অপহরণ করে অনলাইনে শিশু বিক্রি করতো এরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৯:৪৬ পিএম, ১৯ মে ২০২৩ শুক্রবার
সংগৃহীত ছবি
আম কিনে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে শিশুকে অপহরণ করে এক ব্যক্তি। সেই শিশুটিকে বিক্রির জন্য অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেন তার স্ত্রী। পরে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে তিন বছরের শিশুটিকে বিক্রি করে দেন অপহরণকারী। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অপহৃত সেই শিশুর ক্রেতাসহ অপহরণকারী চক্রের হোতা পীযূষ দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড একশন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন অপহরণকারী পীযূষ কান্তি পাল, সহযোগী ও স্ত্রী রিদ্ধিতা পাল, শিশু বিক্রির মধ্যস্থতাকারী সুজন সুতার, শিশু ক্রেতা পল্লব কান্তি বিশ্বাস ও তার স্ত্রী বেবি সরকার।
শুক্রবার (১৯ মে) কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-২-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন খান।
তিনি জানান, গত ২৬ এপ্রিল দুপুরে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় বাসার সামনে বড় বোন হুমায়রার সঙ্গে খেলছিল শিশু মো. সিদ্দিকসহ আরও সাত থেকে আট শিশু-কিশোর। ওই সময় পীযূষ সবাইকে চকলেট খাওয়ান। একটু পর হুমায়রাকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে ছোট ভাই সিদ্দিককে আম কিনে দেওয়ার কথা বলে অপহরণ করে নিয়ে যান পীযূষ। দিন শেষে শিশুদের মা বাসায় এলে হুমায়রা বিষয়টি তার মাকে জানায়। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ছেলের সন্ধান না পেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ওই নারী।
নিখোঁজের ঘটনায় শিশুটির বাবা দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেন। র্যাব-২ তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে জানতে পারে, অপহরণকারী ব্যক্তি সাভারের বাসিন্দা পীযূষ কান্তি পাল ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা পাল। এই দম্পতি শিশুটিকে বিক্রির উদ্দেশ্যে অনলাইন গ্রুপে পোস্ট দেয়। সেখানে তারা নিজেদের গৃহকর্মীর শিশু হিসেবে অপহৃত শিশুটিকে পরিচয় করিয়ে পোস্ট দেন। এরপর তারা সুজন সুতারের মাধ্যমে পল্লব কান্তি বিশ্বাস ও তার স্ত্রী বেবি সরকারের কাছে শিশুটিকে ২ লাখ টাকায় বিক্রি করেন।
ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন খান জানান, শিশু কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত সুজন সুতারকে রাজধানীর শাহবাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তী সময়ে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার অপহৃত শিশুকে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার তাড়াসি গ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয়।
আনোয়ার হোসেন জানান, অপহরণকারী চক্রটির হোতা পীযূষের বাড়ি পঞ্চগড়। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়াকালীন পার্ট টাইম জব হিসেবে বিউটি পার্লার/স্পা সেন্টারে কাজ করতেন। স্পা সেন্টারে কাজ করার সময় রিদ্ধিতা পালের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তারা ২০২০ সালে বিয়ে করেন। মূলত স্পা সেন্টারে কাজ করার সময় থেকে তিনি মানব পাচারে জড়িয়ে পড়েন।
র্যাব জানায়, ২০২২ সালের মে মাসে মানব পাচারের অভিযোগে বনানী থানায় পীযূষের নামে মামলা হয়। এই মামলায় কিছু দিন জেল খেটে জামিনে বের হন তিনি।
র্যাবের কর্মকর্তা জানান, সাভার থেকে ঢাকা উদ্যানে এসে অপহরণের পর শিশুর ছবি ব্যবহার করে একটি অনলাইন গ্রুপে পোস্ট দেওয়া হয়। ওই পোস্টে রিদ্ধিতা পাল লিখেন, তার বাসার স্বামী পরিত্যক্তা গৃহকর্মীর একটি শিশুকে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে দত্তক দেওয়া হবে। এরপর সুজন সুতার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ২১ এপ্রিল যোগাযোগ করেন। ছবি দেখে সুজন সুতার শিশুটিকে পছন্দ করেন এবং তাকে টাকার বিনিময়ে দত্তক নেবেন বলে জানান। পরবর্তী সময়ে রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় রিদ্ধিতা পাল নিজেকে অর্পনা দাস ও পীযূষ কান্তি পাল নিজেকে বিজন বিহারী পাল পরিচয় দেন। প্রমাণস্বরূপ প্রনিল পালের টিকা কার্ড, রিদ্ধিতা পালের জন্ম সনদ এবং বিজন বিহারী পালের আইডি কার্ডের ফটোকপি প্রদান করেন।
অপহৃত শিশু বিক্রিতে সহায়তাকারী সুজন সুতার র্যাবকে জানান, তার নিকটাত্মীয় পল্লব কান্তি বিশ্বাস দুই লাখ টাকার বিনিময়ে শিশুটিকে কিনে নেন। সুজন আরও জানান, ২৬ এপ্রিল রাতে পল্লব কান্তি বিশ্বাস ও তার স্ত্রী বেবি সরকারকে গোপালগঞ্জের নিজ বাড়িতে গিয়ে শিশুটি দিয়ে আসেন তিনি।