শুভ জন্মদিন সোনালী দিনের স্বপ্নীল অভিনেত্রী ববিতা
সালেহীন বাবু
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০১:৪০ এএম, ৩০ জুলাই ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ০৭:৩২ পিএম, ২ আগস্ট ২০১৮ বৃহস্পতিবার
আজ ৩০ জুলাই কিংবদন্তী চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ববিতার জন্মদিন। ঢাকাই ছবির স্বর্ণালী দিনের এই নায়িকা সোমবার পা রাখলেন ৬৫ বছরে। শুভ জন্মদিন।
গেল বছর ড্রিম গার্লকে সবাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেও এবার অবশ্য সে সুযোগ নেই। কারণ এই বিশেষ দিনটি ছেলে অনিকের সাথে উদযাপন করতে ইতিমধ্যে কানাডায় রয়েছেন ববিতা।
পরিবার ও কাছের মানুষের কাছে ববিতার পরিচিতি ফরিদা আক্তার পপি নামে। চলচ্চিত্রজগতে শুরুর দিকে তার নাম ছিল ‘সুবর্ণা’। জহির রায়হানের ‘জ্বলতে সুরজ কে নিচে’ ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে তার নাম হয়ে যায় ‘ববিতা’। সেই থেকে এখনো ববিতা নামেই দেশ-বিদেশের মানুষের ভালোবাসা কুড়িয়ে চলেছেন তিনি।
১৯৫৩ সালের ৩০ জুলাই বাগেরহাট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই অভিনেত্রী। বাবা-মা চেয়েছিলেন, তাদের মেয়ে যেন বড় হয়ে চিকিৎসক হন। কিন্তু মেয়েটি সেদিকে না যেয়ে বড় বোন সুচন্দার অনুপ্রেরণায় চলচ্চিত্রে নাম লেখান। ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী পপি (ববিতার ডাক নাম) ১৯৬৮ সালে ‘সংসার’ ছবিতে রাজ্জাক ও সুচন্দার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবির নির্মাতা ছিলেন জহির রায়হান। ছবিটি মুক্তি পায়নি।
তারপর জহির রায়হান ববিতাকে নিয়ে ‘জ্বলতে সুরুজ কা নিচে’ নামে একটি উর্দু ছবির কাজ শুরু করেন। মাঝপথে থেমে যায় এই ছবিটিরও কাজ। এরপর জহির রায়হান রাজ্জাক ও ববিতাকে নিয়ে তৈরি করেন চলচ্চিত্র ‘শেষ পর্যন্ত’। আর এটিই ছিল ববিতার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র। তারপর থেকেই ঢাকাই ছবিতে এই নক্ষত্রের উত্থান পালা শুরু।
ববিতা সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রশংসিত হন। তিনি পরপর তিন বছর একটানা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নিয়ে রেকর্ড করেন। ‘অশনি সংকেত’ চলচ্চিত্রে ‘অনঙ্গ বউ’ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি বেঙ্গল ফ্লিম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সর্বভারতীয় শ্রেষ্ঠ নায়িকার পুরস্কার পান।
এছাড়াও সরকারি এবং বেসরকারি অসংখ্য পুরস্কার তিনি লাভ করেছেন। এজন্য তাকে ‘পুরস্কার কন্যা’ বলা হয়। তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সবচেয়ে বেশিবার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করেছেন।
ববিতা অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে অশনি সংকেত, রামের সুমতি, নিশান, মন্টু আমার নাম, প্রতিজ্ঞা, বাগদাদের চোর, লাভ ইন সিঙ্গাপুর, চ্যালেঞ্জ, হাইজ্যাক, মায়ের জন্য পাগল, টাকা আনা পাই, স্বরলিপি, তিনকন্যা, লটারী, শ্বশুরবাড়ি, মিস লংকা, জীবন সংসার, লাইলি মজনু, বসুন্ধরা, গোলাপী এখন ট্রেনে, নয়নমনি, সুন্দরী, অনন্ত প্রেম, লাঠিয়াল, এক মুঠো ভাত, মা, ফকির মজনু শাহ, জন্ম থেকে জ্বলছি, বড় বাড়ির মেয়ে, পেনশন, দহন, চন্ডীদাস ও রজকিনী, দিপু নাম্বার টু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
একজন অভিনেত্রী হিসেবে ববিতা উপলদ্ধি করেন অভিনয় শিল্পীদের অর্ন্তনিহিত কষ্টগুলোকে। এবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬’ পদক নিয়ে সবাই যখর আবেগ আপ্লুত তখন দৃপ্ত ববিতা ব্যক্ত করেন অভিনয় শিল্পীদের কষ্টের কথা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন অনুষ্ঠানে উপস্থিত। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ববিতা বলেন, ‘একজন শিল্পী নিজের কথা ভুলে হাসি-কান্না সারাজীবন সবাইকে মুগ্ধ করে যান। কিন্তু এই শিল্পীরা জীবনের শেষ সময় এসে খাবার, চিকিৎসার জন্য অসহায় হয়ে পড়েন। আমি তাদের জীবনের শেষ বেলায় এসে বাসস্থান ও শিল্পীদের জন্য চিকিৎসা ও স্বল্পমূল্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য আপনার (প্রধানমন্ত্রী) নিকট আবেদন করছি।’ একজন অভিনয়শিল্পী কতটা বড় মন-মানসিকতার অধিকারী হলে দীপ্ত কণ্ঠে চিরসত্য কথা সবার সামনে বলতে পারেন। ববিতার কাছে চলচ্চিত্রের সবাই একটি পরিবারের মত। এই পরিবারের কারও কষ্ট হলে তার বেদনা ববিতাও পান। এই বক্তব্যে চিরঞ্জীব অভিনেত্রী তারই প্রমাণ রাখলেন।
জীবনের প্রাপ্তিতে ববিতা কখনও ফলাফল খোজেননি। বরং মানুষের নি:স্বার্থ ভালবাসাকেই জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন বলে মনে করেন তিনি। আজ জন্মদিনে উইমেননিউজ২৪.কম পরিবারের পক্ষ থেকে এই মহৎ শিল্পীর জন্য রইলো প্রাণঢালা অভিনন্দন ও ভালোবাসা।