বসতভিটাসহ শত বিঘা জমি ধরলায় বিলীন
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১০:০৪ এএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ মঙ্গলবার
সংগৃহীত ছবি
ভারী বর্ষণে পানির চাপে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার রামপুর এলাকায় নির্মানাধীন একটি সেতুর পাশের বিকল্প সড়ক ভেঙে যাওয়ায় রানীশংকৈল-হরিপুর সড়কে সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
অপরদিকে, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে হঠাৎ আগ্রাসী হয়ে উঠেছে ধরলা নদী। কুড়িগ্রামের উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে নদীর তীব্র ভাঙনে পাঁচটি বসতভিটাসহ শতাধিক বিঘা আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
একই সঙ্গে হুমকিতে রয়েছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভূমি আফিস, কমিউনিটি ক্লিনিক, বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো বলছে, রোববার রাতে ধরলা তীরবর্তী বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের খুদিরকুটি ব্যাপারীপাড়া গ্রামে ধরলার তীব্র ভাঙন শুরু হয়। একরাতেই অন্তত ১০০ বিঘা আবাদি জমি, শত শত গাছপালা নদীগর্ভে চলে গেছে।
‘অবস্থা খুব খারাপ। সামলায় যায় না। কোনটা ধরি কোনটা সরাই। গাছপালা, খড়ের পালা সউক শ্যাষ। খালি ঘরের চালটা করি সরবার পাছি। কাই কারটা সামলায়। এলা যে কোটাই যায়া থাকমো সেটায় কবার পাই না’ গণমাধ্যমকে এমনটাই বলছেন ধরলার আকস্মিক ভাঙনে ভিটেমাটি হারানো খুদিরকুটি ব্যাপারীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর দেওয়ান আলী।
রোববার রাতের পর সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সারাদিনও ভেঙেছে ধরলা। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে ওই ইউনিয়নের একমাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় খুদির কুটি আব্দুল হামিদ উচ্চবিদ্যালয়, তৎসংলগ্ন বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, ভূমি অফিস ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আক্কেল মামুদ কমিউনিটি ক্লিনিক।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা গণমাধ্যমকে বলছেন, কয়েক দিন ধরে ভাঙন চলছে। গত এক ১০ দিনে ওয়ার্ডের স্কুল-সংলগ্ন ২৯টি পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। ভাঙনের তীব্রতা এখন আরও বাড়ছে। অনেক আবাদি জমি ও গাছপালা নদীগর্ভে চলে গেছে। অনেকে বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন গণমাধ্যমকে বলেন, বেগমগঞ্জে ধরলার বাম তীরে প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশজুড়ে ভাঙন রয়েছে। এত বড় অংশে জরুরি প্রতিরক্ষা কাজ করার বরাদ্দ নেই। ভাঙনের খবরে তাৎক্ষণিক দুই হাজার জিও ব্যাগ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছি।
অপরদিকে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার রামপুর এলাকায় স্থানীয়রা জানায়, জেলার রানীশংকৈল-হরিপুর পাকা সড়কে রামপুর এলাকায় একটি সেতুর কাজ চলছে। এ অবস্থায় ওই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নির্মানাধীন সেতুর উত্তর পাশ দিয়ে অস্থায়ীভাবে মাটি দিয়ে বিকল্প সড়ক নির্মান করা হয়।
গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে পানির চাপে রোববার রাতে ওই বিকল্প সড়কের মাঝখানের কিছু অংশ ধসে গেছ। ভাঙা অংশ দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্ধ হয়ে যায় ওই সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
তবে নির্মাণাধীন সেতুর মাঝে কাঠ ফেলে অস্থায়ী সড়ক বানিয়ে দুই পাশের পথচারীরা কোনোরকম চলাচল করছেন। অটো কিংবা অন্য কোনো যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
মসলিম নামে এক পথচারী জানান, হরিপুর উপজেলা থেকে জরুরি কাজে জেলা সদরে যাওয়ার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে দেখি রামপুরের সড়ক ভেসে গেছে। বাধ্য হয়ে এখন অন্য পথ দিয়ে যেতে হবে।
একইভাবে রাণীশংকৈল থেকে হরিপুর যাওয়ার অপর এক পথচারী বলেন, জরুরি কাজে হরিপুর যাব। এ জন্য থ্রি-হুইলারে চড়ে এসে দেখি, এখানকার (রামপুর) সড়ক ভাঙা।
এদিকে রানীশংকৈল ও হরিপুর উপজেলার মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের জন্য রানীশংকৈল- কাঠালডাঙ্গী- হরিপুর পাকা সড়ক ব্যবহার করা যেতে পারে বলে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
সড়ক ভেঙে যাওয়া প্রসঙ্গে নন্দুয়ার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল বারি বলেন, ঠাকুরগাঁও থেকে প্রকৌশলী ও ঠিকাদার এসেছে তারা সড়কটির পুনরায় সংস্কার করে চলাচলের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছেন।
ঠাকুরগাঁও সহজ নির্বাহী প্রকৌশলী রাফিউল ইসলাম আরটিভি নিউজকে জানান, অতি বৃষ্টির কারণে এবং কৃষকেরা তাদের চাষাবাদকৃত ধান বাচানোর জন্য সড়কটি হয়তো কেটে দিয়েছে। পানি স্বাভাবিক হলেই সড়কটি পুনরায় সংস্কার করে চলাচলের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।