গুহাবাসের অভিজ্ঞতা জানালো থাই শিশুরা
অনলাইন ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ১২:৪৮ পিএম, ১৯ জুলাই ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৩:৫০ পিএম, ২২ জুলাই ২০১৮ রবিবার
থাই গুহা থেকে উদ্ধার হওয়া শিশুরা বুধবার জনসম্মুখে এসে জানালো তাদের অভিজ্ঞতার কথা। বিশ্বজুড়ে তারকা-খ্যাতি পেয়ে যাওয়া এই শিশুরা উদ্ধার হওয়ার পর এই প্রথমবারের মত জনসম্মুখে নিজেদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে। এসময় তাদের দেখাচ্ছিল হাসিখুশি এবং হালকা মেজাজে। পাশাপাশি বসে ছিল তারা।
থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে পড়ার পর ১২ শিশু এবং তাদের ফুটবল কোচের অসাধারণ উদ্ধার অভিযানের ঘটনা সারাবিশ্বের মনোযোগ কেড়ে নেয়।
এই বাচ্চারা একই রকম ফুটবল জার্সি পরে আসে। জার্সি তাদের ফুটবল দলের নাম ওয়াইল্ড বোয়ারস লেখা রয়েছে। এর সাথে মিলিয়ে রয়েছে বুনো শূকরের ছবি। বুধবার তাদের নিয়ে প্রথবারের মত আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা বিশেষভাবে বাছাই করা কতগুলো প্রশ্নে উত্তর দেয়, যাতে করে তাদের কোনো অস্বস্তির মধ্যে পড়তে না হয়। বুধবারের এই প্রেস কনফারেন্স থেকে জানা যায় কিভাবে তারা হারিয়ে গিয়েছিল এবং কি কি ঘটেছিলো সেই গুহায়।
দলের সহকারী কোচ একাপল চান্থাওং বলেন, গত ২৩ জুন ফুটবল অনুশীলন শেষে দলের ছেলেরা সবাই আশেপাশের এলাকা দর্শন এবং থাম ল্যাং গুহার ভেতর বেড়াতে যেতে একমত হয়। আমরা একঘণ্টার জন্য যাওয়ার প্ল্যান করি।
একাপল বলেন, আগে যেভাবে খবরে বলা হয়েছিল যে, তারা জন্মদিন উতযাপন করতে গিয়েছিলেন বিষয়টি আসলে তেমন নয়। যদিও `নাইট` নামে পরিচিত দলের একটি ছেলের ১৭তম জন্মদিন উদযাপনের জন্য তার বিকেল পাঁচটার মধ্যে বাড়িতে ফেরার তাড়া ছিল।
তিনি বলেন, আমরা স্বাভাবিকভাবেই হাঁটছিলাম। কিন্তু গুহার ভেতর যাওয়ার পর আমরা জানলাম আমাদের বের হওয়ার পথ আটকে গেছে।
একাপল বলেন, দলটি তখন বুঝতে পারে পানির কারণে গুহা থেকে বের হওয়ার পথ রুদ্ধ। কেউ কেউ তখন জানতে চাইলো আমরা হারিয়ে গেছি কি-না। আমি বলি আমরা ভুল পথে যাবো না। যতক্ষণ শুষ্ক বালুময় জায়গা না মিলে আমরা হাটতে থাকি।
তিনি আরো বলেন, আমরা পানির উৎসের কাছাকাছি অবস্থান নিলাম। আমরা বালুর ওপর ঘুমালাম। ঘুমের আগে প্রার্থনা করতাম। আমরা ভেবেছি ভোরবেলা পানি নেমে যাবে এবং লোকজন আমাদের খোঁজে আসবে। তখনো আমাদের মধ্যে ভয় কাজ করছিল না।
গুহার ভেতর সময় কিভাবে কাটছিল :
কোচ একাপল জানান, টর্চ-লাইটের অল্প আলো ব্যবহার করে বের হওয়ার রাস্তা খুঁজে বের করার চেষ্টায় করছিল দলটি। কিন্তু যতই সময় যাচ্ছিল বাচ্চারা তাদের শক্তি হারাচ্ছিল।
একটি শিশু জানায়, পাথরের গা বেয়ে পড়া পানি কিভাবে তাদের তৃষ্ণা মিটিয়েছে। কিন্তু তাদের খাওয়ার মত কোন খাবার সেখানে ছিল না বলে জানায় তারা।
একটি শিশু বলে, আমি সংজ্ঞা হারাচ্ছিলাম। কোন শক্তি ছিল না এবং প্রচণ্ড ক্ষুধা ছিলো। খাবারের কথা ভুলে থাকার চেষ্টা করতাম। কারণ সেটা আমার ক্ষুধা আরও বাড়াবে।
কোচ একাপল বলেন, তারা একটি পয়েন্টে পৌঁছান যেখানে তারা শুধু উদ্ধারের অপেক্ষায় বসে থাকতে চাননি। আমরা গর্ত খোঁড়ার চেষ্টা করি। গুহার দেয়ালে গর্ত খুড়তে থাকি। কর্তৃপক্ষের খুঁজে বের করার অপেক্ষায় বসে থাকতে চাইনি আমরা।
ছেলেদের একজন জানায়, দেয়াল খুড়তে পাথর ব্যবহার করে তারা।
কোন কোন খবরে ছেলেরা সাঁতার জানেনা বলে যে খবর বের হয়েছে তার বিপরীত বক্তব্য দিয়ে কোচ একাপল বলেন, প্রত্যেক ছেলেই সাঁতার জানে। যদিও কেউ কেউ খুব দক্ষ সাঁতারু নয়। সময় কাটানোর জন্য তারা চেকার খেলতো।
উদ্ধার-কর্মীদের প্রথম দেখার পর অনুভূতি :
তাদের সন্ধানে নামা দুই ব্রিটিশ ডুবুরী যখন তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছালেন সেই মুহূর্তের বর্ণনা দিয়ে ১৪ বছরের আদুল স্যাম-অন বলে, সেটা ছিল `মিরাকল`। ঘটনাটি ঘটে সন্ধ্যার সময়। পাথরের ওপর আমরা বসে ছিলাম। কিছু লোকজনের কথা শুনতে পেলাম।
আদুলই এই দলের একমাত্র সদস্য যে ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে পারে।
সে জানায়, সে টর্চ-লাইট হাতে নেয় এবং ডুবুরিদের দিকে আলো ফেলে। তারপর তারা যখন পানির ভেতর থেকে ভেসে ওঠে সেসময় সে তাদের দেখে বলে "হাই"।
আদুল বলে, আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ তারা ছিল ইংলিশ। তাই আমি বললাম, হ্যালো। তারা প্রশ্ন করলো কেমন আছো? আমি বললাম, ঠিক আছি। আমি জানতে চাইলাম তাদের কোনও সাহায্য প্রয়োজন কি-না? তারা বললো, না ।
এরপর জানতে চাইলো আমরা কতজন?
ততদিনে নয়দিন পেরিয়ে গেছে। আদুল বলেন, তার মাথায় অংক এবং ভাষা কোনটাই ঠিকমত কাজ করছিলো না।
নেভি ডুবুরীর আত্মত্যাগে তাদের অনুভূতি :
৬ জুলাই গুহার ভেতর প্রাণ হারানো স্বেচ্ছাসেবক এবং সাবেক নেভি সিল ডুবুরীর কথা জিজ্ঞেস করা হলে কোচ একাপল বলেন, পুরো দল এই খবরে ভীষণভাবে শোকাহত হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, তারা মনে করে তাদের জন্যই তার মৃত্যু হয়েছে এবং তার পরিবারকে এখন কষ্ট ভোগ করতে হবে। সামান আমাদের জীবন বাঁচাতে তার নিজের জীবন স্যাক্রিফাইস করেছেন যাতে আমরা বেঁচে থাকতে পারি।
তার মৃত্যুর খবরে ছেলেরা সবাই কেঁদেছে বলেও জানান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্থায়ি সচিব।
কে প্রথমে বের হবে সে সিদ্ধান্ত কিভাবে নেয়া হয়েছিল :
কোচ একাপল জানান, উদ্ধারকর্মী এবং থাই নেভি সিলের বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হয় বিষয়টি। ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানের মাধ্যমে পানিতে প্লাবিত গুহার ভেতর থেকে বাচ্চাদের বের করে আনা হয় "মিলিটারি গ্রেড স্ট্রেচারে` করে এবং তাদের শান্ত রাখার জন্য ঘুমের ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
ছেলেদের কোন নির্দিষ্ট ক্রমানুসারে বের করে আনা হয়?
এমন প্রশ্নে কোচ জানান, তেমন কিছু ছিল না। যারা স্বেচ্ছায় বাইরে যেতে চেয়েছে, দুর্বলতা সবলতা বিবেচ্য ছিল না।
বুধবারের প্রেস কনফারেন্সে কোচ একাপল জানান, বিষয়টি ছিল এরকম "যে আগে হাত ওঠাবে সে আগে বের হবে...ছেলেদের মধ্যে কেউ কেউ বের হতে চাইছিল না। কারণ তারা নেভি সিল সদস্যদের সাথে নিরাপদ বোধ করছিল।"
প্রেস কনফারেন্স শেষে বুধবার রাতেই এই ফুটবল দলের ছেলেরা এবং কোচের বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা।এই দলটির দিকে সারাবিশ্বের মনোযোগ থাকলেও, চিকিৎসকরা তাদের পরিবারগুলোকে সতর্ক করে পরামর্শ দিয়েছে যাতে অন্তত একমাস এই বাচ্চাদের সাথে মিডিয়া কোনরকম যোগাযোগ করতে না পারে।
সূত্র : বিবিসি অনলাইন