ঢাকা, শুক্রবার ২২, নভেম্বর ২০২৪ ৮:০৬:০৭ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

বার্লিনে রেকর্ডের রাতে স্পেনের ইউরো জয়

স্পোর্টস ডেস্ক 

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:৫০ এএম, ১৫ জুলাই ২০২৪ সোমবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

দানি ওলমো ফিরিয়ে দিলেন ডেক্লান রাইসের হেড। সঙ্গে সঙ্গে ফেটে পড়লেন উল্লাসে। সবসময় গোল করা তার দায়িত্ব। খেলেন স্ট্রাইকার হিসেবে। কিন্তু ফাইনালে দলের প্রয়োজনে গোলরক্ষক উনাই সিমনের পাশে দাঁড়ালেন। সেখানেই গোললাইন থেকে করলেন দারুণ এক সেইভ। রাইসের হেড ফিরিয়ে দিলেন পাল্টা হেডে। পরমুহুর্তে তার উল্লাসই বলে দিলো, এমন একটা কিছু স্পেনের জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ।  

দানি ওলমোর এমন সেইভের কয়েকমিনিট আগেই স্পেন পেয়ে যায় নিজেদের জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি। 'টাইম ইজ রানিং আউট এন্ড স্পেন ইজ নিয়ারলি দেয়ার!' ৮৬ মিনিটে মিকেল অরায়াথাবালের গোলের পর ঠিক এভাবেই মুহূর্তটাকে বর্ণনা করেছিলেন ধারাভাষ্যকার পিটার ড্রুরি। নিখুঁত ইংলিশ উচ্চারণে বুঝিয়ে দিলেন আরও একটা ইউরো হারের দ্বারপ্রান্তে আছে ইংল্যান্ড। ২০২১ সালে ঘরের মাঠে ইতালির কাছে হারের পর, এবারে জার্মানির বার্লিনে। প্রতিপক্ষ স্পেন! 

২-১ গোলের জয়ে এদিন স্পেন জয় করেছে নিজেদের চতুর্থ ইউরো শিরোপা। নিকো উইলিয়ামস আর মিকেল অরায়াথাবালের গোল তাদের করলো প্রেস্টিজিয়াস এই আসরের রেকর্ড চ্যাম্পিয়ন। কোল পালমারের দুর্দান্ত এক গোল এদিন বৃথা গেল পুরোদমে। টানা ৭ জয় দিয়ে রেকর্ড গড়েই ইউরো জয় করল স্পেন। আর এমন হারে ৫৮ বছর কোনো মেজর শিরোপা ছাড়াই পার করতে হলো ইংল্যান্ডকে। 

অথচ ম্যাচের শুরুর ৪৫ মিনিট দেখে কেউই ধারণা করেননি শেষটা হবে এতই জমাট। দুই দলই খেলতে নেমেছিল ডাবল পিভট নিয়ে। বোঝাই গিয়েছিল ফাইনালে আগ্রাসী হয়ে বিপদ ডাকতে রাজি ছিলেন না লুইস দে লা ফুয়েন্তে বা গ্যারেথ সাউথগেট। প্রথমার্ধ তাই পার হলো সাবধানী ফুটবলে। ইংল্যান্ড অবশ্য আগে থেকেই এমন সাবধানী ফুটবলে অভ্যস্ত। তবে স্পেনের গতিশীল ফুটবলেও আজ এসেছিল ভাটা। লামিনে ইয়ামাল কিংবা নিকো উইলিয়ামসরা খুব একটা এগিয়ে যাননি। ৪৫ মিনিট তাই শেষ হয় গোলশূন্য ড্র-য়ে।

কিন্তু বিরতির পরেই রঙ বদল ঘটে ম্যাচের। কাইল ওয়াকার ভুল করলেন আরও একবার। রাউন্ড অব সিক্সটিনের ম্যাচে তারই পজিশনের ভুলে লিড পেয়েছিল স্লোভাকিয়া। এবারও ঘটল তাই। দানি কার্ভাহালের কাছ থেকে বল পেয়ে লামিনে ইয়ামাল দিয়েছিলেন দুর্দান্ত এক রান। নিজের পজিশন তখনও পুরো আয়ত্বে আনা হয়নি কাইল ওয়াকারের। এগিয়ে এলেন আরও অনেকটা। 

তাতেই ফাঁকা হয়ে যান নিকো উইলিয়ামস। ইয়ামালের পাস থেকে এরপর পিকফোর্ডকে পরাস্ত করেন নিচু এক শটে। মাঝে দানি ওলমোর ফলস রান বোকা বানালো ইংলিশ রক্ষণের সবাইকে। নিকো উইলিয়ামসের কাজটা তাতে হলো আরও সহজ। প্রথমার্ধের ম্যাড়ম্যাড়ে খেলার পর ফাইনালে লিড পেয়ে যায় স্পেন। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটেই হলো গোল।  

মিনিট দুয়েক পরেই আরেকবার গোলের সুযোগ পেয়ে যায় স্পেন। দানি ওলমো দুর্দান্ত এক সুযোগ মিস করেন গোলের বাইরে শট মেরে। ৫৫ মিনিটে গোল করার সহজ সুযোগ হারান স্পেনের অধিনায়ক আলভারো মোরাতা। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করে ইংল্যান্ড। ৬০ মিনিটের মাথায় কেইনকে তুলে নেন সাউথগেট। এরপরেও ম্যাচে ইংলিশরা ফিরে আসতে পারেনি। ৬৭ মিনিটে অলমোর পাস ধরে বক্সে ঢুকে দ্বিতীয় পোস্টে বল রাখার চেষ্টা করেন ইয়ামাল। ঝাঁপিয়ে বল বার করেন পিকফোর্ড। 

৭৩ মিনিটে সমতায় ফেরে ইংল্যান্ড। ডানপ্রান্তে ফাঁকায় বল পেয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন বুকায়ো সাকা। মার্ক কুকুরেয়াকে পেছনে ফেলে বল দিয়েছিলেন বক্সে। ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেও সেই বল বক্সের বাইরে পালমারের উদ্দেশ্যে ঠেলে দেন জ্যুড বেলিংহাম। ফাঁকা অবস্থায় ডিবক্সের বাইরে থেকে জোরালো শটে গোল করেন কোল পালমার। 

বক্সের বাইরে থেকে নেয়া কোল পালমারের সেই শট ঠেকাবার কোনো সাধ্য ছিল না স্পেনের গোলরক্ষক উনাই সিমনের। অবশ্য এর আগেও বেলিংহাম আর সাকারা একাধিকবার ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন। আক্রমণে ধার আনতে নিজেদের সেরা স্ট্রাইকার হ্যারি কেইনকেও উঠিয়ে নেন ইংলিশ কোচ গ্যারেথ সাউথগেট। শেষ পর্যন্ত কাজে এসেছে তার এই বদল। 

৮৬ মিনিটের মাথায় স্পেনকে এগিয়ে দেন পরিবর্ত হিসাবে নামা মিকেল অরায়াথাবাল। বাঁ প্রান্ত ধরে ওঠেন আসরের অন্যতম সেরা তারকা কুকুরেয়া। বল বাড়ান বক্সে। আলতো টোকায় পিকফোর্ডকে পরাস্ত করে গোল করেন অরায়াথাবাল। শেষ পর্যন্ত এই গোলেই নির্ধারণ হয়ে যায় ম্যাচের ভাগ্য। ৮৯ মিনিটে দানি ওলমো অবশ্য ফিরিয়ে দেন ইংল্যান্ডের ম্যাচে ফেরার শেষ আশাও। তাতেই ৫৮ বছরে গড়াল ইংলিশদের শিরোপার অপেক্ষা।