ট্রাম্পের আক্রমণ সত্ত্বেও সমর্থন বাড়ছে কমলার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১০:২৭ এএম, ১৯ আগস্ট ২০২৪ সোমবার
সংগৃহীত ছবি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে আবারও আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তা সত্ত্বেও ব্যাটলগ্রাউন্ড হিসেবে পরিচিত অঙ্গরাজ্যগুলোতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলার সমর্থন বাড়ছে। নতুন জনমত জরিপে এমন চিত্রই উঠে এসেছে, যা ট্রাম্প শিবিরের জন্য উদ্বেগের বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
গতকাল শনিবার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য পেনসিলভানিয়ায় এক সমাবেশে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বক্তব্য দেন।
সমাবেশে কমলাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন ট্রাম্প। কমলার হাসি নিয়ে উপহাস করেন এবং তাঁকে ‘কমিউনিস্ট’ ও ‘পাগল’ আখ্যা দেন।টাইম ম্যাগাজিনের সর্বশেষ প্রচ্ছদে ছাপা কমলার ছবি নিয়েও বিদ্রুপ করেন ট্রাম্প।
তিনি বলেন, ‘আমি দেখতে তাঁর চেয়ে অনেক ভালো।’ তবে কমলার উদ্যমী প্রচারণায় উদ্বিগ্ন রিপাবলিকান ও ট্রাম্পের উপদেষ্টারা বরাবরই তাঁকে ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করে আসছেন। তাঁদের আশঙ্কা, নভেম্বরের নির্বাচনে জিততে সিদ্ধান্তহীন ও স্বাধীন ভোটারদের (মধ্যপন্থী ভোটার) সমর্থন প্রয়োজন ট্রাম্পের। কিন্তু কমলাকে ব্যক্তিগত আক্রমণের ফলে এসব ভোট হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে।
তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজের জনতুষ্টিবাদী ও দ্বন্দ্বমূলক অবস্থান থেকে সরে আসার কোনো ইঙ্গিত দেননি; বরং একের পর এক ব্যক্তিগত আক্রমণ করে গেছেন কমলাকে।
সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, ‘লোকজন বলে, খারাপ ভাষা ব্যবহার করবেন না। দয়া করে লোকজনকে বোকা ডাকবেন না। দয়া করে তাঁকে (কমলা) পাগল ডাকবেন না। আর আমি বলছি; কিন্তু তিনি তো পাগল।
’
গত ২১ জুলাই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে যাওয়ার পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই নাটকীয়ভাবে পাল্টে গেছে। কমলা লড়াইয়ে চলে আসার পর কোণঠাসা ডেমোক্র্যাট শিবিরে উৎসাহ-উদ্দীপনা অনেকাংশে বেড়েছে।
গতকাল রবিবার ওয়াশিংটন পোস্ট-এবিসি-ইপসস পরিচালিত জনমত জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের চেয়ে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছেন কমলা।
মার্কিন গণমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা কলেজ গত শনিবার একটি জনমত জরিপ প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, যে চারটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্যে বাইডেনকে সহজেই হারানোর সম্ভাবনা ছিল ট্রাম্পের, সেসব অঙ্গরাজ্যে সমর্থনের দিক থেকে এখন কাছাকাছি অবস্থানে আছেন ট্রাম্প ও কমলা।
জরিপে বলা হয়েছে, অ্যারিজোনা ও নর্থ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন কমলা। আর নেভাডা ও জর্জিয়ায় কাছাকাছি অবস্থান করছেন। তাই ট্রাম্প শিবিরের দুশ্চিন্তা বাড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এর আগে স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ‘ফ্রাকিং’ নিষিদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন কমলা। যদিও এখন কমলার প্রচারশিবির বলছে, তিনি ওই নিষেধাজ্ঞায় সমর্থন দেবেন না। তা সত্ত্বেও পেনসিলভানিয়ার সমাবেশে বিষয়টি নিয়ে কমলাকে আক্রমণ করেন ট্রাম্প। ভূগর্ভস্থ তেল ও গ্যাস উত্তোলনের একটি পদ্ধতির নাম ‘ফ্রাকিং’। পেনসিলভানিয়ায় ‘ফ্রাকিং’ একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প।
কার্যত নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যকে ট্রাম্প ও কমলা—উভয়ই খুব গুরুত্ব দিচ্ছেন। কারণ এই ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্যের ভোটের ফলাফলই গত কয়েকবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে নির্ণায়ক ভূমিকা রেখেছে। ২০১৬ সালে পেনসিলভানিয়ায় মাত্র ৪৪ হাজার ভোটে জেতেন ট্রাম্প। অন্যদিকে ২০২০ সালে এই অঙ্গরাজ্যে ৮০ হাজার ভোটে ট্রাম্পকে পরাজিত করেন বাইডেন।
গত সপ্তাহের নিউ ইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা কলেজের পৃথক জরিপে বলা হয়েছিল, পেনসিলভানিয়া, মিশিগান ও উইসকনসিনে ট্রাম্পের চেয়ে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছেন কমলা।
আজ সোমবার শিকাগোতে ডেমোক্র্যাট পার্টির জাতীয় সম্মেলন শুরুর কথা। চার দিনব্যাপী এই সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ শীর্ষ ডেমোক্র্যাট নেতাদের। সম্মেলনের শেষ দিন আগামী বৃহস্পতিবার দলের আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন গ্রহণের আগে ভাষণ দেওয়ার কথা কমলার।
এই সম্মেলনে যোগ দিতে শিকাগো যাওয়ার আগে গতকাল রবিবার পেনসিলভানিয়ার পিটসবার্গে বাসে প্রচারণা চালানোর কথা ছিল কমলার।
এদিকে গাজা যুদ্ধে বাইডেন প্রশাসনের সমর্থনের প্রতিবাদে ডেমোক্র্যাটদের সম্মেলনের প্রত্যেক দিন শিকাগোতে হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সূত্র : এএফপি