সদরঘাট ট্র্যাজেডি: সপরিবারে নিহত সেই মুক্তা ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১১:৩৪ এএম, ১২ এপ্রিল ২০২৪ শুক্রবার
সংগৃহীত ছবি
ঈদের দিন রাজধানীর সদরঘাটে পন্টুনে বাঁধা লঞ্চের রশি ছিঁড়ে দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজন একই পরিবারের। তাদের মধ্যে এক দম্পতি ও তাদের তিন বছরের একমাত্র সন্তান রয়েছে। এদের মধ্যে নিহত মুক্তা ৬-৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। এ ঘটনায় নিহতদের মধ্যে রয়েছে মুক্তার স্বামী মো. বেলাল (৩০) এবং তাদের তিন বছর বয়সী মেয়ে মাইসা। অন্য দুজন হলেন রবিউল (১৯) ও রিপন হাওলাদার (৩৮)। রিপনের বাড়ি পটুয়াখালী। আর রবিউলের বাড়ি ঠাকুরগাঁও।
নিহত মুক্তার আত্মীয়রা বলছেন, বেলাল পারিবারিকভাবে অস্বচ্ছল ছিলেন। তার বাবা নেই। পোশাক কারখানার স্বল্প বেতনের কর্মী ছিলেন। বেলাল-মুক্তা দম্পতির সংগ্রামী জীবনে স্বাবলম্বী হতে চাকরির পাশাপাশি স্ত্রীকে নিয়ে ব্যবসায়ও শুরু করেছিলেন। কিন্তু স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় ব্যবসা আপাতত বন্ধ রেখে স্ত্রীকে গ্রামে রেখে আসতে চেয়েছিলেন বেলাল। তাই ভিড় এড়িয়ে রওয়ানা করেছিলেন ঈদের দিন।
ঈদের দিন বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে হঠাৎ একটি লঞ্চের ধাক্কায় টার্মিনালে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকটি লঞ্চের ছিঁড়ে যাওয়া রশির আঘাতে এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস বলছে, এমভি তাসরিফ-৪ ও এমভি পূবালী-১ রশি দিয়ে সদরঘাটের ১১ নম্বর পন্টুনে বাঁধা ছিল। এ দুটি লঞ্চের মাঝখান দিয়ে ফারহান-৬ নামের আরেকটি লঞ্চ ঢুকানোর সময় এমভি তাসরিফ-৪ লঞ্চের রশি ছিঁড়ে যায়।
ঘটনার কিছু সময় পর মিটফোর্ড হাসপাতালে লাশের সুরতহাল করতে আসা নৌ পুলিশের এসআই কুমারেশ ঘোষ বলেন, এক লঞ্চকে আরেক লঞ্চ ধাক্কা দেয়। ওই ধাক্কায় লঞ্চের মোটা রশি ছিঁড়ে মানুষের গায়ে ধাক্কা লেগেছে। তাতেই ঘটেছে হতাহতের ঘটনা।
দুর্ঘটনার খবর শুনে ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে ছুটে আসেন বিল্লালের ফুফাতো বোন হনুফা আক্তার। তিনি বলেন, বিল্লালের স্ত্রী ৬-৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। সন্তান প্রসবের আগে তাকে বাড়িতে রেখে আসার কথা ছিল। ওয়াইফের এ অবস্থায় ঝঞ্জাটের কারণে ঈদের দিন রওনা করছে। এখন তো সবাই একসাথে মরে গেল। ওরাও শেষ, দুই বাচ্চাও শেষ।
ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা জেলার উপসহকারী পরিচালক ফয়সালুর রহমান বলেন, এমভি ফারহান-৬ লঞ্চের ধাক্কায় তাসরিফ-৪ লঞ্চের রশি ছিঁড়ে ঘাটে থাকা পাঁচ যাত্রীকে গুরুতর আঘাত করে। খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠাই। পরে সেখানে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
বিআইডব্লিউটিএ’র ঢাকা জেলা পরিচালক একেএম আরিফুদ্দিন বলেন, ঈদ সামনে রেখে লঞ্চ মালিকদের অতিরিক্ত ভাড়া ও বেআইনি তৎপরতার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর দায় তাদেরই নিতে হবে।