ঢাকা, শুক্রবার ১৫, নভেম্বর ২০২৪ ২২:২৫:৫১ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:০৬ পিএম, ১৫ জুন ২০২৩ বৃহস্পতিবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

আজ পয়লা আষাঢ়। রূপময় ঋতুর প্রথম দিন। বাংলা ক্যালেন্ডারে আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস নিয়ে বর্ষাকাল। ঋতুচক্রের পরিক্রমায় আবার ফিরে এসেছে বর্ষা। গ্রীষ্মের খরতাপের ধূসর নাগরিক জীবন আর প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন জাগায় বর্ষা। আজ থেকে শুরু হলো প্রকৃতির নবযৌবনের উচ্ছ্বাস। নবধারা জলে স্নান করে শীতল হওয়ার আহ্বান এখন প্রকৃতিতে।

আষাঢ়ের প্রথম দিন থেকে শুরু হয়ে এই ঋতু চলবে শ্রাবণের শেষ দিন পর্যন্ত। গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্ণতাকে ধুয়ে ফেলে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সাজে পূর্ণতায়। রিমঝিম বৃষ্টি, কখনো বা মুষলধারে ভারী বর্ষণও হবে। বর্ষা ঋতু তার বৈশিষ্ট্যের কারণে স্বতন্ত্র। বর্ষা ঋতু কাব্যময়, প্রেমময়।

তীব্র গরমে নগরবাসীর জীবনে আনন্দের বার্তা হয়ে এলো বর্ষা। তপ্ত ধরণীর বুকে বৃষ্টির পানি ঢেলে এই ঋতু প্রকৃতির রূপও বদলে দেয়। এই ঋতুতে নদ-নদীতে যেমন নতুন করে প্রাণ আসে, তেমনি গাছে ফোটে কদম, বকুল নানা রকমের ফুল। কদমকে তো আষাঢ়ের প্রতীকই ভাবা হয়।

বাঙালি সাহিত্যিকদের লেখায়ও বর্ষা যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। রবি ঠাকুরের ভাষায়- ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশও ছেয়ে... আসে বৃষ্টিরও সুবাসও বাতাসও বেয়ে...’।

বৃষ্টি মানেই রাশি রাশি সুখস্মৃতির খুলে যাওয়া জানালা। হঠাৎ বৃষ্টিতে বইখাতা প্লাস্টিকের ব্যাগে মুড়িয়ে, মানকচুর পাতায় মাথা ঢেকে কাদার সড়ক পেরিয়ে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরা, মফস্‌সলের শিশু-কিশোরদের জীবনে আজও আনন্দের উপলক্ষ। পার্থক্য একটাই- আজ ততটা ভেজা মাটির সড়ক দেখা যায় না। ভরা পুকুরের জলে ডুব দিয়ে বৃষ্টির গান, কিংবা টিনের ঘরে বসে বৃষ্টির একটানা খেয়াল-ঠুমরি শোনা, শেষ বিকেলে বৃষ্টিধোয়া আকাশে হংস-মিথুনের উড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা-এসব অনেকটাই হারিয়ে গেছে। তারপরও বর্ষা এমন সব আনন্দ-স্মৃতিরই এক সজল পাঠাগার।

শহরে বর্ষাকালের কদর অন্য রূপে। মায়েরা সন্তানদের বৃষ্টিতে ভিজতে দেন না একেবারেই, কারণ, সর্দি-জ্বর-ইনফ্লুয়েঞ্জার ভয়। এর মধ্যেই কোনো কিশোরী-তরুণীর দল খোলা হাওয়া গায়ে লাগিয়ে দ্বিচক্রযানে বৃষ্টি-ভ্রমণে বেরিয়ে পরেন।

বাঙালির রসনাতৃপ্তিতেও বৃষ্টি আছে, প্রবলভাবে। বৃষ্টি এলে কিংবা দিনটা যদি মেঘমেদুর হয়, অনেক ঘরেই ছড়িয়ে পড়ে খিচুড়ির ঘ্রাণ। ফেসবুকের ওয়ালজুড়ে সে ছবি। অন্য গৃহনিপুণারাও নড়েচড়ে বসেন। বসে থাকে না রেস্তোরাঁগুলোও। সেখানেও চলে ‘বৃষ্টিভোজে’র যত প্ররোচনা। যুগটা যখন ডিজিটাল, অ্যাপে ফরমাশ দিলেই একেবারে গরম-গরম খানাপিনা হাজির ঘরের দরজায়।

বর্ষার প্রবল বর্ষণে নির্জনে ভালোবাসার সাধ জাগে, চিত্তচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। শত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার ভিড়েও কোথায় যেন মেলে এক চিলতে বিশুদ্ধ সুখ। কদম ফুলের মতো তুলতুলে নরম, রঙিন স্বপ্ন দুই চোখের কোণে ভেসে ওঠে, ঠিক যেমন করে আকাশে সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায়। পুষ্প-বৃক্ষে, পত্র-পল্লবে, নতুন প্রাণের সঞ্চার করে, নতুন সুরের বার্তা নিয়ে সবুজের সমারোহ নিয়ে এসেছে বর্ষা। গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্নতাকে ধুয়ে ফেলে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সাজবে পূর্ণতায়।

আষাঢ়ের বৃষ্টিতে চারপাশের পরিবেশ রূপ নেয় চিরসবুজের আভরণে। কদম, বেলি, বকুল, জুঁই, দোলনচাঁপা, গন্ধরাজ, হাসনাহেনার ঘ্রাণে ভরে ওঠে চারপাশ। পেখম মেলে ময়ূর। বৃষ্টির পানি গায়ে নিয়ে আনন্দে নেচে ওঠে তারা। আষাঢ়ের প্রথমদিনে আজও রয়েছে আকাশেও মেঘের ঘনঘটা।