ঢাকা, রবিবার ২৪, নভেম্বর ২০২৪ ১১:৪০:৩৩ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

চকবাজারের ইফতার : ’বড় বাপের বেটায় খায়’-এ মুগ্ধ ক্রেতা

আসমা আক্তার

উইমেননিউজ২৪.কম

প্রকাশিত : ০৩:১২ পিএম, ২০ মে ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ১০:২১ পিএম, ২২ মে ২০১৮ মঙ্গলবার

শাহী ইফতার মানেই পুরান ঢাকার চকবাজারের ইফতার। রমজানের প্রতিদিন দুপুর থেকেই চকবাজার ছাপিয়ে পুরান ঢাকার অলিগলির বাতাসে ভাসে নানা স্বাদের মুখরোচক খাবারের মনকাড়া সুবাস। ইফতার ঐতিহ্যে এবারও জমজমাট পুরান ঢাকা।

 

এবছরও চকবাজার শাহি মসজিদের সামনে বসেছে রাজধানীর সবচেয়ে বড় ইফতারির বাজার। বংশ পরম্পরায় দক্ষ হয়ে ওঠা ইফতার তৈরির এসব কারিগরের তৈরি সুস্বাদু সব ইফতারির টানে শুধু আশপাশ এলাকার বাসিন্দারাই নন; ছুটে আসছেন দূর-দূরান্তের ক্রেতারাও। 

 

চকবাজার ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দোকানিরা বৈচিত্র্যে ভরা সামগ্রী সারি সারি করে সাাজয়ে রাখেন। কিছু সময় না যেতেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাক ও দরদামে অন্যরকম পরিবেশ সৃষ্টি হয়। জোহরের নামাজের পর থেকেই ইফতার বাজার জমে ওঠে। বিক্রেতারা জানান, এবছর এখানে সব মিলিয়ে ৭ শতাধিক দোকান বসেছে।

 

চকবাজারে ইফতার কিনতে গেলে যে কথাটি সবচেয়ে বেশি শোনা যায় তা হচ্ছে, ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙ্গা ভইরা লইয়া যায়।’ জনপ্রিয় এই ইফতার আইটেম প্রায় ৭৫ বছর আগে বাবুর্চি কালেম মিয়া তৈরি করেছিলেন। এরপর বংশানুক্রমে তার ছেলে আলম থেকে সালেকিন মিয়ার হাত পেরিয়ে এখন এ খাবার চকবাজার ইফতার বাজারে অধিকাংশ ব্যবসায়ি বিক্রি করেন।

 

বংশ পরম্পরায় এবারও এই ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ নামক নামকরা ইফতারসামগ্রী নিয়ে বসেছেন মজনু মিয়া। তিনি জানান, এটি তৈরিতে ডিম, গরুর মগজ, আলু, ঘি, কাঁচা-শুকনো মরিচ, গরুর কলিজা, মুরগির মাংসের কুচি, মুরগির গিলা কলিজা, সুতি কাবাব, মাংসের কিমা, চিড়া, ডাবলি, বুটের ডাল, মিষ্টি কুমড়াসহ ১৫ পদের খাদ্য উপাদান ও ১৬ ধরনের মশলা ব্যবহৃত হয়। আর মোট ৩১টি পদ দিয়ে যে মিশ্রণ তৈরি হয়, তারই নাম ‘বড় বাপের পোলায় খায়’। এটি এবার বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৫৫০ টাকা কেজি দরে।



বড় বাপের পোলায় খায় ছাড়াও শিক কাবাব, সুতি কাবাব, মুঠিয়া, বটি কাবাব, জালি কাবাব, রেশমি কাবাব, পাখির রোস্ট, মুরগির রোস্ট, মুরগ মোসাল্লাম, সমুচা, শিঙ্গাড়া, ঘুড়নি, ছোলা, পেঁয়াজু, জিলাপি,দই বড়া, হালিমসহ শত শত পদের সমাহার চকে। দেখে মনে হয় আইটেম গুণে শেষ করা যাবে না। প্রায় দেড়শ` বছরের পুরনো এ ঐতিহাসিক বাজারে দুপুর থেকেই ক্রেতা আসেন। বিকেলে ভীড় একটু বেশি থাকলেও সন্ধ্যার আগে আগে ভিড় হালকা হয়ে যায়। চকের চরিত্রই এমন। দুপুরের পর জমে ওঠে সন্ধ্যার আগেই শূন্য। চকের প্রায় সব দোকানই ৩৫ থেকে ৪০ বছরের পুরাতন ও ঐতিহ্যবাহী।

 


রুম্মন বেপারী ৩৫ বছর ধরে চকে বিক্রি করছেন কাবাব, রোস্ট, `বড় বাপের পোলায় খায়`। সবই মাংসের খাবার। বড় বাপের পোলায় খায় বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা, হাঁসের রোস্ট ৫০০ টাকা, মুরগি ৪৫০ টাকা, কোয়েল পাখির রোস্ট ১৫০ টাকা। গতবারের চেয়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি।



অন্যান্য দোকান ঘুরে দেখা গেল, দইবড়া বাটিভেদে দাম ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা, ফিরনি ৫০ থেকে ১০০, বোরহানি ১০০ থেকে ১২০ টাকা লিটার , হালিম প্রকারভেদে ৩০০ থেকেট ৫৫০ টাকা, জিলাপি ১২০ থেকে ১৬০ টাকা। শাহি জিলাপি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। ইফতারিতে শরবতে আম, বেল, কাশ্মীরি শরবত, লাবাংয়ের চাহিদা বেশি। আর ফালুদা তো চকের সব দোকানেই আছে।



রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চকে ইফতার করতে অাসেন ইফতারপ্রেমীরা। এমনই একজন মানহা জাবীন। তিনি জানালেন, তারা ছয়জন আজ চকে ইফতার করবেন। নানা আইটেমের সঙ্গে অবশ্যই খাবেন ’বড় বাপের বেটায় খায়’ আইটেমটি। 

 

মানহা বলেন, সেই ছোটবেলা থেকে চকবাজারের ইফতারির কথা অনেক শুনেছি। তাই সবাই মিলে এসে পড়লাম।  ’বড় বাপের বেটায় খায়’ আজই প্রথমবারের মত টেস্ট করবো।