ঢাকা, রবিবার ২৪, নভেম্বর ২০২৪ ১২:৫৯:৩১ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন : ইতিহাস কথা কয়

অনলাইন ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪.কম

প্রকাশিত : ০৩:০০ পিএম, ২৫ মে ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ১২:১৮ পিএম, ৩০ মে ২০১৮ বুধবার

শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতীতে বাংলাদেশ ভবন তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের অর্থানুকূল্যে। কি কি রয়েছে এই ভবনে, কি ভাবে সাজানো হয়েছে এই ভবন তা তুলে ধরা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। 

শুক্রবার এ ভবন উদ্বোধন করেছেন বাংলাদেশ ও ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী।


অত্যাধুনিক দোতলা এই ভবনটিতে আছে একটি মিলনায়তন, জাদুঘর এবং গ্রন্থাগার। প্রায় ৪৬,০০০ বর্গফুট জায়গার এই ভবনে উদ্বোধনের আগের রাত পর্যন্তও কাজে ব্যস্ত ছিলেন বাংলাদেশ থেকে আসা শিল্পী আর কর্মীরা। জাদুঘরটি চালু হচ্ছে প্রায় ৪০০০ বর্গফুট এলাকা নিয়ে। পরে এটিকে আরও বড় করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আর গ্রন্থাগারের জন্য বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসা হয়েছে প্রায় ৩৫০০ বই।
এর মধ্যে অনেক বইই রবীন্দ্রচর্চা এবং রবীন্দ্র গবেষণা ভিত্তিক, যা ভারতে সহজলভ্য নয়। গ্রন্থাগার আর জাদুঘরটিতে রয়েছে অনেকগুলি ইন্টার অ্যাকটিভ, টাচ স্ক্রিন কিয়স্ক। রয়েছে রবীন্দ্রনাথের গান, কবিতা শোনার জন্য অডিও কিয়স্ক।

ছাপানো বই ছাড়াও ডিজিটাল বইও পড়তে পারবেন পাঠকরা। ভবনটির কিউরেটর তারিক সুজাত। তিনিই জানালেন, এ জাদুঘরকে মূলত ৪টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। শুরু হয়েছে উয়ারি বটেশ্বরে প্রাপ্ত ২৫০০ হাজার বছর পুরনো সভ্যতার নিদর্শন দিয়ে। শেষ হয়েছে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ দিয়ে। মাঝের অনেকটা সময় জুড়ে এসেছে রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গ। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন যেমন রয়েছে, তেমনই আছে অতি দুর্লভ কিছু ছবি, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত নানা প্রত্ন নিদর্শনের অনুকৃতি। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলির মধ্যে উয়ারি বটেশ্বরে প্রাপ্ত প্রত্ন নিদর্শন যেমন আছে, তেমনই আছে ৬ষ্ঠ-৭ম শতকের পোড়ামাটির কাজ, ১৬শ শতকের নক্সাখচিত ইট প্রভৃতি। রয়েছে পাহাড়পুর, মহাস্থানগড়ের নানা নিদর্শন, দেবদেবীদের মূর্তি। কোনটা পোড়ামাটির, কোনটি ধাতব। মাঝখানে সুলতানি এবং ব্রিটিশ শাসনামলও এসেছে জাদুঘরটিতে রাখা নানা প্যানেলে। রয়েছে ঢাকার জাতীয় জাদুঘর থেকে আনা বেশ কিছু মুদ্রা।


তারিক সুজাত বলেন, এই পর্যায়টি শেষ হয়েছে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময়ে। তারপরের বিভাগ শুরু হয়েছে ৫২-র ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রিক যে বিভাগ, তার আগে ভাষা আন্দোলনের প্রসঙ্গটি এ কারণে রাখা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সূচনা তো সেই ৫২-তেই,।

নানা প্যানেলে আর ছবিতে ধরা রয়েছে ১৯৫২-র ২১শে ফেব্রুয়ারি সকালে পাকিস্তানী সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যে ঐতিহাসিক মিছিল হয়েছিল, সেখানে গুলি চালনা আর ভাষা শহীদদের প্রসঙ্গ।
তারিক সুজাত আরো বলেন, ঠিক তার পরের বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি যে সঙ্কলন বেরিয়েছিল, যেখানে `আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১শে ফেব্রুয়ারি`, তোফাজ্জেল হোসেনের `রক্ত শপথে আমরা আজিকে তোমারে স্মরণ করি`-র মতো কালজয়ী গানগুলি ছিল। রয়েছে সেই সঙ্কলনটির ছবি। তারপরে ৬২র ছাত্র আন্দোলন, ৬৬-র আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা-এসব পেরিয়ে ৭০ এর নির্বাচন প্রসঙ্গ রেখেছি প্যানেলগুলিতে।


মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রয়েছে একটি আলাদা গ্যালারি। তাতে দেখা যাচ্ছে যুদ্ধের সময়কার নানা দুর্লভ ছবি, শরণার্থী শিবির এগুলি।


রবীন্দ্রনাথ নিয়ে রয়েছে সম্পূর্ণ পৃথক একটি বিভাগ। পূর্ববঙ্গে সাজাদপুর, শিলাইদহ, পতিসরের কাছারীবাড়ির ছবি, সেখানে কবির ব্যবহৃত নানা জিনিষের অনুকৃতি দিয়ে সাজানো রয়েছে জাদুঘরের এই অংশটি।


কয়েকটি ব্যবহৃত বস্তুও আনা হয়েছে সাজাদপুর থেকে-কেরোসিনের বাতি, লবণ দানি, খাবার পাত্র। এগুলি অবশ্য উদ্বোধনের পরেই ফেরত চলে যাবে বাংলাদেশে।


তারিক সুজাত বলেন, যেসব প্রত্ন নিদর্শন নিয়ে আসা হয়েছে, সেগুলি দীর্ঘমেয়াদী ঋণ হিসাবে বিশ্বভারতীতে এসেছে। বেশ অনেক বছর থাকবে। চিরস্থায়ীভাবে দেয়া হয় নি। সরকারের সঙ্গে বিশ্বভারতীর মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী নিদর্শনগুলি এসেছে। ঠিক যেভাবে নানা যাদুঘরে প্রদর্শন বিনিময় হয় সারা পৃথিবীতেই।

সূত্র : বিবিসি