টিকিটের জন্যে নারীর যুদ্ধ
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০২:০২ পিএম, ৩ জুন ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ০২:৩৪ পিএম, ৮ জুন ২০১৮ শুক্রবার
ঈদে বাড়ি যাওয়ার আবেগ ছড়িয়ে পড়েছে এখন থেকেই। জীবনের প্রয়োজনে, সংসারের প্রয়োজনে বাড়ি থেকে অনেক নারী দূরে থাকেন। ঈদের ছুটিতে এবার তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে মিলিত হবার পালা। তাইতো রোদ-ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে টিকিটের জন্য ছুটছেন তারা। ঘন্টার পর ঘন্টা প্রত্যাশিত একটি টিকিটের জন্য লাইনে দাড়িয়ে থাকছেন। যেন কোনো ক্লান্তি নেই।
শুধুমাত্র ট্রেনের টিকিট কাটতে নারীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকলেও বাস ও লঞ্চের টিকিটের জন্য সেরকম বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেই। যার কারণে ঈদ যাত্রায় নারীকে অনেক ক্ষেত্রেই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এত বিড়ম্বনা পেরিয়েও নারী এগিয়ে যায় তার কাঙ্খিত গন্তব্যে।
ঈদ উপলক্ষে শুক্রবার সকাল আটটা থেকেই ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয় যা অব্যাহত থাকে আজও। বর্তমানে প্রতিদিন ২৩ হাজার ৫১৪টি করে টিকিট সরবরাহ করা হচ্ছে। ঈদে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি চলবে ৬ জুন পর্যন্ত। ফিরতি টিকিট ১০ জুন থেকে ছাড়া হবে। ঈদের আগের তিন দিনের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৬০ হাজার করে অগ্রিম টিকিট দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ।
টিকিট কিনতে কমলাপুর রেলস্টেশনে প্রচুর মানুষ এসেছেন। সেখানে আজও প্রচন্ড ভিড় লক্ষ করা গেছে। ভোররাত থেকে টিকিট কাউন্টারগুলোর সামনে আজও লাইনে দাঁড়ান টিকিট প্রত্যাশীরা।
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে ২৬টি কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি চলছে। এর মধ্যে দুটি কাউন্টার নারীদের জন্য সংরক্ষিত। এ দুই নারী লাইনেও উপচেপড়া ভিড়। নারী কাউন্টারের সামনে কথা হয় হেমা অথৈর সঙ্গে। বললেন, শেষ পর্যন্ত ট্রেনের টিকিট পেলাম, মনে হয় বিশ্ব জয় করলাম। সকাল ৯ টায় এসেছি। পেলাম বিকেল ৪ টায়। তাও মনে কষ্ট নেই। আরেক যাত্রী রোখসানা আনোয়ার বলেন, ঈদের আগে টিকিট পাওয়া বিশাল ব্যাপার। আমি পেয়েছি বলে খুশি।
ঢাকায় ঈদ উপলক্ষে বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে গত বুধবার। আজও বিভিন্ন কোম্পানির বাস কাউন্টারের সামনে অগ্রিম টিকিট কিনতে আগ্রহী নারী-পুরুষের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। বাস কাউন্টারগুলো থেকে বলা হচ্ছে, ১৭ জুন সম্ভাব্য ঈদুল ফিতরের দিন ধরে ৭ থেকে ১৫ জুনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর গাবতলী হানিফ পরিবহনের বাসের কাউন্টারে টিকিট কিনতে এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোছা: রোকেয়া। তিনি জয়পুরহাটের টিকিট কিনতে সকাল ৭ টার দিকে কাউন্টারে আসেন। চাহিদা অনুযায়ী, টিকিট হাতে পেয়ে দারুণ খুশি রোকেয়া। বলেন, ১৫ জুনের টিকিটের চাহিদা বেশি থাকায় ভয়ে ছিলাম। সময় লাগলেও টিকিট পেয়েছি। বেশ ভালো লাগছে। তবে ভাড়া বেশি।
নবীনগর গোল্ডেন লাইন কাউন্টারে এসেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওগ্রাফী বিভাগের ছাত্রী ইফতি। বলেন, আমি এসেছিলাম গোপালগঞ্জের টিকিট কিনতে। কিন্তু এখান থেকে বলছে গাবতলী কাউন্টার থেকে টিকিট বুকিং দিতে হবে। কি আর করা আবার গাবতলী যেতে হবে।
ঈদে ঘরমুখো নৌযাত্রীদের কথা মাথায় রেখে লঞ্চের কেবিনের অগ্রিম টিকিট বুকিং শুরু হয়েছে ১৫ রোজা বা ১ জুন থেকে। আর টিকিট পাওয়া যাবে ৫ জুন থেকে ১০ জুন পর্যন্ত। ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্যই অগ্রিম টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান ঢাকা নদীবন্দরের (নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের) যুগ্ম পরিচালক আলমগীর হোসেন।
এদিকে টিকিটের দাম কিছুটা বাড়তি নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা। তবে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ বলছে ঈদ উপলক্ষে যে মূল্য নেয়া হচ্ছে তা সরকার নির্ধারিত মূল্যের মধ্যেই রয়েছে। অন্য সময় প্রতিযোগীতার কারণে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কিছুটা কম নেয়া হয়।
লঞ্চে ভাড়ার বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা যায়, আসন ব্যবস্থাপনা অনুসারে ছোট-বড় লঞ্চসমূহে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। বড় আকারের লঞ্চগুলোতে ডুপ্লেক্স ও ভিআইপি কেবিনের ভাড়া ৩০০০ টাকা থেকে ৬০০০ টাকা হয়ে থাকে। যেখানে দুটো বেড, এসি, রেফ্রিজারেটর, টিভি, ডাইনিং সুবিধা রয়েছে। দুই বেড সুবিধায় ডাবল কেবিনের ভাড়া ১৮০০ থেকে ২৫০০ টাকা, এক বেডের সুবিধায় সিঙ্গেল কেবিন ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, সোফা-কাম-বেডের ক্ষেত্রে ৫০০ থেকে থেকে ৭০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়ে থাকে। এখানেও এসি কিংবা ফ্যান ও টিভির সুবিধা রয়েছে। এছাড়া লঞ্চের ডেকেও (লঞ্চের খোলা স্থান) যাত্রা করা যায়।
অনেক বড় লঞ্চে কার্পেট দেওয়া রয়েছে। তবে চাদর বালিশ যাত্রীকে সঙ্গে বহন করতে হয়। এখানে ভাড়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। বরাবরের মত আজকেও ভিড় লক্ষ্য করা গেল। এখানে কথা হল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগের ছাত্রী মাসুমার সাথে। মাসুমা বলেন, এবার ঈদ করবো দাদুর বাড়ি বরিশালে। তাই মাকে নিয়ে এসে কেবিন বুক করলাম। ভাড়া তো বেশি। কি আর করা। যেতে তো হবেই।