শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের মেয়েরা
অনলাইন ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০২:১৪ পিএম, ২৯ মে ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৮:৩৮ পিএম, ৩ জুন ২০১৮ রবিবার
আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। কেবল পুরুষরাই নয়, নারীরাও শান্তিররক্ষা মিশনে অবদান রেখে চলেছেন অরিবাম।
জাতিসংঘের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শান্তিরক্ষীর সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। আবার এ বছরই বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের ৩০ বছর পূর্তি হয়েছে।
গত মাসে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছিলেন, মানবাধিকার সুরক্ষার পাশাপাশি গোলযোগপূর্ণ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের ভূমিকা আমাকে মুগ্ধ করেছে। বাংলাদেশের নারী পুলিশের দল সোচ্চার রয়েছেন সামাজিক-সম্প্রীতি সুসংহত করতে। আমি সকলকে অভিবাদন জানাচ্ছি।
বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের মিডিয়া বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে ইরাকের দাঙ্গা মেটাতে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে সর্বপ্রথম অংশ নেন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা। সেই থেকে বিশ্বের ২৭টি মিশনের দায়িত্ব সম্পাদন করেছেন তারা। এখন তারা কাজ করছে ১১টি দেশে। বর্তমানে ৭ হাজার ৮০ জন রয়েছেন এসব মিশনে। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর সদস্য ৫ হাজার ৪৫৬, নৌবাহিনী ৩৪০, বিমান বাহিনী ৫০১ এবং পুলিশ বাহিনীর ৭৮৩ জন রয়েছেন।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় বৃহত্তম শান্তিরক্ষী সরবরাহকারী রাষ্ট্রের মর্যাদায় রয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে নারী সদস্যের সংখ্যা ১৫৭। বাংলাদেশি নারী শান্তিরক্ষীদের মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর ৫৭ জন ও পুলিশের ৭৭ জন সদস্য বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষায় কর্মরত আছেন। সশস্ত্র বাহিনীর ৫৭ জন নারী সদস্যের মধ্যে দুইজন নারী পাইলটও রয়েছেন।
সর্বশেষ নারীর এই অগ্রযাত্রায় শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দিয়েছেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তামান্না-ই-লুতফী ও সাহসী পাইলট নাইমা হক। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সর্ব প্রথম নারী কমব্যাট পাইলট তারা। দুইজনেরই শিক্ষাজীবন শেষ হয়েছে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনাল (বিইউপি) থেকে।
নাইমা হক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হিসেবে ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর কমিশন লাভ করেন। তিনি ক্যাডেট হিসেবে প্রশিক্ষণ শুরু করেন ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি। প্রথম কমব্যাট পাইলট হিসেবেই থেমে থাকেননি তারা। সিলেকশন শেষে উড্ডয়নের মনোনয়ন প্রাপ্ত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তামান্না-ই-লুতফী ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাইমা কঠোর পরিশ্রমের মধ্যদিয়ে প্রশিক্ষণ শেষ করেন।
কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় তাদের। এ বিষয়ে বাবা-মায়ের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছেন নাইমা। পাইলট হওয়ার অদম্য ইচ্ছে তাই সকল প্রতিকূলতা ভেঙে ফেলে। নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আজ বিশ্ব দরবারে শান্তি প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যোগ দিয়েছেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাইমা হক।
২০০০ সাল থেকে নারী কমব্যাট পাইলট নিয়োগ শুরু হলেও জাতিসংঘ মিশনে এই প্রথমবার বাংলাদেশ বিমান বাহিনী থেকে কোনো নারী পাইলট যোগদান করছে। যা বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তনে সাহায্য করবে। নারী ক্ষমতায়নের এক অপরূপ দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাইমা হক ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তামান্না-ই-লুতফী।
জানা যায়, ২০০০ সালে ৫ নারী পুলিশের একটি টিম প্রথমবারের মত শান্তিমিশনে পূর্ব তিমুরে অংশ নেয়। পরবর্তীতে নানা কারণে আর নারী পুলিশের কোন টিম মিশনে অংশ নেয়নি। এরপর অপেক্ষা করতে হয় আরো দশ বছর। সব বাধা অতিক্রম করে ২০১০ সালে বাংলাদেশ নারী পুলিশের প্রথম কনটিনজেন্ট পাঠানো হয় শান্তিরক্ষা হাইতি মিশনে। এ কনটিনজেন্টে ছিল নারী পুলিশের ১৬৮ সদস্য। আর এর মধ্য দিয়েই ব্যাপক আকারে শান্তি মিশনে বাংলাদেশ নারী পুলিশের যাত্রা শুরু। ইতিপূর্বে বাংলাদেশ পুলিশের পুরুষ সদস্যদের পাশাপাশি নারী সদস্যরাও কর্মদক্ষতার মধ্য দিয়ে শান্তি মিশনে কুড়িয়েছে প্রশংসা। সংখ্যার দিক দিয়ে পৌঁছে গেছে শীর্ষ অবস্থানে। ২০১৫ সালের ৯ এপ্রিল শান্তিরক্ষা কঙ্গো মিশনে যোগ দিতে ঢাকা ত্যাগ করেন বাংলাদেশ নারী পুলিশের দ্বিতীয় কনটিনজেন্টের ১২৫ সদস্য।
শান্তিরক্ষা মিশনের অংশগ্রহণকারী প্রথম পুলিশের নারী কর্মকর্তা ডিআইজি মিলি বিশ্বাস। মিলি বিশ্বাস শান্তিমিশনের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, নানা সমস্যা সংকুল পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে ১৪ নারীর অংশ গ্রহণ শুরু সেই সাড়ে তিন দশক আগে। এরপর ধাপে ধাপে পুলিশ বাহিনীতে বেড়েছে নারী সদস্য। এখন এ সংখ্যা প্রায় আট হাজারে পৌঁছেছে। আর শান্তিমিশনে নারী পুলিশের অংশগ্রহণ এবং শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছানোকে তিনি মাইলফলকই বলেন। এর ফলে পুলিশ বাহিনীতে অংশ গ্রহণে মেয়েদের উত্সাহ যোগাবে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নারী সদস্যদের অবদান প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ শাখার এআইজি সহেলী ফেরদৌস বলেন, ‘জাতিসংঘ মিশনে আমাদের মেয়েরা খুবই সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। স্থানীয় জনসাধারণ বিশেষ করে নির্যাতিত নারীদের ভরসার স্থল হিসেবে আস্থা অর্জন করেছেন তারা।
তিনি বলেন, ওই সব দেশে স্থানীয় নারীরা ওয়ার এবং ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার হন বেশি। এই ক্ষেত্রগুলোতে ভিক্টিমরা নারী পুলিশ সদস্যদের কাছে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। নারী পুলিশ সদস্যদের আপনজন হিসেবে মনে করেন তারা। এ ক্ষেত্রে আমাদের মেয়েরা বেশ সফল।’