পড়াশোনার চাপে কি বাড়ছে শিশুদের আত্মহত্যা?
বিবিসি অনলাইন
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০২:৩১ পিএম, ১১ মে ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ০২:০১ পিএম, ১২ মে ২০১৮ শনিবার
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম বলছে, দেশে শিশুদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে গেছে। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে এ হার বেড়েছে ৪৩ শতাংশ।
গবেষকরা বলছেন, এসব আত্মহত্যার অনেকগুলোই ঘটে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের সময়। এর কারণ কি, আর শিশুদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাই বা বাড়ছে কেন? এসব প্রশ্ন নিয়ে কথা বলেছি একাধিক পরিবার, গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের সাথে।
এক ছেলে ও এক মেয়ের মা জয়শ্রী জামান। ২০১৪ সালে একদিন রাত ১১টা নাগাদ কর্মস্থল থেকে ফিরে জয়শ্রী জামান ঘরে ঢুকেই দেখতে পান, তার দুই সন্তানই আত্মহত্যা করেছে।
জয়শ্রী জামান বলেন, পারিবারিক এবং পারিপার্শ্বিক নানা কারণে সন্তানরা হতাশায় ভুগছিল এটা তিনি টের পেয়েছিলেন, কিন্তু এতে যে আত্মহত্যার মত মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে যাবে, তা তিনি কল্পনাই করেননি।
এই দুই শিশুর একসাথে আত্মহত্যার ঘটনা অনেককেই নাড়া দিয়েছিল। কিন্তু ঠিক কি কারণে তারা আত্মহত্যা করলো বা অনেক শিশু এখনো করছে তার গভীরতা অনেকেই ধরতে পারছেন না।
দেশে শিশুদের আত্মহত্যার একটা প্রবণতা দেখা যায় বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষার ফলাফলের পর। বিশেষ করে এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টে পর। এ বছর গত ৬ মে এসএসসির রেজাল্ট দেয়ার পর এখন পর্যন্ত ১৩জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে গণমাধ্যমে।
শিশুদের অধিকার নিয়ে কার্মরত শিশু অধিকার ফোরাম বলছে, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে এই হার বেড়েছে ৪৩ শতাংশ।
কেন শিশুদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে, এ প্রশ্ন নিয়ে কথা বলি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক এবং গবেষক তৌহিদুল হকের সাথে । তিনি বলছিলেন, এর পিছনে মূলত তিনটি কারণ।
তিনি বলেন, "প্রথমত মাত্রাতিরিক্ত পড়াশোনা এবং সর্বোচ্চ ফলাফলের প্রত্যাশার কারণে তাদের মানসিক চাপ বেড়ে যায় এবং এই চাপ থেকে তারা মুক্তি চায়।"
"আমাদের স্কুলগুলোতে `স্লো লার্নার সাপোর্ট সিস্টেম` নেই বললেই চলে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের আন্তরিকতার একটি ঘাটতি দেখা যায়।
দ্বিতীয় কারণ হলো, অভিভাবকদের মাত্রাতিরিক্ত প্রত্যাশা শিশুদের প্রচণ্ড চাপের মধ্যে ফেলে দেয়।" - বলছিলেন তিনি।
তৌহিদুল হক আরেকটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করলেন যে, বাংলাদেশের স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থা শিশুদের মন-মানসিকতা পর্যালোচনার করার কাঠামো তৈরি করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
ঢাকার গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক আলো আরজুমান বানুর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, শিক্ষক হিসেবে তারা কতটা দায়িত্বপালন করতে পারেন?
তিনি বলছিলেন, "এক্ষেত্রে শিক্ষকদের দায় কিছুটা কম। কারণ প্রতিষ্ঠান থেকে একটা প্রেশার থাকে স্কুল ভাল রেজাল্ট করলো কিনা, অভিভাবকরাও বলতে থাকেন, কেন বাচ্চারা ভালো রেজাল্ট করছে না? এই যে চাপ - এটার ফলে আমরা তাদের বলতে বাধ্য হই যে `তোমরা ভালো রেজাল্ট করো।` `তোমরা ভালো মানুষ হও` এটা আমরা বলি না।"
বাংলাদেশে কাউন্সেলিং সেন্টার আছে হাতেগোনা কয়েকটি স্কুলে। তবে সেগুলো উল্লেখ করার মত নয়।
শিশু অধিকার ফোরাম বলছে, ২০১২ থেকে ২০১৮ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৯৭০টি শিশু আত্মহত্যা করেছে। ২০১৭ সালে ২১৩টি শিশু আত্মহত্যা করে - যে সংখ্যা ২০১৬ সালে ছিল ১৪৯। এ বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের প্রথম চার মাসে ১১০টি শিশু আত্মহত্যা করেছে।
`বাবা-মায়ের অতি উচ্চাকাঙ্খা` শিশুদের আত্মহত্যার একটা বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
তাছাড়া গবেষকরা বলছেন, বর্তমানে নগরায়নের যুগে শিশুরা খুব সহজে একা হয়ে পড়ছে। যার ফলে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়া অনেকেই আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হচ্ছে। আর তাদের কাউন্সেলিং বা পরামর্শ দেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক কোন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।