ঢাকা, শনিবার ২৩, নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৭:১১ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

কুড়িগ্রামের স্কুলে যাওয়ার প্রধান ভরসা নৌকা-ভেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৪৫ পিএম, ২০ জুলাই ২০২৩ বৃহস্পতিবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

কুড়িগ্রামের একটি সরকা‌রি প্রাথ‌মিক বিদ‌্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাওয়া-আসার প্রধান ভরসা নৌকা-ভেলা। দুই তলা চাক‌চিক‌্য স্কু‌ল ভবনটি ম‌নোরম প‌রি‌বে‌শে হ‌লেও কোন যাতায়া‌তের রাস্তা নেই। শুষ্ক মওসু‌মে অন্যের জ‌মির আইল কিংবা ঝোপঝাড় দি‌য়ে চলাচল করা গেলেও ভোগান্তি বাড়ে বর্ষা মওসুমে। 

স্কুলের সাম‌নের ছোট নদীর মতো নালা পা‌রি দি‌য়ে পৌঁছাতে হয়। তখন চলাচ‌লের একমাত্র ভরসা হয় কলাগা‌ছের ভেলা কিংবা ছোট ডি‌ঙ্গি নৌকা। কখনও কখনও ভি‌জে যায় পর‌নের কাপড়সহ শিক্ষার্থী‌দের বই খাতা। অনেকে জীব‌নের ঝুঁকি নি‌য়ে স্কু‌লে আস‌লেও বে‌শিরভাগ শিক্ষার্থীই থা‌কেন অনুপ‌স্থিত। ফ‌লে পু‌রো বর্ষা মৌসু‌মে কমে গেছে বিদ‌্যাল‌য়ের শিক্ষার্থ‌ীর সংখ‌্যা।

জানা যায়, ১৯৮৮ সা‌লে ৩৫ শতক জ‌মির ওপর ব্রহ্মপুত্র-‌তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্টিত জেলার চিলমারী উপজেলার পূর্ব চর পাত্রখাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। এরপর ২০১৩ সালে বিদ‌্যালয়‌টি জাতীয়করণ করা হয়। প্রায় ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে নির্মিত হয় দুই তলা বিশিষ্ট এক‌টি ভবন। 

ওই বিদ্যালয়ে ছয় জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী‌দের সংখ‌্যা ১২৪ জন। 

পূর্ব চর পাত্রখাতা গ্রামটিতে প্রবেশের জন্য সেতু ও পাকা সড়ক থাকলেও ওই বিদ্যালয়ে যাওয়ার কোন পথ নেই। বিদ‌্যাল‌য় সংলগ্ন নালাটি শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে গেলে তা দিয়ে হেঁটে চলাচল করতে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। ত‌বে বর্ষা মৌসু‌মে বে‌ড়ে যায় ভোগা‌ন্তি। ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল হওয়ায় অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানকে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ ক‌রে‌ দিয়ে‌ছেন। ফ‌লে এসব শিক্ষার্থীর লেখাপড়া ব‌্যাহত হ‌বার পাশাপাশি ঝরে পরছে শিক্ষার্থী।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার খামখেয়ালিপনা ও সঠিক তদারকি না থাকায় দীর্ঘদিনেও স্কুলটিতে যাতায়াতের রাস্তা নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভরসা পান না অভিভাবকরা। স্কুল আসার জন্য একটি রাস্তা ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে করোনার সময় স্কুল বন্ধ থাকার সুযোগে এলাকার এক প্রভাবশালী তার বাড়ির সীমানা প্রাচীর দিয়েছেন। এতে করে স্কুল যাওয়ার পথটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন অবগত থাকলেও কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না।

কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, বন্যার সময় স্কুলে আসতে খুবই কষ্ট হয়। নৌকা বা ভেলায় চরে স্কুলে আসি। কখনও কখনও বইখাতা ভিজে যায়। তাছাড়া নদীতে পড়ে যাওয়ার ভয়ও থাকে। মানুষের বাড়ির ভেতর দিয়ে আসলে গালাগালি করে, আসতে দেয় না।

বিদ‌্যাল‌য়ের প্রধান শিক্ষক রিয়াজ বিন রানু বলেন, শুষ্ক মৌসুমে বিভিন্নভাবে স্কুলে আসা যায়। কিন্তু ভোগান্তি বাড়ে বর্ষা মৌসুমে। স্কুলের চারপাশে তখন পানি জমে থাকে। ফলে স্কুলের সামনে নালাটি পার হয়ে আসতে হয়। বিষয়‌টি সং‌শ্লিষ্ট বি‌ভিন্ন দপ্ত‌রে অবগত করা হ‌লেও কোন প্রতিকার পাইনি। দীর্ঘ‌দিন ধ‌রে স্কু‌লে যাতায়া‌তের রাস্তা না থাকায় শিক্ষার্থীসহ আমা‌দের শিক্ষক‌রা বিপা‌কে প‌ড়ে‌ছেন। এ অবস্থায় ছাত্র-ছাত্রীর সংখ‌্যাও দিন দিন ক‌মে যা‌চ্ছে।

বিদ্যালয়ের সভাপতি মর্জিনা বেগম ব‌লেন, স্কু‌লে যাতায়াতের রাস্তা না থাক‌ায় শিক্ষার্থীরা অন্য স্কু‌লে চ‌লে যা‌চ্ছে। দ্রুত রাস্তা নির্মাণ করা না হলে বাকি শিক্ষার্থীদের ধরে রাখা সম্ভব হবে না। কারণ ঝুঁকি নিয়ে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে চায় না।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু ছালেহ্ সরকার বলেন, শুষ্ক মৌসুমে রমনা মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাস্তাটি তৈরি করে দেবার আশ্বাস দিয়েছেন।