দেশে ৫১ ভাগ নারী সাইবার ক্রাইমের শিকার
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০৯:৫৪ পিএম, ২০ মে ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ০২:৩৪ পিএম, ২৩ মে ২০১৮ বুধবার
দেশের ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী নারীদের ৫১ ভাগই সাইবার ক্রাইমের শিকার বলে জানিয়েছে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিসিএএফ)।
রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সিসিএ ফাউন্ডেশন তাদের এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। মাঠ পর্যায়ের ১৩৩ জন ভুক্তভোগীর ওপর জরিপ চালিয়ে এই গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করেছে সংস্থাটি।
এতে আরো বলা হয়েছে, নারী, পুরুষ মিলিয়ে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৭৪ ভাগ মানুষই কোনো না কোনোভাবে সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন। সাইবার ক্রাইমের শিকার নারীরা দেশের প্রচলিত আইনের সুবিধাও পান না। তবে একটু সচেতন হলেই এসব সাইবার অপরাধ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা সম্ভব।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ইলেকট্রনিক সার্টিফিকেট প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রক আবুল মনসুর মোহাম্মদ সারফ উদ্দিন। এ সময় প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিসিএ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা এ কে এম নজরুল হায়দার, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের যুগ্ম সম্পাদক মঈন উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাশেদা রওনক খান।
অনুষ্ঠানে আবুল মনসুর মোহাম্মদ সারফ উদ্দিন বলেন, দিন দিন বাড়ছে প্রযুক্তি সেবার গ্রহীতার সংখ্যা। তবে অসচেতনতার ফলে তাদের অনেকে সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন, কেউ কেউ সাইবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। এ থেকে বাঁচতে জনসচেতনার বিকল্প নেই।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৬০ দশমিক ৯০ শতাংশ ফেসবুক ব্যবহার করেন। ব্যবহারকারীদের ৭৮ শতাংশ পুরুষ ও ২৪ শতাংশ নারী বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়।
সিসিএএফ’র গবেষণায় উঠে এসেছে, অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্টের অপপ্রচারের শিকার হন ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং ১২ দশকি ৭৮ শতাংশ পুরুষ। আইডি হ্যাকিং বা তথ্যচুরির শিকার হন ১৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ পুরুষ ও ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ নারী।
এছাড়াও দেশে সংঘটিত সাইবার অপরাধের আখড়া হয়ে উঠছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। আর এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী মেয়েরা। ছবি বিকৃতির মাধ্যমে অনলাইনে অপপ্রচারে ক্ষতিগ্রস্ত নারীর হার ১২ দশমিক ০৩ শতাংশ। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগী পুরুষের সংখ্যা ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ- বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।
তবে হয়রানির শিকার হলেও ভুক্তভোগীদের ৩০ শতাংশই জানে না কীভাবে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। ২৩ শতাংশ আরও হয়রানির ভয়ে আইনের সাহায্য না নিয়ে পুরো বিষয়টি চেপে যান। অন্যদিকে সামাজিক ভাবমর্যাদা রক্ষায় পুরো বিষয়টি গোপন রাখেন ১৭ শতাংশ এবং প্রভাবশালীদের ভয়ে নিশ্চুপ থাকে ৫ শতাংশ ভুক্তভোগী। অভিযোগ করেও আশানুরূপ ফল পাননি ৫৪ শতাংশ ভুক্তভোগী।
সিসিএএফ’র প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইবার অপরাধের শিকার হওয়াদের ৪৪ শতাংশই মনে করেন অপরাধীদের তাৎক্ষণিক শাস্তি দেয়া গেলে এই নীরব ঘাতকের হাত থেকে মুক্তি মিলবে। ২৯ শতাংশ আইনের প্রয়োগ বাড়ানো এবং ২৭ শতাংশ সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন।
সরকারি গবেষণার বরাত দিয়ে সারফ উদ্দিন বলেন, স্কুলের নবম-দশম শ্রেণির মেয়েরা সাইবার অপরাধের শিকার হয় বেশি। এজন্য সরকার সম্প্রতি ৪০টি বিদ্যালয়ের এক হাজার শিক্ষার্থীকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরো শিক্ষার্থীদের এ ধরনের সাইবার সচেতনতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
রাশেদা রওনক খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েরাও সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো মেয়ের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পাওয়া যায়, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হচ্ছে। অথচ একটু সচেতন হলে এসব ঝুঁকি এড়িয়ে প্রযুক্তি সেবা নেওয়া যায়।
অনুষ্ঠানে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিএসএ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক কাজী মুস্তাফিজ, স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ হাসান।