গাজায় মৃত্যুর প্রহর গুনছে ইনকিউবেটরে থাকা ৩৯ শিশু
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৯:৪৬ এএম, ১২ নভেম্বর ২০২৩ রবিবার
সংগৃহীত ছবি
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার সব প্রধান হাসপাতাল আল-শিফা, আল-কুদস, আল-রানতিসি এবং ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের একেবারে কাছে এখন ইসরায়েলি বাহিনী অবস্থান নিয়েছে।
শুক্রবার সারাদিন ধরে হাসপাতালগুলোর আশপাশে এবং ভেতরেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
ইসরায়েল বারবার অভিযোগ করে আসছে যে, আল-শিফা হাসপাতালের নিচের টানেলে হামাস অবস্থান করছে, যা অস্বীকার করেছে হামাস। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও ইসরায়েলের এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে।
জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে হাসপাতালের জেনারেটর ব্যবস্থা। যে কারণে এই হাসপাতালে এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে রোগীরা। জেনারেটর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালের ইনকিউবেটরে থাকা ৩৯ শিশু মৃত্যুর প্রহর গুনছে।
সংবাদ সংস্থা আলজাজিরা অবরুদ্ধ আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মুহাম্মদ আবু সালমিয়ার সঙ্গে কথা বলেছে।
তিনি বলেছেন, আমি শুধু বলতে পারি আমরা প্রাণ হারাতে শুরু করেছি। রোগীরা মুহূর্তের মধ্যে মারা যাচ্ছে। আমরা মৃত্যুর কয়েক মিনিট দূরে। অসুস্থ এবং আহতরা মারা যাচ্ছে, এমনকি ইনকিউবেটরে থাকা শিশুরাও।
তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যেই ইনকিউবেটরে থাকা একটি শিশুকে হারিয়েছি আমরা। নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে একজন যুবককেও হারিয়েছি।
গাজার উপ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইউসেফ আবু আলরিশ বলেছেন, হামাস-নিয়ন্ত্রিত ছিটমহলের বৃহত্তম চিকিৎসা কেন্দ্র আল-শিফা হাসপাতালের ভেতরে ইনকিউবেটরে ৩৯টি নবজাতক শিশু রয়েছে। এই হাসপাতাল বর্তমানে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) হামলা চালাচ্ছে। ইসরায়েলি স্নাইপাররা হাসপাতালের চারদিকে অবস্থান নিয়েছে। আকাশ থেকে ড্রোন তাক করে আছে। হাসপাতাল থেকে কেউ বের হওয়ার চেষ্টা করলেই তাকে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে সৈন্যরা।
বিবিসি বলছে, আল-শিফা হাসপাতাল থেকে কয়েকজন রোগী বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাদের মরদেহ হাসপাতাল চত্বরে পড়ে আছে।
আলজাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আলরিশ বলেছেন, আমাদের ইনকিউবেটরে ৩৯টি নবজাতক আছে। এই শিশুরা মৃত্যুর সাথে লড়ছে। আমরা সম্পূর্ণ আটকা পড়েছি। বাইরের দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা ছাড়াই এখানে পড়ে আছি। আমরা মৃতদের দাফনও করতে পারছি না।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমরা পুরো বিশ্বকে সতর্ক করে দিচ্ছি, হাসপাতালের সব জেনারেটর বন্ধ। জ্বালানি না থাকায় জেনারেটর বন্ধ হয়ে গেছে।
আলরিশ বলেন, কেউ হাসপাতালের আশপাশে ঘোরাফেরা করতে পারছে না। ড্রোন ছাড়াও স্নাইপাররা সব জায়গায় মোতায়েন রয়েছে। তারা চলন্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে হত্যা করছে।
তিনি বলেন, হাসপাতালের আশপাশে ভয়াবহ গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে এবং কয়েক মিনিট আগে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে একটি মর্টারের গোলা আঘাত করেছে।
গাজার এই মন্ত্রী বলেন, সর্বত্রই রক্ত। মেঝেতে রক্ত। এমনকি আমরা তা পরিষ্কারও করতে পারছি না। ইসরায়েলি কিলিং মেশিন হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে এবং টেলিভিশনের পর্দায় তা দেখানো হচ্ছে। এখনও তারা একই ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। কিন্তু কেউ শুনছে না, কেউ দেখছে না। সারা বিশ্ব দাঁড়িয়ে আছে।
তিনি বলেন, হাসপাতাল ভবনটি পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং যে কোনো চলন্ত ব্যক্তিকেই ইসরায়েলি বাহিনী লক্ষ্যবস্তু করছে।
আলরিশ বলেন, ইসরায়েলি বাহিনীর এই হত্যাকাণ্ড কেউ শুনছে না, কেউ দেখছে না। ফোনের ব্যাটারির শেষ চার্জটুকু দিয়ে কথা বলছেন তিনি এবং ‘এরপর আমরা নীরব হয়ে পড়ব।’
ফিলিস্তিনে রেড ক্রিসেন্টের প্রধান জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, বেসামরিক নাগরিকদের গাজা থেকে উৎখাত করার জন্য সেখানকার হাসপাতালগুলোকে নির্বিচারে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।
শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) একজন মুখপাত্র বলেছেন, আল-শিফা হাসপাতাল বোমা হামলার কবলে পড়েছে। ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় উপত্যকার ২০টি হাসপাতাল বর্তমানে অচল হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সূত্র: বিবিসি, আলজাজিরা।