জিম্মি মুক্তিতে হামাসের সম্মতির পরও গাজায় যুদ্ধবিরতি অনিশ্চিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১০:৩৩ এএম, ৭ মে ২০২৪ মঙ্গলবার
সংগৃহীত ছবি
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় চলমান ইসরায়েলি নির্বিচার আগ্রাসনের সাত মাস পূর্ণ হতে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিগত তিন-চার মাসে কয়েক দফায় আলোচনার পর অবশেষে কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতির শর্তে জিম্মিদের মুক্তির জন্য একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এতদিন যুদ্ধবিরতি না হওয়ার জন্য হামাসের বারবার পিছিয়ে যাওয়াকেই কারণ হিসেবে দেখাচ্ছিল ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। তাই অবশেষে হামাসের সম্মতির খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে গাজার বাসিন্দারা। কিন্তু তাদের সে উচ্ছ্বাস হয়তো স্থায়ী হচ্ছে না; জিম্মি মুক্তিতে হামাস রাজি হলেও বেঁকে বসেছে ইসরায়েলি প্রশাসন। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে ফের হামলা শুরু করেছে দখলদার রাষ্ট্রটির সেনারা।
গুগল নিউজে ফলো করুন আরটিভি অনলাইন
এরই মধ্যে রাফাহর পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক বিমান হামলার খবর প্রকাশ করেছে আল জাজিরা। ফিলিস্তিনের তথ্য কেন্দ্রের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থাটি জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে রাফাহ। পূর্ব রাফাহর আল-জাইনা এলাকায় একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১২ জন নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি তথ্য কেন্দ্র বলছে, এর আগেও দুটি বোমা হামলায় অন্তত আটজন নিহত হয়েছিলেন।
এদিকে অ্যাসোসিয়েট প্রেস এজেন্সি (এপি) জানিয়েছে, ইসরায়েলি বেশকিছু ট্যাঙ্ক রাফাহ সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থান করছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার (৬ মে) মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে আসা গাজা যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানিকে ফোন করে প্রস্তাবে সম্মত হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া।
কিন্তু ইসরায়েল এখন বলেছে, নতুন প্রস্তাবের শর্তগুলো তাদের দাবি পূরণ করেনি এবং চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার পাশাপাশি রাফাহতে হামলার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, গাজায় কোনো যুদ্ধবিরতির চুক্তি নিয়ে সমঝোতা হয়নি। যে প্রস্তাবে হামাস রাজি হয়েছে, তা মিসরের প্রস্তাবের একটি তুলনামূলক নমনীয় সংস্করণ। এতে এমন সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে, যা ইসরায়েল কখনও মেনে নেবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ইসরায়েলি কর্মকর্তা এও বলেছেন, এটি এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে মনে হয়ে ইসরায়েল চুক্তি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবটিতে ইসরায়েলের দাবি পূরণ হয়নি। তবে ইসরায়েল একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে আলোচকদের সঙ্গে দেখা করার জন্য প্রতিনিধি দল পাঠাবে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও জানিয়েছে, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা পুনরায় শুরু করতে মঙ্গলবার (৭ মে) কায়রো যাবে তাদের প্রতিনিধি দল।
তবে এরই মধ্যে রাফাহতে অভিযান চালিয়ে যাওয়ার অনুমোদন দিয়েছে নেতানিয়াহুর যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। তাদের দাবি, গাজায় পূর্ণ বিজয় অর্জনের জন্য প্রধান এই শহরটিতে অভিযান চালিয়ে যাওয়া দরকার।
অবশ্য পুনরায় আলোচনার আগে রাফাহ আক্রমণ না করার আহ্বান জানিয়েছিল ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সেখানে আশ্রয় নেওয়া বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা ছাড়া হামলা করা উচিত নয়। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, ওয়াশিংটন তার মিত্রদের সঙ্গে হামাসের প্রতিক্রিয়া নিয়ে আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আলোচনা করবে এবং এ পর্যায়ে এ ধরনের একটি চুক্তি ‘একেবারেই অর্জনযোগ্য’।
উল্লেখ্য, হামাস নির্মূলের নামে গত সাত মাস ধরে চলা ইসরায়েলের সামরিক অভিযান ও নির্বিচার হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন অবরুদ্ধ গাজায়। নিহতদের বেশির ভাগই নিরীহ নারী ও শিশু। গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরুর পর অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে এ পর্যন্ত আহত হয়েছেন ৭৭ হাজারের বেশি মানুষ। এরই মধ্যে গাজায় দখলদার ইসরায়েলের এই নির্বিচার আগ্রাসন ও ধ্বংসযজ্ঞকে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল। ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত ভূখণ্ডটিতে মানবিক বিপর্যয়ের এমন পরিস্থিতিতেও ইসরায়েলকে সরাসরি মদদ দিয়ে যাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। ইসরায়েলের জন্য অস্ত্র ছাড়াও বড় অর্থনৈতিক সহায়তা বরাদ্দ অব্যাহত আছে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি দখলদার রাষ্ট্রটি বরাবরই নৈতিক ও আর্থিক সমর্থন পেয়ে আসছে কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়ার মতো মিত্রদের কাছ থেকে।
সবশেষ সোমবারও (৬ মে) গাজার দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত রাফাহতে আকাশ ও স্থল অভিযান চালায় ইসরায়েলি বাহিনী এবং শহরের কিছু অংশ থেকে বাসিন্দাদের ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। মূলত সাত মাসের ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞে গাজার এই শহরটি এখন ১৪ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনির আশ্রয়স্থল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সব বাসিন্দাই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।