ঢাকা, সোমবার ১৮, নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৫১:৫৯ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

রকমারি ইফতারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪.কম

প্রকাশিত : ১২:৫১ এএম, ১৮ মে ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ১২:৪৮ এএম, ২০ মে ২০১৮ রবিবার

রমজানের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল ইফতার। প্রতিটি ধর্মপ্রাণ রোজাদারের কাছে এর গুরুত্ব অসীম। সারাদিন অভুক্ত থাকার পর আহারের মাঝে যেমন আছে এক অনাবিল আনন্দ, তেমনি এর ধর্মীয় মহাত্মের জন্যও আছে এক শান্তিময় পরিতৃপ্তি। তাই বিত্তবান থেকে শুরু করে একজন বিত্তহীন মানুষও চেষ্টা করে ইফতারের সময় তার সাধ্যমত ভাল কিছু খাবারের আয়োজন করতে।

 

দেশ ও সমাজ ভেদে ইফতারের খাদ্যে নানা রকম পার্থক্য ও প্রকারভেদ দেখা যায়। কিছু খাবার আবার শারীরিক প্রয়োজনকে ছাপিয়ে শুধুমাত্র অভ্যাস বা সামাজিক অভ্যাসের কারণে গ্রহণীয় হয়ে উঠে। কিন্তু সবকিছুর ঊর্ধ্বে একজন রোজা পালনকারীর জন্য সর্বাধিক গুরুত্ব অনুসারে বিবেচনা করা প্রয়োজন তার রোযা শরীরের উপযোগী খাদ্যের মানের উপর। দিনভর উপোস থাকার কারণে স্বভাবতই আমাদের আকর্ষণ বেশি থাকে ভাজা-ভুনা খাবারের প্রতি। আর তাই আমাদের দেশে তেলে ভাজা নানা রকম মুখরোচক খাবার সবসময় জনপ্রিয়।

 

বিশেষ করে পিঁয়াজু, বেগুনী, বিভিন্ন প্রকার চপ, বড়া, ছোলা ইত্যাদি ইফতারির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু একজন মানুষ যখন খাদ্য ও পানীয় ছাড়া দীর্ঘ সময় কাটান তখন তার পাকস্থলী শূন্য হয়ে যায় এবং শরীরে সবচেয়ে বেশী সৃষ্টি হয় পানীর চাহিদা। এই অবস্থায় তেলে ভাজা বা ভুনা খাদ্য শরীরে যেমন সহজে পরিপাক হতে পারে না তেমনি পানি শূন্যতাকেও পূরণ করতে পারেনা। তার উপর আবার আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষই গ্যাস্ট্রিক এবং পেপটিক আলসারের সমস্যায় ভুগেন। তাদের জন্য এ ধরণের খাবার আরও বেশী সমস্যা সৃষ্টি করে।

 

এছাড়াও এ সব ভাজা খাবারের একটি প্রধান উপাদান হল বেসন, যা তৈরী হয় ছোলা বা ডাবলির কলাই থেকে। এই কলাই বা বীণ জাতীয় সব ডালই শরীরে ইউরিক এসিড বৃদ্ধি করে। পিঁয়াজুতে সরাসরি খেসারী ডাল ব্যবহার করা হয়। এই খেসারী ডাল ল্যাথারিজমের জন্ম দেয়। পাশাপাশি হালিম, ছোলা ভুনা বা ডাবলি থেকেও ইউরিক এসিড তৈরি হয় যা মানবদেহের গেঁটেবাতের জন্য দায়ী। আমাদের দেশে ব্যবহৃত তেলেরও নানা রকম দূর্নাম শোনা যায়। এই সমস্ত তেল ভাজার জন্য ব্যবহার করাও নিরাপদ নয়। বেশীরভাগ দেশেই রান্না করা, ভাজি করা এবং কাঁচা ব্যবহারের জন্য আলাদা আলদা তেল থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে সে রকম কোন ব্যবস্থা নেই।

 

রোজার সময় বিশেষ করে বাজারে ইফতার তৈরির হোটেল-রেস্টুরেন্ট বা রোজাকে কেন্দ্র করে গজিয়ে উঠা ইফতার বাণিজ্যের দোকানগুলোতে একই তেল বারবার ব্যবহার হয়। এইসব তেল মানুষের শরীরে বিষক্রিয়ার জন্ম দেয়। ফলে সৃষ্টি হয় আলসার এমনকি এর থেকে ক্যান্সারেও আক্রান্ত হতে পারে মানুষ। তাই ইফতারের সময় যথাসম্ভব রাস্তার পাশ থেকে বা সম্ভব হলে দোকান থেকে কেনা ইফতারী বর্জন করাই উত্তম।

 

আর ইফতারীতে সহজে হজমযোগ্য সেদ্ধ খাবার বা তাজা ফলমূল খাওয়াই অধিক স্বাস্থ্যকর। পায়েস, ফিরনী, দই ইফতারের জন্য খুবই উপযোগী। সেদ্ধ গাজর, আলু, ফুলকপি বা ব্রকোলীর সালাদ, কলা, পেঁপে, আম, আনারস, শসা যত খুশি খাওয়া যেতে পারে। ভেজানো চিড়ে দই, দুধ এবং কলা দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। যেকোনো কার্বোনেটেড বেভারেজ এর বদলে ফলের রস বা লেবুর শরবত শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে পারে। সবজির সাথে সেদ্ধ ডিম, স্টিম করা চিকেন বা মাছ দিয়েও নানারকম কম ঝালের নোনতা স্বাদের খাবার তৈরি করা যেতে পারে। কম মসলা দিয়ে রান্না করা দেশি মুরগীর ঝোলের সাথে খিচুড়িও হতে পারে ইফতারের জন্য একটি উত্তম আহার। তবে কাচ্চি বা চিকেন বিরানী ও তেহারী যত কম খাওয়া যায় ততই ভাল।

 

যারা মাংস খেতে পছন্দ করেন তারা চিকেন ফ্রাই এর বদলে শিক কাবাব পরিমিত পরিমানে নান, তন্দুরি বা চাপাতি রুটির সাথে খেতে পারেন কিন্তু পরোটার সাথে নয়। আমাদের দেশে ইফতারে বহুল ব্যবহৃত একটি খাদ্য হচ্ছে মুড়ি। এই মুড়ি সকলের জন্য উপাদেয়। সব খাবারের সাথেই যত খুশী মুড়ি খেতে পারেন। তবে সব কথার এক কথা, যে খাবারই খান না কেন সেই খাবার বা তা তৈরির উপাদানে যেন কোন রকম ভেজাল বা ক্যামিকেল না থাকে সে ব্যাপারে সবসময় সজাগ থাকবেন, পুরো রমযানে সব ধর্ম প্রাণ বাঙালিরা থাকুক সুস্থ ও সুন্দর ।