বরিশাল : একমাত্র নারী মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা
সালেহীন বাবু
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০২:৫৯ পিএম, ২৮ জুলাই ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ০১:৪০ এএম, ৩০ জুলাই ২০১৮ সোমবার
ইতিহাস সৃষ্টি করে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথম নারী মেয়র প্রার্থী হয়েছেন ডাক্তার মনীষা চক্রবর্তী। অন্য প্রার্থীদের তুলনায় বয়সের দিক থেকে সবচেয়ে তরুণ তিনি। বরিশালের একমাত্র নারী মেয়র প্রার্থী। ভোটের রাজনীতিতে ডা. মনীষার ভরসার জায়গা এখন দুইটি। এক তারুণ্য দুই নারী।
পেশায় চিকিৎসক হলেও মন তার সমাজ সেবায়। তাই তো বিভিন্ন সময় তিনি এলাকায় ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করেন তিনি। আর তাই শুধু রাজনীতিক নন, চিকিৎসক হিসেবেও এলাকায় পূর্বপরিচিত মনীষা।
বরিশালে মোট ভোটার সংখ্যা ২,৪২,১৬৬ জন। এর মধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যা ১,২০,৭৩০ জন,পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১,২১,৪৩৬ জন। হিসেবে মোট ভোটারের অর্ধেকেই নারী।
মনীষা চক্রবর্তী বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলা কমিটির সদস্য সচিব। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গণসংযোগ, পথসভাসহ বিভিন্ন প্রচারে মাঠে মাঠে ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করছেন। এসব গণসংযোগে মনীষা খুব সংক্ষিপ্তভাবে জনগণের কাছে নিজের বার্তা দিচ্ছেন। এরপর চাইছেন ভোট।
বরিশাল সিটি করপোরেশনে এবার নতুন ভোটার হয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি তরুণ-তরুণী। মনীষা চক্রবর্তী এই তারুণ্যের ওপর আস্থা রাখতে চান। শিক্ষিত তরুণ সমাজ নেতৃত্ব পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখবে বলে তিন মনে করেন। পাশাপাশি নারীদের একটি বড় অংশ তাকে ভোট দেবেন বলে আশা করছেন তিনি। মনীষা মনে করেন যারা পরিবর্তন চান, তারা তাকে বেছে নেবেন।
এদিকে ভোটের দুই দিন আগে প্রচারের শেষ দিন শনিবার নগরের ফকিরবাড়ি রোডে বাসদ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে মনীষা বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা মুখে আচরণবিধি ভঙ্গ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঙ্কার দিলেও বাস্তবে শাসক দলের প্রার্থী প্রথম দিন থেকেই আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটালেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। অথচ অপরাপর প্রার্থীর বেলায় পান থেকে চুন খসলেই নানা হয়রানি করা হয়েছে। এক প্রার্থী সরাসরি ধর্মকে ব্যবহার করলেও তাকে শুধু সতর্ক করেই ক্ষান্ত দিয়েছে।
বাসদ নেত্রীর অভিযোগ, বিভিন্ন এলাকার বস্তিবাসী, রিকশাচালক আমার পক্ষে যারা প্রচার কাজ করছে তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। অনেককেই মারধর করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি তিনি।
‘সরকারদলীয় প্রার্থীর পক্ষে সরকারি কর্মকর্তা, এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়ররা প্রচার অভিযান চালাচ্ছে, যা আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’
নিজের কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানোর দাবিও করেছেন মনীষা। বলেন, ‘আমরা প্রতিটি কেন্দ্রে আমাদের প্রতিনিধি নিশ্চিত করেছি। কক্ষ অনুযায়ী এজেন্টও দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি, তবে যাদের এজেন্ট দেয়া হবে তাদের ভয়ভীতি দেখানোর কারণে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রে টিকে থাকতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’
একটি মহল মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে জানিয়ে মনীষা ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কোনো ধরনের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। আমি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি বসে পড়ার জন্য নয়। আমি জয়লাভের জন্য নির্বাচন করছি। কারণ আমার জয়লাভের ওপর বরিশালের শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের ভবিষ্যত নির্ভর করছে।’
‘আমি কখনোই শ্রমজীবী গরিব মানুষের ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি না। আমার ওপর বিশ্বাস রাখুন, আপনাদের ওপর আমার বিশ্বাস আছে, ভরসা আছে।’
‘যোগ্য, শিক্ষিত, সৎ, দেশপ্রেমিক প্রার্থীকে ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করুন। যাতে আগামী দিনে বরিশাল সিটি করপোরশেন হতে পারে উন্নয়নে, সমৃদ্ধিতে আধুনিক বাসযোগ্য নগরী।’
মনীষা প্রগতিশীল রাজনৈতিক পরিবারের মেয়ে। তার দাদা মুক্তিযুদ্ধে নির্মম ভাবে নিহত হয়েছেন। তার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু সে নিজে ৩৪ তম বিসিএস’-এ সুযোগ-নিয়োগ গ্রহণ করেনি। দেশের প্রতি তাদের পরিবারের অবদান–ভূমিকার কথা বরিশালের সবার জানা। মনীষা তার চিকিৎসা বিদ্যাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ না করে, সেবা হিসেবে নিয়েছেন।
সব দিক থেকে বিবেচনা করলে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনীষা হতে পারেন নতুন সাফল্য।