রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় বুলবুল মহলানবীশকে বিদায়
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৭:৪৫ পিএম, ১৭ জুলাই ২০২৩ সোমবার
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় বুলবুল মহলানবীশকে বিদায় জানানো হয়। ছবি: উইমেননিউজ২৪.কম।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক ও প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী বুলবুল মহলানবীশ গত শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজ বুধবার রাষ্ট্রীয় সম্মান ও ফুলেল শ্রদ্ধায় শেষ বিদায় জানানো হয় তাকে।
বুলবুল মহলানবীশের ছেলে ও মেয়ে বিদেশে থাকায় মরদেহ হিমঘরে রাখা হয়। সেখান থেকে আজ সকালে বুলবুল মহলানবীশের মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয়। পরে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সেখানে রাখা হয়। এ সময় তাকে স্মরণ করে স্মৃতিচারণ করেন সংস্কৃতি অঙ্গনের অগ্রজ এবং তার সহযোদ্ধারা।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বীর মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল মহলানবীশের মরদেহে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন (গাড অব অনার) করে ঢাকা জেলা প্রশাসন। পরে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শুরু হয়। এ সময় এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয় এবং শোক বইয়ে সাক্ষর করেন উপস্থিত অনেকে। সবশেষে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষ হয়।
এ সময় বুলবুল মহলানবীশের স্বামী সরিত কুমার লালা বলেন, ‘আপনাদের ভালোবাসা বুলবুল চেয়েছিল। একটা কথা আমার মনে হয়, বুলবুল প্রচণ্ড জীবনমুখি ছিল। একটা পূর্ণজীবন সে যাপন করতে চেয়েছিল। কোনোরকমে বেঁচে থাকা, এটা তার ধাঁচে ছিল না। গত দু’বছর কিন্তু সেই জীবন সে যাপন করতে পারেনি। সে বেঁচে ছিল, কিন্তু মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। বুঝতে দিত না, কিন্তু আমি বুঝতে পারতাম।’
সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, ‘বুলবুলকে চিনি সেই ছোটবেলা থেকে। সে মনেপ্রাণে ভালোবাসত বাংলাদেশকে, মনেপ্রাণে ভালোবাসত মুক্তিযুদ্ধকে। এত পারিবারিক একটা মানুষ, এত সামাজিক একটা মানুষ। কারো বিপদে-আপদে বুলবুল অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যতদিন থাকবে, ততদিন সে থাকবে আমাদের মাঝে।’
স্মৃতিচারণ করে বিশিষ্ট নজরুল সংগীত শিল্পী শাহিন সামাদ বলেন, ‘আমাদের দুজনের পথচলা অনেক দিনের। ৫০ বছরের বেশি। আমরা একই স্কুলে পড়াশোনা করেছি। বুলবুল ছিলো নানা প্রতিভার অধিকারী এক সরলপ্রাণ মানুষ। যে চেতনা নিয়ে বুলবুল মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল, সেই চেতনা কিন্তু সারাজীবন বহন করেছে। স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের গান গেয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে। বুলবুলের যে আদর্শ তা আমরা যেন সমুন্নত রাখতে পারি। বুলবুলের জন্য গভীর শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক সংগঠক নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘যে কজন মানুষ আমৃত্যু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জীবনযাপন করেছেন, বুলবুল তাদের একজন। অনেকের জন্য ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যুদ্ধটা শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু বুলবুলের জন্য ১৬ ডিসেম্বর যুদ্ধটা শেষ হয়নি। আর শেষ হয়নি বলেই আমাদের সকল আন্দোলনে, সকল সংগ্রামে সে সামনে থেকেছে। রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য যে উপাদানগুলি অনুপস্থিত বা খামতি ছিল, সেগুলোকে যেন বিকশিত হয়, সে লক্ষ্যে বুলবুল সংগ্রাম করে গেছে। আমৃত্যু লড়াকু শিল্পী বুলবুল মহলানবীশ।’
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘বুলবুল সেই অল্পবয়সে নববধূর সাজে যখন সজ্জিত ছিল, তখন সেই নববধূর সাজ গুটিয়ে রেখে অল্পবয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। দেশ স্বাধীনের মুহূর্তে সেই কালজয়ী গান ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ’ কণ্ঠে তুলে নিয়েছিলেন যে কজন শিল্পী তাদের অন্যতম বুলবুল মহলানবীশ।’
এই শিল্পীর মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে–ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী, সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী, কচি-কাঁচার মেলা, সেক্টরস কমান্ডার ফোরামের কেন্দ্রীয় নারী কমিটি, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, থিয়েটার ৫২, মহিলা পরিষদ, ছায়ানট, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগ, স্বনন, বাংলা একাডেমি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, নবান্ন উদযাপন পর্ষদ, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও ছাত্র ইউনিয়ন।
এ ছাড়া আবুল বারক আলভী, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, রামেন্দু মজুমদার, আশরাফুল আলম, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, শাহীন সামাদ, সাংবাদিক আবেদ খানসহ অনেকে গুণী এই শিল্পীকে ব্যক্তিগতভাবেও শ্রদ্ধা জানান।
বুলবুল মহলানবীশের পরিবার থেকে জানানো হয়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সবুজবাগের বরদেশ্বরী কালী মন্দিরে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।