ঢাকা, শুক্রবার ২৯, নভেম্বর ২০২৪ ২৩:৩৮:৫২ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

‘এ মনিহার আমায় নাহি সাজে’ : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪.কম

প্রকাশিত : ১০:০০ পিএম, ২১ জুলাই ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ১২:১৯ পিএম, ২২ জুলাই ২০১৮ রবিবার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ মনিহার আমায় নাহি সাজে, এটা জনগণের। আমার সংবর্ধনার প্রয়োজন নেই। আমি জনগণের জন্য ‍কাজ করতে এসেছি। তাদের জন্য কাজ করছি। এদেশের মানুষের ভাগ্য যেদিন পরিবর্তন হবে, সেদিন নিজেকে সার্থক মনে করবো।

 

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তার সম্মানে আয়োজিত গণসংবর্ধনায় এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী প্রাপ্ত সংবর্ধনা বাংলার মানুষকে উৎসর্গ করেন।


স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তোরণ, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণ, অষ্ট্রেলিয়ায় গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ এওয়ার্ড অর্জন এবং আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ডিলিট ডিগ্রী’ অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই গণসংবর্ধনার আয়োজন করে। জাতীয় সংসদের উপনেতা এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে সম্মাননা পত্র পাঠ করেন। তিনি পরে সেই সম্মাননাপত্র প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন।


এর আগে বিকেল সাড়ে তিনটায় প্রধানমন্ত্রী সংবর্ধনার অনুষ্ঠানের ভেন্যুতে পৌঁছলে দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের জনতা হাত নেড়ে, পতাকা উচিয়ে মুহুর্মুহু শ্লোগানে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান।

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যারা বলে ‘নৌকা ঠেকাও’ তাদের লক্ষ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, তাহলে কি তারা ঐ রাজাকার এবং যুদ্ধাপরাধীদেরই আবার ক্ষমতায় বসাতে চান?’


প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে আবার একটা শ্রেণী রয়েছে যাদের কোন উন্নয়নই চোখে পড়ে না। আবার কেউ কেউ বলেন, নৌকা ঠেকাতে হবে। আমার প্রশ্ন নৌকা কেন ঠেকাতে হবে। নৌকা ঠেকিয়ে কি ঐ রাজাকারদের, যুদ্ধাপরাধীদেরকেই আবার ক্ষমতায় আনবেন?

 

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে যারা মনে করেন প্রবৃদ্ধি অর্জন ভাল নয়, দেশ উন্নয়নশীল হলে ভাল নয়, তাদেরকে আমার সন্দেহ হয়, তারা বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে কি না বা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে কি না। নাকি তারা ঐ স্বাধীনতা বিরোধীদের পদলেহনকারী সেটাই আমার প্রশ্ন।


তিনি বলেন, এই নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার পেয়েছে, এই নৌকায় ভোট দিয়েছে বলে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, এই নৌকায় ভোট দিয়েছিল বলেই স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিল বলেই বাংলাদেশ উন্নত হচ্ছে এবং আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হতে পেরেছি।


তিনি বলেন, আমরা পরমাণু বিদ্যুৎ ক্লাবে পৌঁছাতে পেরেছি। আমরা স্যাটেলাইট যুগে পৌঁছাতে পেরেছি, আজ বাংলাদেশে দারিদ্রের হার ২২ ভাগে নেমে এসেছে এবং দারিদ্রের হার আরো হ্রাস করে বাংলাদেশকে আমরা দারিদ্রমুক্ত করতে পারবো ইনশাল্লাহ।

 

রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামনে বন্যা আসার সময় হচ্ছে। এই শ্রাবণ মাস শেষে ভাদ্র মাসেই আবার পানি আসতে পারে। তখন তারা কি নৌকায় চড়বে না, তাদেরও তো নৌকায় চড়তে হবে। অন্তত রাজনৈতিক নেতা যারা তাদের ত্রান বিতরণ করতে গেলেও নৌকাতেই যেতে হবে। তাহলে নৌকা ঠেকাবেন কেন? নৌকার অপরাধটা কি?

 

তিনি বলেন, যারা নৌকা ঠেকাতে চায় তাদের কাছে সেটাই আমার প্রশ্ন? যারা ঐ সামরিক শাসকদের উচ্ছিষ্ট খেয়ে জীবন ধারণ করেছে বা বড় হয়েছে তাদের মুখেই একথা মানায়। কিন্তু যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তাদের মুখে এ কথা মানায় না।


দেশে গণতন্ত্র নেই বলে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে সরকার প্রধান বলেন, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন আওয়ামী লীগেরই দাবি ছিল। যাতে জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত করতে পারে।


তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর স্থানীয় ও তৃণমূল পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত সাড়ে ৬ হাজারেরও বেশী নির্বাচন-উপনির্বাচন হয়েছে । প্রত্যেকটি নির্বাচনে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত করেছে। গণতন্ত্র যদি দেশে নাই থাকবে, তাহলে মানুষ ভোট দিয়ে এসব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলো কিভাবে।


প্রধানমন্ত্রী এ সময় নির্বাচন ঠেকানোর নামে বিএনপির ভাংচুর, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা এবং নৈরাজ্যের সমালোচনা করে জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, জনগণ প্রতিহত করেছিল বলেই তারা ঘরে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে।


তিনি বলেন, এই দেশ আমরা স্বাধীন করেছি। আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই জনগণ কিছু পায়। দেশের জনগনের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়, তাঁদের অস্তিস্ব টিকে থাকে।


আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ’৭৫ থেকে ‘৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত দেশের মানুষ দেখেছে যে কি হয়েছে। এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। আজকের বাংলাদেশ বিশ্বে যে মর্যাদা পেয়েছে সেখান থেকে দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য।


শেখ হাসিনা বলেন, একটি দেশকে কিভাবে আমরা উন্নত করবো সেই পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। সেই কথা চিন্তা করেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সরকার এই রাজধানী ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট,ঢাকা-দিনাজপুর, ঢাকা-বরিশাল, পায়রাবন্দর সহ বিভিন্নস্থানে বুলেট ট্রেন (দ্রুতগতির ট্রেন) চালু করে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত করা হবে।


আকাশ পথে যোগাযোগ বৃদ্ধির পরিকল্পনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বিমানবহর একেবারে ধ্বংসপ্রাপ্ত ছিল, ইতোমধ্যে নতুন বিমান ক্রয় করা হয়েছে, আরো ৭টা নতুন বিমান আমরা ক্রয় করবো। যা আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করবে। সেই সাথে সৈয়দপুর বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকে আরো উন্নত করবে সরকার বলেন প্রধানমন্ত্রী।


বিএনপি-জামায়াতের শামনামলে ধ্বংস প্রাপ্ত রেলের পুনরুজ্জীবনে সরকার আলাদা মন্ত্রণালয়সহ নতুন নতুন স্থানে রেল যোগাযোগ স্থাপন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, সমগ্র বাংলাদেশে আজ এই সরকার সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি দেশের সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে পায়রা বন্দর পর্যন্ত এবং উত্তরবঙ্গ পর্যন্ত চারলেন করে দেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।


নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে দেশের নদ-নদীগুলোর নাব্যতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নৌ চলাচলের জন্য চ্যানেলগুলো উন্মুক্ত করায়  সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, দেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্নতা অর্জন করেছে এখন জনগণের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই সরকারের লক্ষ্য।


প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা ঘুমান আর বাকি সময় দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করেন উল্লেখ করে বলেন, আমি কোনো উৎসবে যাই না। সারাক্ষণ আমার একটাই চিন্তা-দেশের উন্নয়ন, দেশের মানুষের উন্নয়ন।


জাতির পিতার কাছ থেকে পাওয়া রাজনৈতিক শিক্ষার আলোকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়াই তার লক্ষ্য উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু তনয়া বলেন, জাতির পিতার পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো। প্রতিটি গ্রামকে শহর হিসেবে গড়ে তোলা হবে। প্রতিটি গ্রামের মানুষ সকল নাগরিক সুবিধা পাবে। সেভাবেই আমরা গ্রামের মানুষের অবস্থার উন্নতি করতে চাই।


তিনি বলেন, শিক্ষা-দীক্ষায় সব দিক থেকে বাংলার মানুষ উন্নত জীবন পাবে। ক্ষুধা আর হাহাকার থাকবে না। একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। প্রত্যেকটা মানুষ উন্নত জীবন পাবে।

 

শেখ হাসিনা বলেন, মৃত্যু যখন আসবে তখন মৃত্যু আসবেই। কিন্তু মৃত্যুর আগে আমি মরতে রাজি নই। তার আগে যতক্ষণ জীবন আছে বাংলার মানুষের সেবা করে যাবো।