ঢাকার নিচু এলাকায় ভয়াবহ রূপে ডেঙ্গু
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১১:৪৩ এএম, ২৩ জুলাই ২০২৩ রবিবার
সংগৃহীত ছবি
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে রাজধানীর নিচু এলাকায় ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী আক্রান্ত হচ্ছে।
বিশেষ করে মুগদা, মান্ডা, যাত্রাবাড়ি, কাজলা, জুরাইন, কদমতলী, মানিকনগর এবং সবুজবাগ এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশী। এসব এলাকা তুলনামুলক নিচু ও অপরিচ্ছন্ন হওয়ায় এডিস মসা দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করতে পারছে।
এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এলাকা উত্তরা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, তেজগাঁও এবং বাড্ডা। তাছাড়া ঘনবসতি হওয়ায় কেউ আক্রান্ত হলেই অন্যরাও আক্রান্ত হচ্ছে সহজেই।
সারাদেশে ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতি। রাজধানী ঢাকায় তা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ।
ঢাকার বস্তি ও নিম্ন এলাকায় প্রায় প্রতি ঘরেই রয়েছে ডেঙ্গুরোগী। বিশেষ করে জুরাইন, যাত্রাবাড়ী ও মুগদা থানা এলাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ বলে জানিয়েছে ডিএসসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ।
ডিএসসিসি সংশ্লিষ্টদের দাবি, যাত্রাবাড়ী ও মুগদায় ডেঙ্গুর পরিস্থিতি খুব খারাপ। সে অনুযায়ী এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে কাজ করছেন তারা।
তবে, স্থানীয়রা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশন মশা নিধনে যা করছে তা কোনো কাজে আসছে না। তাদের উদ্যোগ লোক দেখানো। এলাকায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী।
স্থানীয়রা আরও বলছেন, অনেকে বাসায় চুপচাপ চিকিৎসা নিচ্ছেন।আবার কেউ কেউ বাধ্য হয়েই যাচ্ছেন হাসপাতালে। যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন তাদের অভিযোগ, হাসপাতালে তারা সঠিক সেবা পাচ্ছেন না। তারপরও প্রতিদিনই নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
তবে, মশকনিধন কার্যক্রমে ডিএসসিসির কোনো ঘাটতি নেই বলে গণমাদ্যমকে জানিয়েছেন দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফজলে শামসুল কবির।
তিনি বলেন, আগে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটতো। কিন্তু এখন সারা বছরই এডিস মশা বংশ বিস্তার করছে। সারা বছরই কেউ না কেউ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন।
তাই, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে এডিস মশার লার্ভা নিধনে কার্যক্রম শুরু করেছে ডিএসসিসি। এরই মধ্যে এপ্রিলে যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় ডেঙ্গুর উপদ্রব শুরু হয়। তারপরই তা তীব্র আকার ধারণ করে জুরাইন ও মুগদায়।
ডিএসসিসি কর্মকর্তা বলেন, জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে এ তিন এলাকায় ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নেয়। তখন থেকে মশার লার্ভা নিধনে টানা অভিযান শুরু করে ডিএসসিসি।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে দুই হাজার ২৪২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
শনিবার (২২ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গু বিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে দুই হাজার ২৪২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে এক হাজার ২৩৯ জন এবং সারাদেশে (ঢাকা সিটি ব্যতীত) এক হাজার তিনজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এই সময়ে সারাদেশে মোট এক হাজার ৬৫১ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা সিটির বিভিন্ন হাসপাতালের ৯৫১ জন। আর সারা দেশের (ঢাকা সিটি ব্যতীত) বিভিন্ন হাসপাতালে থেকে ৭০০ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১১ জনের জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে ৯ জন এবং ঢাকার বাইরে ২ জন মারা যান।
এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ১৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা সিটির ১৩১ জন এবং সারাদেশে (ঢাকা সিটি ব্যতীত) ৩৬ জন মারা যান।
চলতি বছর ২১ জুলাই পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ হাজার ৬৮৫ জন। ঢাকা সিটিতে ১৮ হাজার ৮৮৫ জন ও ঢাকার বাইরে ১১ হাজার ৮০০ জন।
চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ২৩ হাজার ৮৬২ জন হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ১৪ হাজার ৯১৫ জন এবং ঢাকার বাইরে ৮ হাজার ৯৪৭ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন।
বর্তমানে দেশে মোট ৬ হাজার ৬৫৬ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে রয়েছেন ৩ হাজার ৮৩৯ জন এবং ঢাকার বাইরে ২ হাজার ৮১৭ জন।