১৩ বছর ধরে বিচারের অপেক্ষায় ফেলানীর পরিবার
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১১:৪১ এএম, ৭ জানুয়ারি ২০২৪ রবিবার
সংগৃহীত ছবি
সীমান্তে বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী হত্যার আজ ১৩ বছর। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর অনন্তপুর সীমান্তে ৯৪৭নং আন্তর্জাতিক ৩নং সাব পিলারের পাশে টহলরত ভারতের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে নির্মমভাবে তার মৃত্যু হয়। এই হত্যাকাণ্ডের ১৩ বছর পূর্ণ হলো আজ। একযুগ পার হলেও নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার পায়নি ফেলানী পরিবার।
সেসময় ফেলানীর মরদেহ কয়েক ঘণ্টা কাটাতারে ঝুলে থাকার দৃশ্য দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমসহ মানবাধিকার কর্মীদের মাঝে সমালোচনার ঝড় তোলে। পরে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারের বিএসএফর বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার কাজ শুরু হয়। একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয় বিএসএফর বিশেষ আদালত।
পরে বিজিবির আপত্তিতে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনরায় বিচার শুরু হলেও সেখানে খালাস দেয়া হয় অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে। পরে ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই ভারতীয় মানবাধিকার সুরক্ষার (মাসুম) মাধ্যমে ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। পিটিশনের ভিত্তিতে কয়েক দফায় শুনানির দিন পেছালেও এখনো আদালতেই ঝুলে আছে পিটিশনটি। এ অবস্থায় অনেকটা হতাশার মধ্যে থাকলেও মেয়ের হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তিসহ ন্যায় বিচারের আশা করছে তার পরিবার।
ফেলানীর ছোট ভাই জাহান উদ্দিন বলেন, ১৩ বছর হয়ে গেল আমার বড় বোন হত্যার বিচার পাইলাম না। ফেলানী আপা আমাদের যে কত আদর-যত্ন করত ভুলতে পারি না। যারা বোন হারিয়েছে তারাই শুধু বলতে পারবে বোন হারানোর কষ্ট। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আকুল আবেদন আমার বোনকে যারা হত্যা করেছে তার যেন সঠিক বিচারটা হয়।
ফেলানীর মা জাহানারা বেগম বলেন, মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মানবাধিকার সংস্থাসহ বহুজনের কাছে আমার স্বামীসহ গিয়েছি, কিন্তু ১৩ বছরেও বিচার পেলাম না।
ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম বলেন, দুইবার কুচবিহারে গিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছি। বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের নৃশংসতার বর্ণনা দিয়েছি। তারপরও ন্যায়বিচার পাইনি। ন্যায্য বিচার পাওয়ার জন্য ভারতের সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন দাখিল করেছি। শুনানি হচ্ছে না। তারপরও আশা ছাড়িনি। প্রতীক্ষায় আছি। আর যত দিন ন্যায়বিচার পাব না, ততদিন বিচার চাইতে থাকবো।
কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর ও ফেলানীর বাবার আইনি সহায়তাকারী অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন জানান, সীমান্তে হত্যার শিকার ফেলানীর মামলাটির শুনানি হওয়া দরকার। শুনানি হলে ঝুলে থাকা বিষয়টি নিষ্পত্তি হতো। যেহেতু দুই রাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে।শান্তিপূর্ণ বর্ডারের জন্য নিশ্চয় ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট কিছু নির্দেশনা দেবেন। পাশাপাশি ফেলানীর পরিবার ক্ষতিপূরণ পাক এটাই চাওয়া।
জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলনিটারী গ্রামের নুর ইসলাম ও জাহানারা দম্পতির আট সন্তানের মধ্যে সবার বড় মেয়ে ছিল ফেলানী। পরিবারের অভাব-অনটন দূর করতে কাজের সন্ধানে স্বপরিবারে চলে যান ভারতে। মেয়েকে বিয়ে দিতে দালালের মাধ্যমে দেশে ফেরার সময় এ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় ফেলানী।