ঢাকা, রবিবার ২৪, নভেম্বর ২০২৪ ৮:৫৫:৪৬ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

ডলি : গ্রাম্য স্কুলপড়ুয়া থেকে কানাডার এমপি

অনলাইন ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪.কম

প্রকাশিত : ০২:৪৭ পিএম, ২৪ জুন ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ১২:৫৬ এএম, ২৬ জুন ২০১৮ মঙ্গলবার

যে কোন ইতিহাস রচনা করতে অনেকটা সময় লেগে যায়। সময় না লাগলে অতীত কখনও ইতিহাসের তালিকায় পড়ে না।

 

আজ থেকে ১৯ বছর আগের কথা। সিলেটের রাজনগর উপজেলার বাজরাকোনা গ্রামের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী ডলিকে নিয়ে কানাডার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান রাজা মিয়া-জবা বেগম দম্পতি। ঠিক ১৯ বছর পর বাজরাকোনা গ্রাম থেকে আসা সেই কিশোরী ডলি আজ নিজ পরিশ্রমে ভাগ্য গড়েছেন। হয়েছেন কানাডার অন্টারিও প্রদেশের প্রাদেশিক নির্বাচনে স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট আসন থেকে এমপি।

 

এই ১৯ টি বছর ছিল ডলির জীবন নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ। ১৯৯৯ এর দিকে যখন ডলি পুরো পরিবারসহ কানাডায় আসলেন তখন প্রাথমিকভাবে বিপর্যয়ের মুখে পড়েন। ২০০১ সালের জানুয়ারি মাসে ডলির বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে প্রায় ছয় বছর হাসপাতালে ছিলেন। অনাহত এক বিপদের মধ্যে পুরো সংসারের হাল ধরেন ডলির মা জবা বেগম। পরিবাবের সেই কঠিন সময়ে কিশোরী ডলি মায়ের পাশে ছিলেন শক্তভাবে। এই অবস্থার মধ্যেই লেখাপড়া চালিয়ে যান তিনি।

 

টরন্টো ইউনিভার্সিটি থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন থেকে উন্নয়ন, প্রশাসন ও পরিকল্পনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন ডলি। দুই পর্বেই তার গবেষণার বিষয় ছিল বাংলাদেশ। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন অন্টারিও ভলান্টিয়ার সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড, সিটি অব টরন্টো স্পটলাইট, সাউথ এশিয়ান ইয়ুথসহ বেশ কয়েকটি পুরস্কার।

 

অন্টারিও প্রাদেশিক ক্যাম্পেইন সমন্বয়ক হিসেবে সরব ছিলেন কিপ ‘হাইড্রো পাবলিক’ প্রচারাভিযানে। দীর্ঘদিন নানা দাতব্য প্রতিষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে নিজেকে তৈরি করেছেন ডলি। ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট ইউনিয়নেও প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক দলের স্কারবরো সাউথ আসনের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। দায়িত্ব পালনের সময় সেই এলাকার নানাবিধ সমস্যার কথা তাকে আন্দোলিত করতো। এছাড়া তার দল ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টিও তাকে নির্বাচনের ব্যাপারে উৎসাহ দেয়। এই ভাবেই সে দেশের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন ডলি।

 

নির্বাচনীর প্রচারণায় ডলি বেগমের স্লোগান ছিল অনেকটাই ব্যতিক্রম। তিনি বলেছিলেন ‘আমি আপনাদেরই একজন, আপনাদেরই মতো জীবনযুদ্ধের প্রতি পদে হাজারো বাধাবিপত্তি আর অসাম্যের হয়ে লড়াই করা একজন। তাই আমি নির্বাচিত হওয়া হবে আমাদের মতো হাজারো মানুষের নিজেদের বিজয়। আমাকে নির্বাচিত করুন, আমি আপনাদের আশাহত করব না।’ ভোটাররা আস্থা রেখেছেন তরুণ ডলির ওপর ও তাকে জয়যুক্ত করেছেন।।

 

ডলির বিজয়ে টরন্টোর বাঙালি অধ্যুষিত ডানফোর্থ এলাকায় বেরিয়েছে আনন্দ মিছিল। কানাডার রাজনীতিতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কারও এমন সাফল্য এই প্রথম। আগামী ১৬ জুলাই কানাডার অন্টারিও প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্ট কুইন্স পার্কে শপথ নিতে যাচ্ছেন ডলি বেগম। তার এই শপথের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ কানাডার কাছে পরিচয় পেল অনন্য এক উচ্চতায়, সীমাহীন এক গৌরবে।