শুধু প্রণোদনা নয়, নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণও জরুরী
অনলাইন ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০১:৩৮ পিএম, ৩০ জুন ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ১২:১৮ পিএম, ২ আগস্ট ২০১৮ বৃহস্পতিবার
কহিনুর বেগম একজন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা। একাগ্রতা ও কর্মদক্ষতার মাধ্যমে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। তবে যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাবে জীবনে এই সাফল্য বেশিদিন ধরে রাখতে পারেননি তিনি। অনেক নারী উদ্যেক্তার মতো ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনিও নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।
বর্তমান সরাকর সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক নারীবান্ধব ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টি এবং সমাজের মূল ধারায় নারীদের নিয়ে আসতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে নারীদের সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন সামাজিক বাধা ও সঠিক পদক্ষেপের অভাবে কহিনুর বেগমের মত অনেক নারী উদ্যেক্তা সরকারের সদিচ্ছার সঠিক ব্যবহার করতে পারছে না। ফলে তারা তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটাতে পারছে না। মাঝ পথে যেয়ে তাদেরকে থমকে দাঁড়াতে হচ্ছে।
কহিনুর বেগম ১৯৯২ সালে মাত্র তিনশত টাকা মূলধন নিয়ে চালের ব্যবসা শুরু করেন। প্রথমে তিনি এই টাকা দিয়ে তিন মণ ধান কিনে চাল করে গ্রামের বাজারে বিক্রয় করেন। এতে তার ৬০ টাকা লাভ হয়। সেই থেকে তার সংগ্রামী জীবন শুরু। আর তাকে পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। অদম্য সাহস, ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম তাকে ব্যবসায়ে সফলতা এনে দিয়েছিল। কোন বাধা তার গতিরোধ করতে পারেনি। সকল ধরনের বাধা পিছনে ফেলে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনি একটি অটো রাইস মিল, একটি দুগ্ধ ও মুরগীর খামারের মালিক হয়েছেন। কিন্তÍু বিধিবাম তার সফলতার চাকা হঠাৎ করে থেমে গেছে। তিনিও এখন ব্যাংক ঋণ খেলাপি।
১৯৯২ সালে ছোট দু’টি সন্তান ও অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে খুব সংকটে পড়েছিলেন তিনি। তার স্বামী এলাকার একটি খাদ্য গুদামের শ্রমিক ছিলেন। এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি পা হারান। এ সময়ে তিনি নিজেকে খুব অসহায় ভেবেছিলেন। একদিকে স্বামীর চিকিৎসা খরচ, অপরদিকে সন্তানদের নিয়ে সংসারের ঘানি তার কাঁধে চেপে বসে। অনেকটা নিরুপায় হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কোন উপায়ন্তর না দেখে নিজেই সামান্য পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা শুরুতে আর্থিক সমস্যা থাকলেও তার মানসিক শক্তির কোন কমতি ছিল না। নারী ব্যবসায়ী হওয়ায় তাকে নানা কথা শুনতে হয়েছে। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পুঁজির অভাবে ব্যবসা বাড়াতে পারছিলেন না। নারী হওয়ায় তাকে কেউ ঋণ দিতে চায় না। জামানত দিতে না পারায় ব্যাংকও তাকে কোন সহযোগিতা করছিল না। জামানত দিবার মত তার কিছুই ছিল না। এরপরও তিনি মনোবল হারাননি। এক বছর যেতে না যেতেই ১৯৯৩ সালে কহিনুর বেগম তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেন মেসার্স কহিনুর এন্টারপ্রাইজ। এই নামে তিনি ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকেন। তার ব্যবসা সাফল্য দেখে তাকে সহায়তা করতে একটি ব্যাংক এগিয়ে আসে। তিনি ২০০২ সালে প্রথম ব্রাক ব্যাংক হতে দুই লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এটি ছিল তাঁর জীবণে সফলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
ব্যবসা সঠিকভাবে পরিচালনা করে। তিনি ব্যাংক ঋণ সুদসহ যথাসময়ে পরিশোধ করেন। তিনি ২০১০ সালে সাউথইস্ট ব্যাংক যশোর শাখা হতে ১০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এ টাকা দিয়ে একটি দুগ্ধ ও মুরগীর খামার গড়ে তোলেন। তিনি ব্যবসা করে সাউথইস্ট ব্যাংকের ঋণও যথা সময়ে পরিশোধ করেন। তিনি তাঁর ব্যবসায়ের আয় হতে নিজের পরিবারের চাহিদা মিটানো ছাড়াও আয়ের একটি অংশ সামাজিক কল্যাণে ব্যয় করতেন। তিনি বিধবাদের সাহায্য, গরীবদের মাঝে কাপড় বিতরণ এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে ব্যয় করতেন। তিনি ২০১২ সালে তার দুগ্ধ খামারের জন্য বেসিক ব্যাংক থেকে ২৫ লক্ষ টাকা ঋণ নেন। প্রাথমিক অবস্থায় তিনি নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করলেও পর্যাপ্ত বাজারজাতকরণ জ্ঞানের অভাবে তিনি দুগ্ধ খামারে সফলতার মুখ দেখতে পারেননি। বর্তমানে তিনি ব্যাংক ঋণ খেলাপি।
ব্যবসায়ের শুরুতে তিনি একাই সব কাজ করতেন। ব্যবসা সম্প্রসারণের সাথে সাথে তার প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং ২০১৩ সালে কর্মচারীর সংখ্যা এসে দাড়াঁয় ২৬ জনে। কিন্তু তার ব্যবসায়িক অবস্থা খারাপ হওয়ায় বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীর সংখ্যা মাত্র আট জন। এসএমই ফাউন্ডেশানের নারী উদ্যেক্তা উন্নয়ন উইং এর ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বলেন, বাসস’র সাথে আলাপকালে, নিরাপত্তা ও বাজারজাতকরণ নারী উদ্যেক্তাদের জন্য প্রধান সমস্যা। নারীদের জন্য ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে ব্যাংক কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে তাদের মানসিকতা পরিবর্তনের প্রয়োজন এবং নারীরা যাতে দক্ষতার সাথে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে এ জন্য অর্থায়ন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি জানান, এসএমই ফাউন্ডেশন ইতোমধ্যে ১২ হাজারের বেশি নারী-পুরুষকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই নারী। নারী-পুরুষ পরিচালিত ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ের চ্যালেঞ্জগুলো প্রায় একই। তবে সরকার নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে বিভিন্ন প্রণোদনার ব্যবস্থা করে থাকে। এর মাধ্যমে সরকার নারীদের সম্ভবনাগুলোকে কাজে লাগানোর সুযোগ করে দিচ্ছে।