বৃষ্টিতে ভিজে শোলাকিয়া ময়দানে ঈদের নামাজ আদায়
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১২:২৭ পিএম, ২৯ জুন ২০২৩ বৃহস্পতিবার
সংগৃহীত ছবি
বৃষ্টির মধ্যেই কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে বৃষ্টিতে ভিজেই মুসল্লিরা মাঠে নামাজের জন্য জমায়েত হন। সকাল ৯টায় শুরু হয় জামাত। এতে ইমামতি করার কথা ছিল বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা ফরীদ উদ্দিন মাসউদের। তিনি না যাওয়ায় শহরের মার্কাস মসজিদের ইমাম মাওলানা হিফজুর রহমান খান জামাতে ইমামতি করেন।
নামাজ শেষে মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। তবে বৃষ্টির কারণে এবার শোলাকিয়ায় মুসল্লিদের সমাগম কম হয়েছে। শরীরে বৃষ্টির পানি আর কাঁদা মেখেই নামাজ আদায় করতে হয়েছে অনেককে। ছাতা আর পলিথিন মাথায় দিয়ে মুসল্লিরা জামাতে অংশগ্রহণ করেন।
নিরাপত্তা ঝুঁকি না থাকলেও ২০১৬ সালে শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতের সময় জঙ্গি হামলার বিষয়টি মাথায় রেখে এবারও বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয় মাঠে। ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের কাছে পুলিশের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে পুলিশের দুই সদস্য, স্থানীয় এক নারী ও এক জঙ্গিসহ চারজন নিহত হন।
ঈদের জামাতকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিল শোলাকিয়া ও আশাপাশের এলাকা। তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হয়ে মুসল্লিদের ঢুকতে হয় ঈদগাহ মাঠে। প্রতিটি মুসল্লির দেহ তল্লাশি করেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়াও মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়। নামাজের আগে ভৈরব ও ময়মনসিংহ থেকে যায় এই দুটি ট্রেন। মাঠে তৎপর ছিল তিনটি মেডিকেল টিম।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ নিরাপত্তার বিষয়ে বলেন, জামাত নির্বিঘ্নে ও নিরাপদ রাখতে মাঠে দুই প্লাটুন বিজিবি, হাজারেরও বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিল। তাছাড়া এখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল র্যাব ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। সাদা পোশাকে নজরদারি করেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। পুরো মাঠ ও আশপাশের এলাকায় ছিল নিরাপত্তা চৌকি।
শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঈদের জামাত সফল করতে জেলা প্রশাসন পৌরসভার সহযোগিতায় সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছিল। বৃষ্টির কারণে বিঘ্ন ঘটলেও শেষ পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদের নামাজ সম্পন্ন হয়েছে।
১৮২৮ সালে ঈদের জামাতের মধ্য দিয়ে শোলাকিয়া ঈদগাহের গোড়াপত্তন হয়। জনশ্রুতি আছে, শাহ সুফি সৈয়দ আহমদের ইমামতিতে প্রথম ঈদের জামাতে ‘সোয়া লাখ’ মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। আবার কারও মতে, এ পরগণায় খাজনা আদায়ের পরিমাণ ছিল সোয়া লাখ টাকা। সে কারণে এর নামকরণ হয় শোয়ালাখিয়া থেকে শোলাকিয়া। ১৯৫০ সালে শহরের হয়বতনগরের দেওয়ান মান্নান দাদ খাঁ (মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর) ঈদগাহের জন্য ৪ দশমিক ৩৫ একর জমি শোলাকিয়া ঈদগাহে ওয়াকফ করেন। পরে আরও কিছু জমি এ ঈদগাহের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বর্তমানে প্রায় সাত একর জমির ওপর এ ঈদগাহের অবস্থান।