ঢাকা, সোমবার ২৫, নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৫৭:২৩ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

নওগাঁয় বন্যার পানিতে ভাসছে শতাধিক গ্রামের মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:৪৯ এএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ শনিবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

নওগাঁর আত্রাই নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় একের পর এক ভেঙে যাচ্ছে নদীর বাঁধ। গত বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত নতুন করে আত্রাই উপজেলার অন্তত আরও তিনটি স্থানে পাকা সড়ক ও বাধ ভেঙে গেছে।

ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় ওই এলাকার দুটি ইউনিয়নের ৪০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে শতাধিক পুকুরের মাছ। তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার বিঘা জমির রোপা আমনের ফসল। সবচেয়ে বেশি অবনতি হয়েছে আত্রাই উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি।

আত্রাইয়ে অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। বিদ্যুতের খুঁটি হেলে পড়ায় এলাকার অনেক গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। আত্রাই-সিংড়া ও রাণীনগরের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগও বন্ধ হয়ে পড়েছে।


আত্রাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়া উদ্দীন আহমেদ জানিয়েছেন, গত বুধবার রাতে আত্রাই নদীর ডান তীরের (দক্ষিণ) আত্রাই-সিংড়া সড়কের শিকারপুর ও জগদাস নামক স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় এখনও ফসলের মাঠ ও লোকালয়ে হু হু করে পানি প্রবেশ করছে। এ ছাড়াও বৃহস্পতিবার সকালে আত্রাই নদীর বাম তীরের (উত্তর) কাশিয়াবাড়ির বলরামচক নামক স্থানে সমসপাড়া সড়কের প্রায় ২০ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বর্তমানে সেই ভাঙা অংশ এখন ২০০ ফুটে এসে দাঁড়িয়েছে। এতে করে উপজেলার ভোপারা ও মুনিয়ারী ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মুনিয়ারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সম্রাট হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের কচুয়া, পালশ, চৌথন, উলাবাড়ি, ধরমপুর, কয়রা, সুলিয়া, মারিয়া, দমদত্তবাড়িয়াসহ অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমির আমন ফসল তলিয়ে গেছে।

আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন, ‘সকাল থেকেই আমরা দুর্গত এলাকায় রয়েছি এবং ভেঙে যাওয়া বাঁধ আটকানোর চেষ্টা করছি। এ ছাড়া দুর্গতদের জন্য ইতোমধ্যেই ১৬ মেট্রিক টন চাল খাদ্যসহায়তা হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে রাণীনগর উপজেলার নান্দাইবাড়ী ও কৃষ্ণপুর নামক স্থানে বেড়িবাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে ছোট যমুনা নদীর পানি প্রবেশ করে আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে করে ওই এলাকার কৃষ্ণপুর, প্রেমতলি, মালঞ্চি, নান্দাইবাড়ীসহ সাত-আটটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার প্রায় দেড় হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি।

রাণীনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদি হাসান জানান, বাঁধ ভেঙে প্রায় তিন থেকে চারশ পরিবার এখন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভোপাড়া ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ জানান, শুধু তার ব্লকেই ইতোমেধ্য ২০০ হেক্টর জমির রোপা আমনের ক্ষেত বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আরও ১০০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতির অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়াও ডুবে গেছে সবজিক্ষেত।

তবে জেলা কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় মাত্র ৬৯৩ হেক্টর জমির আমন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জেলা কৃষি দপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন।

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল জানান, আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৫ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার কমেছে। শুক্রবার বিকাল ৩টায় নওগাঁ শহরের লিটন ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং আত্রাই নদীর পানি আহসানগঞ্জ রেলস্টেশন পয়েন্টে বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

অপরদিকে মান্দা উপজেলায় বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম। এ ইউনিয়নের নুরুল্লাবাদ ও পারনুরুল্লাবাদ এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ৪০০ পরিবার ও ফকিন্নি নদীর তীরবর্তী এলাকায় আরও অন্তত ৬০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া প্রসাদপুর ইউনিয়নের বাইবুল্যা ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কয়লাবাড়ী এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫০০ পরিবার। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণের মূল বাঁধ সংস্কার না করার কারণে বেশ কিছু অংশ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আমিরুল হক ভূঞা বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) স্থানীয় বাসিন্দা, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ভেঙে যাওয়া অংশগুলো বন্ধ করার কাজ চলমান রয়েছে। আমরা আশাবাদী, নদীতে পানি কমতে শুরু করায় আর তেমন ভয়ের কোনো কারণ নেই। এলাকার মানুষদের রক্ষা করতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পরে ভেঙে যাওয়া অংশগুলো স্থায়ীভাবে মেরামত করার প্রতি সুদৃষ্টি দিতে সরকারের পক্ষ থেকে জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হবে।’