ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২১, নভেম্বর ২০২৪ ২১:৪৩:৫৫ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

কবি নজরুলের জীবন ও সাহিত্য জুড়ে কুমিল্লা

অচিন্ত বাবু

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:৫১ এএম, ২৫ মে ২০২৪ শনিবার

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।  ফাইল ছবি।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ফাইল ছবি।

মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণতূর্য। বাংলা ও বাঙালির অহংকার বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের একদিকে অনন্ত প্রেম, অন্যদিকে বিদ্রোহ। কী কবিতায়, কী গানে, উপন্যাসে, গল্পে সর্বত্রই মানবমুক্তি প্রেমময় বাণী ও দ্রোহের বাণী। দুই-ই ঝঙ্কৃত হয়েছে জাতীয় কবি নজরুলের সৃষ্টিতে। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার পাশাপাশি সামাজিক বৈষম্য, শোষণ, বঞ্চনা, কুসংস্কার, হীনম্মন্যতার বিরুদ্ধেও শিখিয়েছেন রুখে দাঁড়াতে। 

মহাবিদ্রোহের অগ্নিগিরি কালজয়ী প্রতিভার অধিকারী জাতীয় কবির কবিতা, গল্প, গান, প্রবন্ধ, উপন্যাস আমাদের বাংলা সাহিত্য, সঙ্গীত, সংস্কৃতিকে করেছে সমৃদ্ধ। কবি নজরুলের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ কুমিল্লা। নজরুলের রাজনীতি, প্রেম, বিয়ে, ব্যক্তিজীবন, সঙ্গীত ও সাহিত্যের বর্ণিল অধ্যায় জুড়ে রয়েছে কুমিল্লা। কুমিল্লার সাথে কবি কাজী নজরুল ইসলামের রয়েছে আত্মিক সম্পর্ক।

সাম্য, মানবতা, প্রেম ও বিদ্রোহের কবি নজরুল ১৯২১ সাল থেকে ১৯২৩ সালের মধ্যে মোট পাঁচবার এসেছিলেন কুমিল্লায়। আর অবস্থান করেছিলেন ১১ মাস। এই দীর্ঘ অবস্থান ঘিরে নজরুলের জীবনের মোড় ঘুরার প্রেক্ষাপট এই কুমিল্লাতেই সৃষ্টি হয়েছিল। কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড়র ইন্দ্রকুমার সেনের বাড়ি, ধর্মসাগর পাড়, রাণীর দীঘির পাড়, মহেশাঙ্গন, দারোগাবাড়ি, টাউনহল ময়দান, উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ শচীনদেব বর্মনের চর্থার রাজবাড়ি, নবাব বাড়িসহ কুমিল্লার আনাচে-কানাচে এবং কুমিল্লার মুরাদনগরের দৌলতপুরে তার সদর্প পদচারনার অসংখ্য স্মৃতি কুমিল্লাবাসীর হৃদয়ে জেগে আছে।


কবি নজরুলের কুমিল্লায় অবস্থানের পুরো সময়টা ছিল বর্ণিল ও বৈচিত্র্যময়। কবির জীবনে কুমিল্লার মুরাদনগরের খাঁ বাড়ির নার্গিস আসার খানম আর এই শহরের পশ্চিম কান্দিরপাড়ের আশালতা সেন গুপ্তা ওরফে প্রমীলা নামের দুই নারী এসেছিলেন জীবনসঙ্গিনী হয়ে। নার্গিস ও প্রমীলা কবির জীবনে দারুণভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল। এ সময়ে তিনি কুমিল্লায় বসে অজস্র কবিতা ও গান রচনা করেছেন। ১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে কুমিল্লা ঈশ্বর পাঠশালায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তি ও নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। নজরুলকে কেন্দ্র করে কুমিল্লায় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ১৯৪৫ সালের মাঝামাঝিতেই শুরু হয়। দেশ বিভাগের পর কুমিল্লায় ব্যাপকভাবে শুরু হয় নজরুল চর্চা।

কুমিল্লায় কবি নজরুলের অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে। এসব স্মৃতি জাগরুক করে রাখার জন্য কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রী শাখায় ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কবি নজরুল ছাত্রাবাস। ১৯৬২ সালে কান্দিরপাড় থেকে ফরিদা বিদ্যায়তন পর্যন্ত সড়কটির নামকরণ করা হয় নজরুল এভিনিউ। ১৯৭০ সালে কুমিল্লায় নজরুল সাহিত্য চর্চার লক্ষ্যে গঠিত হয় নজরুল ললিতকলা পরিষদ। যা পরবর্তীতে নজরুল পরিষদ নামে রূপান্তরিত হয়। ১৯৮৩ সালে কুমিল্লা শহরের যেসব স্থানে নজরুল বিচরণ ও অবস্থান করেছিলেন সেসব স্থানে টিনের স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়। ১৯৯২ সালে ওইসব স্থানে কবি নজরুলের অবস্থান ও ঘটে যাওয়া ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে পাকা স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়। ওই বছরে কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমীর সামনে নির্মিত হয় শিল্পী উত্তম গুহের তৈরি ‘চেতনায় নজরুল’ স্মৃতিস্তম্ভ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে গবেষণা ও চর্চার জায়গাটি বেগবান করে তুলতে কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নজরুল ইন্সটিটিউট কেন্দ্র।

জাতীয় কবি নজরুলের সামগ্রিক জীবনের অস্তিত্ব নিঃসন্দেহে কুমিল্লা কেন্দ্রিক। নজরুল কুমিল্লার, কুমিল্লা নজরুলের। এই বোধ ও বিশ্বাসের জায়গাটি অনেক সমৃদ্ধ হয়ে ওঠেছে নজরুল প্রেমিদের সাহিত্য চর্চা ও বিভিন্নভাবে কবি নজরুলের অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্যদিয়ে। কুমিল্লায় আজ শনিবার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকীর তিনদিনের অনুষ্ঠানমালার পর্দা উঠবে।