বসনিয়ার মুসলিমদের গণহত্যার দিনটিকে আন্তর্জাতিক দিবস ঘোষণা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১২:৫৫ পিএম, ২৪ মে ২০২৪ শুক্রবার
প্রতীকী ছবি
১৯৯৫ সালে সংঘটিত স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে ১১ই জুলাইকে সেব্রেনিৎসা গণহত্যা স্মরণ দিবস হিসেবে ঘোষণা করলো জাতিসংঘ। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ওই গণহত্যায় বসনিয়ার আট হাজার মুসলিমকে হত্যা করে সার্বিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা বসনিয়ান-সার্ব বাহিনী।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জার্মানি এবং রুয়ান্ডার পক্ষ থেকে প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হয়। বিরোধিতা করে সার্বিয়া ব্যাপক প্রচেষ্টা চালানোর পরও এটি পাশ হয় সদস্যদের ভোটে।
এই প্রস্তাবকে "পলিটিসাইজড" বলে আখ্যা দেন সার্ব রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার ভুসিক।
তার দাবি, এর ফলে পুরো সার্বিয়া এবং সার্ব জনগণের গণহত্যাকারী হিসেবে পরিচিতি তৈরি হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হলো।
"১৯৯৫ সালের স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যার স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস" প্রচলনের পক্ষে ভোট দেয় ৮৪টি সদস্য রাষ্ট্র। প্রস্তাবের বিপক্ষে পড়ে ১৯টি ভোট। আর, ৬৮টি দেশ ভোটদান থেকে বিরত ছিল।
খবরটি ওই গণহত্যায় নিহত আট হাজার পুরুষের স্বজনদের জন্য সন্তোষজনক। বসনিয়ান-সার্ব বাহিনী মানুষগুলোর উপর পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ চালায়।
বসনিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় স্রেব্রেনিৎসায় জাতিসংঘ ঘোষিত "সেইফ এরিয়া" (নিরাপদ স্থান) শান্তিরক্ষীদের তত্ত্বাবধানে ছিল। কিন্তু, সংখ্যায় অপ্রতুল হওয়ায় শান্তিরক্ষীরা বসনিয়ান-সার্ব বাহিনীর সঙ্গে পেরে ওঠেনি।
বসনিয়ান-সার্ব সামরিক কর্মকর্তা রাতকো ম্লাদিচের নির্দেশে বাহিনীর সদস্যরা নারী ও পুরুষদের আলাদা করেছিল। মা, স্ত্রী, কন্যা, বোনদের থেকে সেই যে পরিবারের পুরুষ সদস্যটিকে আলাদা করা হয়েছিল, আর তাদের দেখা মেলেনি।
হত্যায়ই থেমে থাকেনি নৃশংসতা। পরবর্তী সময়টা জুড়ে বসনিয়ান-সার্ব বাহিনীর সদস্যরা নিহতদের গণকবরগুলো পুনরায় খোঁড়ে। গণহত্যাকে ধামাচাপা দিতে দেহাবশেষগুলোকে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয় তারা।
ফলে, একেকজনের শরীরের অংশগুলো বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে পড়ে। ভুক্তভোগীদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে যায়।
ঘটনার ২৯ বছরে বেশিরভাগ পরিবার কিছু না কিছু দেহাবশেষ শনাক্ত করে দাফন করতে সক্ষম হয়েছে। গণহত্যার স্থানটির কাছেই, পোতোক্যারি সিমেট্রিতে কবর দেয়া হয়েছে তাদের। তবে, কোনো কোনো পরিবারকে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
দ্য ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন মিসিং পারসনস্ এর সহায়তায় ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে সাত হাজার ভুক্তভোগীকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। জাতিসংঘের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে একটি বিবৃতি দিয়েছে সংস্থাটি।
দিবসটি ব্যক্তি, পরিবার এবং সম্প্রদায়ের ওপর গণহত্যার স্থায়ী ক্ষতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যার শিকার মানুষগুলোকে স্বীকৃতি এবং শ্রদ্ধা জানানোর ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে থাকবে।"
অবশ্য, সার্বিয়া সরকার বিষয়টিকে একইভাবে দেখছে না।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আলোচনার সময় দেশটির প্রেসিডেন্ট ভুসিক হুঁশিয়ার করে বলেন এই প্রস্তাব পাস হলে তা "প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিতে পারে"।
আরো অনেক গণহত্যা নিয়েই তখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ক্রোয়েশিয়ায় নাৎসি বাহিনীর মিত্র সরকারের শাসনামলে সার্বরা গণহত্যার শিকার হয়েছিল উল্লেখ করে, তার জন্য জাতিসংঘে যে কখনো কোনো প্রস্তাব পাস হয়নি তা মনে করিয়ে দেন মি. ভুসিক।
ওই ঘটনার জন্য সার্বিয়াও এমন একটি গণহত্যার প্রস্তাব নিয়ে আসতে পারতো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মি. ভুসিক দাবি করেন, "স্রেব্রেনিৎসা প্রস্তাবে কোনো সমাধানের ব্যাপার নেই, স্মৃৃতির ব্যাপার নেই বরং এতে নতুন ক্ষত সৃষ্টি হবে, শুধু আমাদের আঞ্চলিক পর্যায়ে নয়, এই পরিষদেও।"