ঢাকা, শুক্রবার ১৫, নভেম্বর ২০২৪ ১৩:২১:১১ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

অতিথি পাখির কলতানে ভাড়ারদহ বিলে স্বর্গীয় রূপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৫:৩৫ পিএম, ২৬ নভেম্বর ২০২৩ রবিবার

ভাড়ারদহ বিল

ভাড়ারদহ বিল

পরিযায়ী পাখির কিচিরমিচির কলতান, অবাধ জলকেলি এবং ওড়াউড়ির দৃশ্য ভাড়ারদহ বিলকে যেন এখন অপূর্ব এক নৈসর্গিক রূপে সাজিয়েছে। 

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) সরকারের পাঁচ বছর (২০১৯-২০২৫) মেয়াদি ‘ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে বৃহত্তর রংপুর জেলায় সেচ সম্প্রসারণ (ইআইআর) প্রকল্প’র আওতায় দু’বছর আগে বিলটি পুনর্খনন করেছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, রংপুরের বদরগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম উপকণ্ঠে অবস্থিত চার দশক আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ভাড়ারদহ বিলটি পুনর্খননের ফলে হারিয়ে যাওয়া বাস্তুতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ব্যাপক উন্নতির ফলে সেখানে এক অতুলনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়েছে।

পার্শ্ববর্তী ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের হাফিজুর রহমান জানান, বিএমডিএ কর্তৃক ভাড়ারদহ বিল পুনঃখনন এবং এর চারিদিকে ১০০ ফুট প্রশস্ত পাড় জুড়ে ২১৩ প্রজাতির ছয় সহ¯্রাধিক বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় কাঠ, ফল, ঔষধি ও ফুল গাছের চারা রোপণের ফলে সেখানে এই অবিশ্বাস্য প্রাকৃতিক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে।

হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বর্ধনশীল জলজ উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণীর প্রাচুর্যে বিলটি এখন পরিযায়ী পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। অতিথি পাখির কলতান, বোটানিক্যাল গার্ডেন-সদৃশ সবুজ প্রকৃতি এবং অঙ্কুরিত ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিভিন্ন রয়সের দর্শনার্থীরা সেখানে ছুটে আসছেন।’

সম্প্রতি বিল পরিদর্শনে এসে দিনাজপুরের দম্পতি পারভীন আক্তার ও শহিদুল ইসলাম জানান, অতিথি পাখির অবাধ বিচরণ এবং তাদের জলাশয়ে অবতরণ ও জলকেলি আর চারদিকে সবুজের সমারোহে সেখানে এক অনন্য নৈসর্গিক সৌন্দর্য বিরাজ করছে।

পারভীন বলেন, ‘পুন:খননকৃত ভাড়ারদহ বিলটি এখন হাজার হাজার অতিথি পাখির কলতান এবং আশেপাশের তীর বিরল প্রজাতির গাছপালায় দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যে পরিপূর্ণ হওয়ায় ওই নয়নাভিরাম সৌন্দর্য থেকে আমরা দৃষ্টি ফেরাতে পারছিলাম না।’

পরিদর্শনে আসা স্কুল ছাত্রী সুষমা বর্মন ও কলেজ ছাত্রী আকলিমা খাতুন বলেন, পুনর্খনন করা ভাড়ারদহ বিল হারিয়ে যাওয়া বাস্তুতন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করে প্রকৃতির ভারসাম্য ফিরিয়ে এনে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক উজ্জ্বল প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

তারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে ভাড়ারদহ বিলকে পুনর্খননের মাধ্যমে অর্জিত সাফল্যের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে বিলুপ্ত জলাশয়গুলোকেও পুনর্খনন করে অন্যান্য এলাকায় বাস্তুতন্ত্রকে একইভাবে পুনরুজ্জীবিত করার পরামর্শ দেন।

বদরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকারি অধ্যাপক মাহফুজুল হক চৌধুরী লিটন বলেন, ভাড়ারদহ বিল পুনর্খননের ফলে তা চার দশক পর স্থানীয় প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ, পাখি ও পরিযায়ী পাখির জন্য নিরাপদ এক অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বিএমডিএ-র উচিত পুনর্খননকৃত জলাশয়টিসহ সেখানে গড়ে ওঠা গাছপালার আরও ভাল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা এবং বাস্তুতন্ত্রের উত্তরোত্তর উন্নতির জন্য এটিকে ইকো-পার্ক, পাখি এবং বিলুপ্ত প্রজাতির দেশীয় মাছ, জলজ উদ্ভিদ, উদ্ভিদ এবং প্রাণীর অভয়ারণ্যে পরিণত করা।’

সেখানে মৎস্য চাষের নামে বা পর্যটন স্পট স্থাপন করার নামে স্থানীয় একশ্রেনির লোভী ব্যক্তিদের কাছে অনন্য সৌন্দর্যমন্ডিত জলাশয়টি ইজারা দেওয়া হলে পুনর্খননকৃত ভাড়ারদহ বিলের ক্রমবর্ধমান আকর্ষণ বিপন্ন হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

পরিবেশবিদ ও রিভারাইন পিপল-এর পরিচালক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, কয়েক যুগ পর পুনর্খননকৃত ভাড়ারদহ বিলে এখন অগণিত সংখ্যক অতিথি পাখির দেখা পাওয়া খুবই ভালো একটি খবর।

তিনি বলেন, ‘পুনর্খনন করা ভাড়ারদহ বিলটি এমন এক সময়ে বাস্তুতন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করে চলেছে যখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জলাশয় শুকিয়ে গিয়ে পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এর প্রভাবে অনেক দেশীয় মাছ, পোকামাকড়, পাখি এবং কিছু প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।’

বর্তমানে ভাড়ারদহ বিলটি প্রকৃতপক্ষে পরিযায়ী এবং স্থানীয় পাখি, বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় ছোট মাছ, পোকামাকড়, ছোট শামুক, শেওলা, মস, জলজ উদ্ভিদ এবং অন্যান্য কান্ডহীন জলীয় উদ্ভিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

তিনি বিলটিকে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ইজারা না দেওয়ার, এটিকে অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা এবং সেখানে পাখি, মাছ এবং সব প্রাণীর সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন।

ইআইআর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও বিএমডিএ রংপুর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান খান বলেন, পরিযায়ী পাখির কিচিরমিচির, কলতান ও সবুজের সমারোহে শত শত মানুষ এখন ভাড়ারদহ বিলের অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছেন।

তিনি বলেন, ‘কৃষি ও গৃহস্থালী কাজে সংরক্ষিত ভূপৃষ্ঠের পানির সর্বোত্তম ব্যবহার, বনায়ন এবং পরিবেশের উন্নতি এবং বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় প্রজাতির মাছ, পাখি এবং পরিযায়ী পাখির জন্য অভয়ারণ্য সৃষ্টি ও হারিয়ে যাওয়া বাস্তুতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বৃহত্তর রংপুর জেলার ৩৫টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।’