ঠান ও পার্বণের অঞ্চল মুগ্ধতা ছড়ায় বিশেষ যে কয়েকটি উৎসবে তার মধ্যে সাকরাইন অন্যতম। আর সাকরাইনকে সামনে নিয়ে পুরান ঢাকার প্রত্যেকটি ওলিগলিতে উঠেছে সাজ সাজ রব। তাইতো রঙ-বেরঙেয়ের ফানুস, বাতি, ঘুড়ি, ঝালরের সাজ স্থানীয় বাসিন্দা ও দর্শনার্থীদের মাঝে পুরান ঢাকা ছড়িয়ে দিচ্ছে নিজের লাবণ্য।

শুক্রবার ঢাকার দয়াগঞ্জ, মুরগিটোলা, কাগজিটোলা, সূত্রাপুর, বাংলাবাজার, ধূপখোলা মাঠ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, সদরঘাট, কোর্টকাচারি এলাকা ঘুরে সাকরাইনের এই আমেজ লক্ষ্য করা যায়। আজ শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সাকরাইন উপলক্ষ্যে দোকানগুলোতে চলছে ঘুড়ি, নাটাই, সুতা বিক্রির উৎসব। ছাদে ছাদে লেগেছে সুতা মাঞ্জা দেয়ার ও রোদে সুতা শুকানোর ধুম।

সাকরাইন বাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী উৎসবগুলোর একটি। বাংলা মাঘ মাসের প্রথম দিনকে হিন্দুরা মকর সংক্রান্তি বা পৌষ সংক্রান্তি পালন করলেও পুরান ঢাকার বাসিন্দারা দিনটিকে পালন করে সাকরাইন হিসেবে। মূলত ঘুড়ি উৎসব নামেই এটি বহুল প্রচলিত।

দিনব্যাপী নানান অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাসিন্দারা উৎসবটি পালন করে। সকালে থাকে বাকরখানির সাথে নানান ধরনের মিষ্টির আয়োজন। আরো থাকে মুড়ি, মোয়া সহ বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন। বিকাল থেকে শুরু হয় ঘুড়ি উড়ানোর উৎসব। সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয়ে যায় আতশবাজী ও ফানুস উড়ানো। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এসব এলাকায় চলে আতশবাজীর খেলা। সারারাত ধরে চলে বিভিন্ন ধরনের গান, নাচ সহ বিনোদনের ব্যবস্থা।

সাকরাইনকে কেন্দ্র করে খুচরা ও পাইকারি খেলনার দোকানসহ মিষ্টি ও বাকরখানির দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। রঙ-বেরঙেয়ের ঘুড়ির পসরা নিয়ে হাজির হয়েছে দোকানিরা। খুচরা সর্বনিম্ন ৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা দামের ঘুড়ি পাওয়া যাচ্ছে দোকানগুলোতে। এছাড়াও নাটাই সর্বনিম্ন ৫০ টাকা, সুতার মান ভেদে বিভিন্ন দামে সুতা বিক্রি করছেন দোকানিরা।

মায়ের আশীর্বাদ কসমেটিকস এর বিক্রেতা শ্যামল নন্দী বলেন, গতবছর সাকরাইনে করোনার বিধি নিষেধ থাকায় ভালো ভাবে ব্যবসা করতে পারিনি। তবে এই বছর এমন কোনো ঝামেলা না থাকায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা আমাদের দোকানে ঘুড়ি, সুতা, নাটাই সহ বিভিন্ন ধরনের জিনিস কিনতে আসছে।

ক্রেতা ইফতেখার ইসলাম বলেন, আমি যাত্রাবাড়ী থেকে ঘুড়ি কিনতে শাঁখারীবাজার এসেছি। আমাদের এলাকায় ভালো ঘুড়ি পাওয়া যায় না, পেলেও দাম অনেক থাকে। তবে শাঁখারীবাজার, তাতিবাজারে একটু কম দামে ভালো ঘুড়ি পাওয়া যায়। তবে এই বছর ভালো মানের ঘুড়ি গুলোর দাম একটু বেশি। তবে টাকার থেকে আনন্দটাই আসল।

বাকরখানি বিক্রেতা মানিক মিয়া বলেন, পুরান ঢাকার আসল মজা বাকরখানি আর সাকরাইনে। এই দুইটা জিনিসের নাম জানেনা এমন কেউ নাই। আমাদের ব্যবসা সারাবছরই। তবে এই সময় একটু চাপ থাকে। একজন নতুন কারিগর নিয়েছি, আমরা ২জন কারিগর এই সময় মানুষের চাপ সামলাতে কষ্ট হয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নব্য ভর্তি হওয়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সুশান্তিকা বলেন, ঢাকায় এই প্রথম সাকরাইনের আমেজ পেলাম। আগে বড় ভাইদের কাছে শুনতাম, এখন নিজেই দেখছি। চারপাশে এত ঘুড়ি আগে দেখিনি। ইচ্ছা আছে, এইবার বন্ধুর সাথে সাকরাইনে ঘুড়ি উড়াবো।

উল্লেখ্য, সাকরাইন উৎসব বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যগুলোতেও ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনায় বেশ ধুম ধাম সাথে পালন করা হয়। সকল ধর্ম, বর্ণের মানুষের মেলবন্ধনের উৎসব হিসেবেও সাকরাইনের রয়েছে বিশেষ খ্যাতি।