ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরাসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৭:০৬ পিএম, ২১ আগস্ট ২০২৩ সোমবার
ছবি : সংগৃহীত
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের দায়ে ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সোমবার (২১ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬০তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের নির্দেশনা মোতাবেক তাদেরকে আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বহিষ্কৃতরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেত্রী ও পরিসংখ্যান বিভাগের সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম ও চারুকলা বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মী।
চলতি বছরের ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে রাতভর নির্যাতন ও ভিডিও ধারণের অভিযোগ উঠে স্থায়ী বহিষ্কৃত পাঁচ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে সানজিদা চৌধুরী অন্তরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও অন্যরা সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত। এ ঘটনার সংবাদ প্রকাশ হলে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। সেসময় ফুলপরী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হলের প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।
এ ছাড়া ঘটনা তুলে ধরে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী গাজী মো. মহসিন। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট গ্রহণ করে এ বিষয়ে ওই আইনজীবীর কাছে লিখিত ব্যাখ্যা চান। এ ঘটনায় রিট হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের পাশাপাশি কিছু নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। মোট তিনটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। যার দুটি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও একটি কমিটি গঠিত হয় হাইকোর্টের নিদের্শনা অনুযায়ী।
তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য হাইকোর্ট ১ মার্চ নির্দেশনা দেন। সেই নির্দেশনা মেনে পাঁচ শিক্ষার্থীকে ১৫ জুলাই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি ও হাইকোর্টের গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস কোড অব কন্ডাক্ট-১৯৮৭ এর পার্ট-২ ধারা-৮ মোতাবেক ১২ মাসের জন্য তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করে, যা বিশ্ববিদ্যালয় আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি। এ শাস্তি চলাকালীন তারা ক্লাস-পরীক্ষাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
বিষয়টি পুনরায় আদালতের দৃষ্টিতে আনেন রিটকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসিন। তিনি আদালতকে জানান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি প্রাসঙ্গিক পদ্ধতি লঙ্ঘন করে পাঁচ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে।
আদালতকে আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি নয়, বরং কোনো অপরাধের জন্য শিক্ষার্থীকে শাস্তি দিতে পারেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ফলে এই শাস্তির বৈধতা যদি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয় তবে তা বাতিল হয়ে যাবে। এরপর হাইকোর্ট নির্যাতনের দায়ে পাঁচ শিক্ষার্থীকে কোন পদ্ধতিতে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে তা জানতে চান।
পরে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬০তম সিন্ডিকেট সভায় ছাত্রী নির্যাতনের দায়ে পাঁচজনকে আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।