মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞার সুফল পাচ্ছে বরগুনার জেলেরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৪:০৩ পিএম, ৬ আগস্ট ২০২৩ রবিবার
মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞার সুফল পাচ্ছে বরগুনার জেলেরা
মৎস্য সম্পদ রক্ষায় ও পরিমান বাড়াতে সরকারের দেয়া নিষেধাজ্ঞার সুফল পাচ্ছেন জেলে, মৎস্যজীবী, ব্যবসায়ীসহ সকলে। গত জুলাই মাসে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে জেলেরা সাগরে মাছ শিকারে যাচ্ছেন।
জেলেদের জালে অন্যান্য মাছসহ ঝাঁকেঝাঁকে রূপালী ইলিশ ধরা পড়ছে। সাগর থেকে ট্রলার ভর্তি করে ইলিশ নিয়ে ফিরছেন জেলেরা। মাছ বিক্রির হাঁকডাকে আবারও সরগরম হয়ে উঠছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বরগুনার পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে। দিনে কোটি টাকার বেশি মাছ বিক্রি হচ্ছে এ অবতরণকেন্দ্রে।
জেলেরা জানান, নিষেধাজ্ঞার পরপরই সাগরে ইলিশ ধরা পড়ায় দারুণ খুশি তারা। একের পর এক ট্রলার ভিড়ছে ঘাটে। এফবি বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি আ. রহমান জানান, সাগর থেকে এসেছি ট্রলার বোঝাই ইলিশ নিয়ে। সরকারের বিভিন্ন সময়ের নিষেধাজ্ঞা মানার কারণে এত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। ইলিশের সাইজও তুলনামূলক ভালো। বড় আকৃতির ইলিশ ধরা পড়ায় ভালো দাম পাচ্ছি।
গত বছরের তুলনায় এ বছর এ অবতরণকেন্দ্রে বেড়েছে ইলিশের সরবরাহ। ট্রলার থেকে ঝাঁপি বোঝাই করে ইলিশ অবতরণ কেন্দ্রে নামছে দেখে স্বস্তি ফিরেছে মৎস্য ব্যবসায়ীদের।
মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর জোমাদ্দার জানান, এ বছরের ২৪ জুলাইয়ের পর এ অবতরণকেন্দ্র থেকে প্রায় ২শ ৫০ মেট্রিক টন সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হয়েছে। যার মধ্যে ১শ ৭০ মেট্রিক টনই ইলিশ।
তিনি আরও জানান, ভালো মাছের সরবরাহের পাশাপাশি চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। সরাসরি ঘাট থেকে পদ্মা সেতু হয়ে বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে মাছ।
মাছ ব্যবসায়ী রফিক হোসেন ও শুক্কুর মিয়া জানান, ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় ইলিশের চাহিদা রয়েছে। পাইকারি দরে এক কেজির বেশি ওজনের ১০০ ইলিশ ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায়, মাঝারি আকারের ইলিশ ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালী ইলিশ মিললেও স্থানীয় বাজারে দাম অবিশ্বাস্য রকমের চড়া। আড়ৎ থেকে খুচরা বাজার কিংবা টুকরিতে করে পাড়া-মহল্লায় যে মাছ বিক্রি হচ্ছে তাতে দামের পার্থক্য গড়পরতায় কেজি প্রতি ৩ শ টাকা বা তারও বেশি।
বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, প্রচুর ইলিশের সরবরাহ থাকলে বিক্রেরা এক কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশের দাম চায় ১ হাজার ৫শ থেকে ১ হাজার ৮শ টাকা। ৮শ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম নিচ্ছে ৯শ থেকে ১ হাজার টাকা, একটু ছোট ইলিশের দাম চায় কেজিপ্রতি ৭শ ৫০ থেকে ৮শ ৫০ টাকা। ২শ’ গ্রাম ও তার নিচের মাছ বিক্রি হচ্ছে কমপক্ষে সাড়ে ৫শ’ টাকা কেজিতে। যা অন্যান্য সময় বিক্রি হতো ২শ’ থেকে ৩শ টাকা কেজি। তাই এখন পর্যন্ত ইলিশের স্বাদ গ্রহণ করা সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে রয়েছে।
বরগুনা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘আমরা কষ্ট করে নিষেধাজ্ঞা পালন করে এখন সুফল ভোগ করছি সবাই মিলে। গত সপ্তাহে সমুদ্র থেকে আসা ট্রলারে প্রচুর ইলিশ ছিল। সমুদ্রে এরকম ইলিশসহ অন্যান্য মাছ পেলে বিগত দিনের সব ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে আমি মনে করি।
বরগুনা পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য অবতরণকেন্দ্রের সহকারী বিপণন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রিপন হোসেন জানান, সমুদ্রের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়াতে বেডেছে রাজস্ব আদায়। এ অবতরণকেন্দ্রে বিক্রিত মাছের দামের শতকরা ১.২৫ শতাংশ রাজস্ব পায় সরকার।
বরগুনা জেলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, ভরা মৌসুমে আরও বেশি পরিমান ইলিশ মাছ পাওয়া যাবে। তবে স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম এতো বেশি কেন! -এর রহস্য খুঁজে পাচ্ছি না। জেলে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে এর সমাধান খুঁজছি আমরা।