ঢাকা, রবিবার ২২, ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:২২:৫৫ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

চিরিরবন্দরে বিলুপ্তির পথে তাঁতশিল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:০৩ পিএম, ১২ জুন ২০২৩ সোমবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

আগের মতো আর শোনা যায় না সেই সুপরিচিত রানীরবন্দরের তাঁতের খুটখাট শব্দ। নেই গ্রাহক আর পাইকারদের আনাগোনাও। বিলুপ্তির পথে রানীরবন্দরের তাঁতশিল্প। ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই তাঁতসমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার রানীরবন্দরের সুনাম ও পরিচিতি রয়েছে। এখানকার উৎপাদিত শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, তোয়ালে, চাদর ও মশারি জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো। ছোট-বড় মিলে অন্তত দুই শতাধিক তাঁতশিল্প কারখানা গড়ে উঠেছিল। এসব তাঁতশিল্প কারখানায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ সহস্রাধিক মানুষ জড়িত ছিলেন। এখন আর নেই সেই তাঁতশিল্পের জৌলুস। নেই তাঁতের খুটখাট শব্দ। এখনো কিছু তাঁত চালু রয়েছে। সেগুলোর অবস্থাও নাজুক। কোনরকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। অথচ এ অঞ্চলের তাঁতশিল্পের উজ্জ্বল সম্ভাবনা, সুদক্ষ তাঁতশিল্পী, সহজলভ্য শ্রমিক থাকা সত্ত্বেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, রপ্তানির বন্দোবস্ত ও সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব, সহজ শর্তে তাঁত ঋণ না পাওয়া এবং প্রয়োজনীয় কাঁচা উপকরণের (সুতা-রঙ) দিন দিন মূল্য বৃদ্ধির কারণে রানীরবন্দরের ঐতিহ্যবাহি তাঁতশিল্প বিলুপ্তির পথে। নানা প্রতিকুলতার পরেও কয়েকজন তাঁতী বাপ-দাদার রেখে যাওয়া পেশাকে ধরে রেখেছেন। এখনো এখানকার তাঁতশিল্প স্থানীয়ভাবে কাপড়ের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। আবার তাঁতশিল্প জেগে উঠলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখা ছাড়াও অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। 
তাঁতীরা জানান, কাপড় বুনতে তারা প্রথমত সূতার বান্ডিলগুলো ধুয়ে শুকাতে দেন। এরপর সাবু, বার্লি, ময়দা একসাথে পাক করে একপ্রকার মাড় তৈরি করে তা ঠান্ডা হওয়ার পর আবার সেই মাড় দিয়ে সাবানের মতো মাখিয়ে ধুয়ে শুকাতে দেয়া হয়। শুকানোর পর সূতাগুলো কাজের উপযোগী করে তুলতে হাল্কা পানি দিয়ে স্যাঁতসেঁতে করে নেসা (বড় সূতার টোটার মতো) তৈরি করে চড়কায় (বড় চাকতির মতো) ববিন (কাপড়ের লম্বার দিকের সূতা), নলি (কাপড়ের খাটোর দিকের সূতা), পেলে (পাইড়ের সূতা) কাটা করা হয়। এরপর তাঁত মেশিনে হাতে শুরু হয় কাপড় বুননের কাজ।
উপজেলার নশরতপুর গ্রামের বালাপাড়ায় দেড়শ' বছর ধরে চলে আসছে তাঁতের ব্যবসা। ওইপাড়ার আব্দুল মালেক জানান, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া এ পেশা ধরে রেখে তাঁতে গামছা তৈরি ও বিক্রি করে আসছি। আমার সাথে স্ত্রীসহ ছেলেও এ কাজে সাহায্য করেন। আমার তিনটি তাঁত থাকলেও এখন একটি চালু রয়েছে। প্রতিদিন এই তাঁতে ১২ পিছ গামছা তৈরি করা যায়। সূতা-রঙসহ খরচ হয় ৮০০ টাকা। এসব বিক্রি হয় ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা। তিনি জানান, ১০ বছর আগেও আমাদের দুই ভাইয়ের ৭০টি তাঁত ছিল। বর্তমানে চালু আছে মাত্র ১০টি। পুঁজি কম, বাজারজাতকরণে অসুবিধা এবং সূতা ক্রয় করতে সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনায় যেতে হয়। এলাকায় সূতার সহজলভ্যতা এবং উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণের জন্য সরকারের কোনো প্রজেক্ট নেয়া হলে অত্রাঞ্চলের তাঁতশিল্প পুনরায় জেগে উঠবে বলে তিনি জানান। তাঁরই ছোটভাই আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাবু তাঁতে ম্যাট তৈরি করে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন। 

বাবু জানান, তাঁতে বিভিন্ন কাপড় বাদ দিয়ে এখন ম্যাট উৎপাদন করছেন। অর্ডার অনুযায়ী ১৮ ইঞ্চি-১৪ ইঞ্চি, ৬০ ইঞ্চি-১৪ ইঞ্চি মাপের বিভিন্ন ডিজাইনের ম্যাট করছেন। এতে তার কারখানায় পাঁচজন নারী শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। সব খরচ বাদ দিয়ে ১০ হাজার টাকা আয় হয়। তিনি গত পাঁচ বছর ধরে এই ম্যাট তৈরি করছেন।
উল্লেখ্য, এক সময় রানীরবন্দর এলাকা জঙ্গল ও অনাবাদি ভূমি ছিল। তৎকালীন রংপুরের জমিদার তার তার নিজের কাজের জন্য তাঁতপল্লী গড়ে তোলেন। তখন থেকেই বংশগতভাবেই কাপড় বুনার কাজ এখানে গড়ে ওঠে। চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর, দক্ষিণ নশরতপুর, রানীপুর, আলোকডিহি, গছাহার, কিষ্টহরি, খামার সাতনালা, জোত সাতনালা, তেঁতুলিয়া, সাঁইতাড়ার খোচনা এবং খানসামা উপজেলার ভাবকি ইউনিয়নের কুমড়িয়া, গোয়ালডিহি, ছাতিয়ানগড় গ্রামের তাঁতশিল্প নিয়ে গড়ে ওঠে বৃহত্তর রানীরবন্দর তাঁত অঞ্চল। অত্রাঞ্চলের তাঁতশিল্প বিলুপ্তির পথে।
আগের মতো আর শোনা যায় না সেই সুপরিচিত রানীরবন্দরের তাঁতের খুটখাট শব্দ। নেই গ্রাহক আর পাইকারদের আনাগোনাও। বিলুপ্তির পথে রানীরবন্দরের তাঁতশিল্প। ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই তাঁতসমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার রানীরবন্দরের সুনাম ও পরিচিতি রয়েছে। এখানকার উৎপাদিত শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, তোয়ালে, চাদর ও মশারি জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো। ছোট-বড় মিলে অন্তত দুই শতাধিক তাঁতশিল্প কারখানা গড়ে উঠেছিল। এসব তাঁতশিল্প কারখানায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ সহস্রাধিক মানুষ জড়িত ছিলেন। এখন আর নেই সেই তাঁতশিল্পের জৌলুস। নেই তাঁতের খুটখাট শব্দ। এখনো কিছু তাঁত চালু রয়েছে। সেগুলোর অবস্থাও নাজুক। কোনরকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। অথচ এ অঞ্চলের তাঁতশিল্পের উজ্জ্বল সম্ভাবনা, সুদক্ষ তাঁতশিল্পী, সহজলভ্য শ্রমিক থাকা সত্ত্বেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, রপ্তানির বন্দোবস্ত ও সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব, সহজ শর্তে তাঁত ঋণ না পাওয়া এবং প্রয়োজনীয় কাঁচা উপকরণের (সুতা-রঙ) দিন দিন মূল্য বৃদ্ধির কারণে রানীরবন্দরের ঐতিহ্যবাহি তাঁতশিল্প বিলুপ্তির পথে। নানা প্রতিকুলতার পরেও কয়েকজন তাঁতী বাপ-দাদার রেখে যাওয়া পেশাকে ধরে রেখেছেন। এখনো এখানকার তাঁতশিল্প স্থানীয়ভাবে কাপড়ের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। আবার তাঁতশিল্প জেগে উঠলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখা ছাড়াও অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। 

তাঁতীরা জানান, কাপড় বুনতে তারা প্রথমত সূতার বান্ডিলগুলো ধুয়ে শুকাতে দেন। এরপর সাবু, বার্লি, ময়দা একসাথে পাক করে একপ্রকার মাড় তৈরি করে তা ঠান্ডা হওয়ার পর আবার সেই মাড় দিয়ে সাবানের মতো মাখিয়ে ধুয়ে শুকাতে দেয়া হয়। শুকানোর পর সূতাগুলো কাজের উপযোগী করে তুলতে হাল্কা পানি দিয়ে স্যাঁতসেঁতে করে নেসা (বড় সূতার টোটার মতো) তৈরি করে চড়কায় (বড় চাকতির মতো) ববিন (কাপড়ের লম্বার দিকের সূতা), নলি (কাপড়ের খাটোর দিকের সূতা), পেলে (পাইড়ের সূতা) কাটা করা হয়। এরপর তাঁত মেশিনে হাতে শুরু হয় কাপড় বুননের কাজ।
উপজেলার নশরতপুর গ্রামের বালাপাড়ায় দেড়শ' বছর ধরে চলে আসছে তাঁতের ব্যবসা। ওইপাড়ার আব্দুল মালেক জানান, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া এ পেশা ধরে রেখে তাঁতে গামছা তৈরি ও বিক্রি করে আসছি। আমার সাথে স্ত্রীসহ ছেলেও এ কাজে সাহায্য করেন। আমার তিনটি তাঁত থাকলেও এখন একটি চালু রয়েছে। প্রতিদিন এই তাঁতে ১২ পিছ গামছা তৈরি করা যায়। সূতা-রঙসহ খরচ হয় ৮০০ টাকা। এসব বিক্রি হয় ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা। তিনি জানান, ১০ বছর আগেও আমাদের দুই ভাইয়ের ৭০টি তাঁত ছিল। বর্তমানে চালু আছে মাত্র ১০টি। পুঁজি কম, বাজারজাতকরণে অসুবিধা এবং সূতা ক্রয় করতে সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনায় যেতে হয়। এলাকায় সূতার সহজলভ্যতা এবং উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণের জন্য সরকারের কোনো প্রজেক্ট নেয়া হলে অত্রাঞ্চলের তাঁতশিল্প পুনরায় জেগে উঠবে বলে তিনি জানান। তাঁরই ছোটভাই আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাবু তাঁতে ম্যাট তৈরি করে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন। 

বাবু জানান, তাঁতে বিভিন্ন কাপড় বাদ দিয়ে এখন ম্যাট উৎপাদন করছেন। অর্ডার অনুযায়ী ১৮ ইঞ্চি-১৪ ইঞ্চি, ৬০ ইঞ্চি-১৪ ইঞ্চি মাপের বিভিন্ন ডিজাইনের ম্যাট করছেন। এতে তার কারখানায় পাঁচজন নারী শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। সব খরচ বাদ দিয়ে ১০ হাজার টাকা আয় হয়। তিনি গত পাঁচ বছর ধরে এই ম্যাট তৈরি করছেন।
উল্লেখ্য, এক সময় রানীরবন্দর এলাকা জঙ্গল ও অনাবাদি ভূমি ছিল। তৎকালীন রংপুরের জমিদার তার তার নিজের কাজের জন্য তাঁতপল্লী গড়ে তোলেন। তখন থেকেই বংশগতভাবেই কাপড় বুনার কাজ এখানে গড়ে ওঠে। চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর, দক্ষিণ নশরতপুর, রানীপুর, আলোকডিহি, গছাহার, কিষ্টহরি, খামার সাতনালা, জোত সাতনালা, তেঁতুলিয়া, সাঁইতাড়ার খোচনা এবং খানসামা উপজেলার ভাবকি ইউনিয়নের কুমড়িয়া, গোয়ালডিহি, ছাতিয়ানগড় গ্রামের তাঁতশিল্প নিয়ে গড়ে ওঠে বৃহত্তর রানীরবন্দর তাঁত অঞ্চল। অত্রাঞ্চলের তাঁতশিল্প বিলুপ্তির পথে।