প্রকাশ্যে কাঁদা যাবে না, প্রতিমন্ত্রী বলে কথা : তারানা হালিম
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ১১:৪১ পিএম, ১৩ জুন ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ১০:৫৩ এএম, ১৬ জুন ২০১৮ শনিবার
তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম আজ তার ফেসবুক পেজে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত নিজের ভাগ্নেকে স্মরণ করে এক মর্মস্পর্শী লেখা পোস্ট করেছেন।
রাস্তাঘাটে সাধারণ মানুষ ঘাতক চালকদের সামনে কতটা অসহায় তাই প্রকাশ করা হয়েছে এতে। ঈদ আসছে কিন্তু তারানা হালিমের পরিবারে ঈদের আনন্দের বদলে পরিবারের সকল সদস্যের বুকে হাহকার আর কষ্ট।
তারানা হালিম তার পেজে লিখেছেন : লিখলাম এই জন্য যে আমার আজকের এই পোস্টটিতে মানবতাকে, মানুষকে, আবেগকে শ্রদ্ধা জানিয়ে রাজনৈতিক ভিন্ন মতাদর্শের হলেও কোন নেতিবাচক মন্তব্য করবেন না। রাজনৈতিক সে যে কোন পরিচয়, সে যে কোন পদ-পদবীর আগে আমরা মানুষ। আমাদের কষ্ট আছে, আবেগ আছে, ক্ষোভ আছে, দু:খ আছে; আর সব মানুষের মতই। আজ ভোর থেকেই একটা চিনচিনে কষ্ট, অস্বস্তি! আমি জানি কেন, আমার ছেলেরা জানে কেন, আমার বোন জানে কেন, আমার আল্লাহ জানে কেন!
`ঈদ শব্দটি আমাদের পরিবারের জন্য কষ্টের, বেদনার! যে কোন ঈদই! আমার বোনের ছেলেটা মোনাশ ইউনিভার্সিটি পড়তে যাবে কত আনন্দ। ঈদের পরেই সে যাবে মালয়েশিয়া। ঈদের আনন্দে মেতে উঠবো সবাই। কিন্তু কোথায় গেল ঈদ! শুধু চালকের অসর্তকতায় প্রাণ চলে গেল আমার বোনের ছেলে সাইফ আহম্মেদ (অর্ণব) এর! তিনবার হাত উঁঠিয়ে ও চালককে থামতে বলেছিল। চালক তার জবানবন্দীতে বলেছে, অর্নব তিনবার হাত উঠিয়ে কার্ভাড ভ্যানটি থামানোর ইশারা করতেছে, তবে চালক থামালো না কেন ? সে এই জীবনটিকে মূল্য দিবে না? এই একটি জীবন আমাদের জীবনের সব আনন্দ, হাসি, ঈদের আনন্দ সাথে নিয়ে চলে গেল! আমরা ঈদ ভয় পাই, ঈদ আমাদের কষ্টগুলো তাজা করে দেয়! আমার বাসায় সেমাই রান্না হয়না! আমি, আমার বোন, আমার ছেলেরা, আমার বোনের ছেলেরা ঈদে নতুন জামা-কাপড় পরি না! আমাকে অর্ণব ডাকতো ছোট মা বলে, (খালাতো মা-ই তাই মা)। কত বিতর্ক চালককে ঘাতক বলা যাবে কি যাবেনা! এই বিতর্ক কেন? সব চালক কোনদিনই ঘাতক নন। কিন্তু যারা একটু সচেতন হলে একটি জীবন বেঁচে যাবে জেনেও তা করেন না-তাদের কি সেবক চালক বলবো? দু:খিত বলতে পারলাম না। যেমন ঘুষ খেতে পারবো না, সন্ত্রাস করতে পারবো না। আমার রক্তে এসব নেই। যেমন সব চালককে ঘাতক বলতে পারবো না। তেমনি সব চালককে নিরাপরাধ ও বলতে পারবো না।
জামিনে মুক্ত সেই চালক আজ পরিবার নিয়ে ঈদ করে! আমার বোনের অর্ণব কোথায়? জামিনে মুক্ত সেই চালকের সন্তান নতুন জামা পরে! আমার বোনের অর্ণবের জন্য জামা কিনতে চাই। কোথায় দিলে ও পরবে?
আজ এলাকায় ঈদের শাড়ি বিতরণ করবো, হাসিমুখো জনপ্রতিনিধি, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীরা সবসময় হাসতে হয়। দু-চারটা কাপড় কম পড়লেও মানুষ অসন্তুষ্টও হবে। ওরা কি কখনও জানবে আজ যে মানুষটি হাসিমুখে রোদে পুড়ে কাপড় দিচ্ছে ঈদের জন্য, সেই মানুষটির বড় বোন আজ কাঁদছে! সেই মানুষটির নিজেরও বুকের ভেতরটা কেবলই হু হু করছে! কাঁদা যাবেনা প্রকাশ্যে প্রতিমন্ত্রী বলে কথা! ওদের যে আবেগ থাকতে মানা!