বঙ্গমাতা সেতু বদলে দিয়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৮:২১ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ শুক্রবার
‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সেতু’
পিরোজপুরের বেকুটিয়ায় ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সেতু’ নির্মিত হওয়ায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোটি-কোটি মানুষের বহুদিনের একটি স্বপ্ন পুরণ হয়েছে।
মাত্র এক বছরে বদলে গেছে এই অঞ্চলের যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক চিত্র। বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের বেকুটিয়ায় কঁচা নদীর উপর নির্মিত এই স্বপ্নের সেতুটি গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০১৩ সালের ১৯ মার্চ পিরোজপুরের এক জনসভায় কঁচা নদীর উপর সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতু নির্মাণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর এই সেতু নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ৮৯৪ দশমিক ০৮ কোটি টাকা ব্যায় করে ১ হাজার ৪৯৩ মিটার দৈর্ঘ্যরে এবং ১৩ দশমিক ৪০ মিটার প্রস্থের এই পিসি বক্স গার্ডার সেতুটির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেছে। চীন সরকার এই সেতুটি নির্মাণে ৬৫৪ দশািমক ৮০ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য প্রদান করেছে এবং বাংলাদেশ সরকার ব্যায় করেছে ২৩৯ দশমিক ৮০ কোটি টাকা। অক্টোবর ২০১৭ হতে প্রকল্পের বিভিন্ন কাজ শুরু হয় এবং গত বছরের ডিসেম্বরে এটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ৪ মাস পূর্বেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ শেষ করে সেতু বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন।
সেতুর পূর্ব প্রান্তে নদীর তীরে ২২০ মিটার দীর্ঘ ও ৫৫ মিটার প্রস্থের বিনোদন এলাকা উন্নয়ন করা হয়েছে। এছাড়া পূর্ব প্রান্তে এপ্রোচ সড়ক সংলগ্ন ৬০ মিটার দীর্ঘ ও ৫ মিটার প্রস্থের বিটুমিনাস সড়ক, এপ্রোচ সড়কের নিচে ৬০ মিটার দীর্ঘ ও ৫ মিটার প্রস্থের কংক্রিট সড়ক এবং পশ্চিম প্রান্তে ১২০ মিটার দীর্ঘ এবং ৩ দশমিক ৫০ মিটার প্রস্থের কংক্রিট সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ২২০ মিটার নদী শাসনের কাজ করা হয়েছে।
এ সেতু প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মাসুদ মাহমুদ সুজন জানান চীনের মেজর ব্রিজ রিকনাইসেন্স এবং ডিজাইন ইন্সটিটিউট কোম্পানি লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে চায়না রেইল ওয়াচ ১৭ ব্যুরো গ্রুপ কোম্পারি লিমিটেড এই সেতুটি নির্মাণ করে।
পিরোজপুরের চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি গোলাম মাওলা নকীব প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই সেতুটি উদ্বোধনের সাথে-সাথে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরো একটি নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের ২য় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত সাগরকন্যা কুয়াকাটার সাথে বিশ্বের অন্যতম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় এ অঞ্চল দেশ-বিদেশের পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে আর এর প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে পিরোজপুর। বিভাগীয় শহর বরিশালের সাথে বিভাগীয় শহর ও শিল্পনগরী খুলনার সড়ক যোগাযোগে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই।
তিনি জানান, গভীর সমুদ্রবন্দর পায়রার সাথে দেশের ২য় সমুদ্রবন্দর মংলা ও সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে এবং এ এলাকার মানুষ গত ১ বছরে যোগাযোগ এবং পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সুবিধা পেয়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ রব্বানী ফিরোজ বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ক্রমশ ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের প্রসার ঘটছে পদ্মা এবং এ বঙ্গমাতা সেতু চালুর ফলে।
তিনি বলেন, পটুয়াখালীর শেখ হাসিনা সেনানিবাসের সাথে যশোর সেনানিবাসের সরাসরি সড়ক সংযোগ স্থাপিত হয়েছে।
পিরোজপুর প্রেস ক্লাবের সম্পাদক তানভীর আহমেদ বলেন, গতিময় অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে ও প্রাণ-চাঞ্চল্যে ভরপুর হয়ে উঠছে পিরোজপুরসহ পদ্মার এ পাড়ের জেলাগুলো।