আমাদের ছোট্ট শ্বেতাক্ষী: আইরীন নিয়াজী মান্না
আইরীন নিয়াজী মান্না
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৩:৫৩ পিএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ শনিবার
আমাদের ছোট্ট শ্বেতাক্ষী
ছোট্ট ও ছটফটে স্বভাবের হলুদবরণ পাখিটি গাছের ডালে ডালে ঘুরে ঘুরে ফল-পোকা-মাকড় খায়। স্বভাবে বেশ ছটফটে, যাকে বলে দুরন্ত। চোখের চারদিক জুড়ে গোল সাদা রিং বসানো। দূর থেকে দেখে মনে হয় চশমাপরা।
ছোট্ট ও দারুণ সুন্দর এই পাখিটি আমি প্রথম দেখি রাজধানীর রমনা পার্কে। প্রথম দেখার পর পাখিটির কথা আমি প্রায় ভুলেই যাচ্ছিলাম। ঠিক এ সময় একদিন আমি স্কুল রাজধানীর শান্তিনগর চৌরাস্তায় সিদ্ধেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গেছি বন্ধুর সাথে দেখা করতে। সে-ও প্রায় বছর পনেরো আগের কথা। বন্ধু ক্লাস নিচ্ছে। আমি ভাবলাম টিচারস রুমে বসে না থেকে বাইরে মাঠের আশেপাশে একটু হাঁটাহাঁটি করি। হাঁটতে হাঁটতে গেইটের পাশে একটা বেশ বড় বরুই গাছের নিচে ছায়ায় দাঁড়ালাম (এখন আর গাছটি নেই)। বৃদ্ধ দারোয়ান আমাকে দেখেই এগিয়ে এলো। তাদের প্রাক্তন এক ছাত্রীকে হঠাৎ দেখতে পেয়ে সে বেশ আনন্দিত। তার সাথে কথা বলছি, এমন সময় কানে এলো মৃদুলয়ে মিষ্টি পাখির ডাক। বোঝাই যাচ্ছে পাখিগুলো আমার মাথার উপর বুরই গাছের ডালে বসে ডাকছে। ওপরে তাকাতেই আমি অবাক এবং মুগ্ধ! একটি-দুটি নয়; কমপক্ষে দশ থেকে বারটি পাখি ডালে ডালে খেলছে আর মিষ্টি সুরে ডাকছে। চোখ জুড়ে তাদের সাদা চশমা, শরীরজুড়ে হলুদ শাড়ি! আমি প্রাণভরে তাদের দেখলাম। মনে পড়ে গেল রমনায় তাদের সাথে দেখা হওয়ার সেই স্মৃতি। তারপর তাদের সাথে আমি মিলিত হয়েছি বহুবার, ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে।
ছোট্ট আদুরে এই পাখিটির নাম শ্বেতাক্ষী। কেউ কেউ একে ডাকে চশমা পাখি বলে। ওর আরো নাম আছে, বাবুনাই, চশমা টুনি প্রভৃতি। ইংরেজি নাম White Eye বা Oriental White Eye। পরিবার Zosteropidae এবং বৈজ্ঞানিক নাম Zosterops palpebrosus।
শ্বেতাক্ষী এ দেশের অন্যতম ছোট পাখি। আমাদের দেশে সবচেয়ে ছোট পাখি ফুলঝুরি। ফুলঝুরির পরই শ্বেতাক্ষীর স্থান। মাত্র ১০ সেন্টিমিটার লম্বা ও ৯ গ্রাম ওজন ওর। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা ও পিঠ হলুদাভ-সবুজ। ডানা ও লেজ কালচে। গলা, বুকের উপরাংশ ও লেজের তলা উজ্জ্বল হলুদ। বুক ও পেট সাদা। চোখের কোনায় কালচে দাগ। চোখ বাদামি-হলুদ। চঞ্চু কালচে ও নিচের দিকের চঞ্চুর গোড়া বাদামি। পা, পায়ের পাতা ও নখ ধূসর-বাদামি। ছানাদের চোখে চশমা থাকে না।
শ্বেতাক্ষী আমাদের আবাসিক পাখি। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, আফগানিস্তান, চীন, ওমান, ইরান প্রভৃতি দেশে বাস করে।
ওরা দলবেধে বেধে গাছের শাখায়-পাতায়-ফুলে লাফিয়ে লাফিয়ে ও উড়ে উড়ে খাবার সংগ্রহ করে। কখনো কখনো উল্টো হয়ে ডালে ঝুলে ফুলের মধু পান করে বা ফল খায়। কীটপতঙ্গ, রসাল পোকা, ফুলের রস, পাকা ফল, বীজ ইত্যাদি প্রিয় খাদ্য।
এপ্রিল-মে মাসে গাছের সরু শাখায় সরু শিকড়, মাকড়সার জাল ইত্যাদি দিয়ে গোলাকার ঝুলন্ত বাসা বানায়। ডিম হয় দু-তিনটি, রং ফ্যাকাশে নীল। ডিম ফোটে ৯-১১ দিনে। ছানারা প্রায় ১০ দিনে উড়তে শেখে।
পুরোপুরি বৃক্ষচারী এই পাখিটি এখনো আমাদের প্রকৃতিতে নিরাপদে আছে।
লেখক: বাংলাদেশ বার্ড ওয়াচার সোসাইটির আহবায়ক।