ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৯, সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:০৮:৪৪ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

মাদার তেরেসার ১১৪তম জন্মদিন আজ 

অনলাইন ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:৫৭ পিএম, ২৬ আগস্ট ২০২৪ সোমবার

মাদার তেরেসা

মাদার তেরেসা

মানবতার প্রতীক মাদার তেরেসার ১১৪তম জন্মদিন আজ ২৬ আগস্ট। তিনি তার মানবিক নানাবিধ কাজের জন্য সারাবিশ্বে ‘মাদার তেরেসা’ নামে পরিচিত। ১৯১০ সালের আজকের দিনে অটোম্যান রাজ্যের ইউস্কুবেতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার প্রকৃত নাম অ্যাগনেস গঞ্জা বোজাক্সিন।

মাদার তেরেসা আলবেনীয় বংশোদ্ভুত। তার বাবার নাম নিকোলো এবং মায়ের নাম ছিল দ্রানা বয়াজুর। তার বাবা নিকোলো ছিলেন রাজনীতিবিদ। মাত্র ৮ বছর বয়সে তিনি বাবাকে হারান। তারপর তার মা তাকে রোমান ক্যাথলিক আদর্শে পালন করেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি সন্ন্যাস জীবনের সিদ্ধান্ত নেন এবং ১৮ বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করেন। এরপর তিনি একটি ধর্মপ্রচারক হিসেবে তার কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি একজন ভারতীয় ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী হন। 

কর্মজীবন: অ্যাগনেস গঞ্জা বোজাক্সিন প্রথমে আয়ারল্যান্ডের রথফার্নহামের লরেটো অ্যাবেতে ইংরেজি ভাষা নিয়ে পড়তে যান। ১৯২৯ সালে তিনি ভারতে আসেন এবং৩১ একজন নবদীক্ষিত হিসেবে তার কাজ শুরু করেন। ১৯৩১ সালের ২৪ মে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে সন্ত ‘মাদার তেরেসা’ নাম গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি কলকাতার একটি কনভেন্ট স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৩৭ সালে তার এই শপথ চূড়ান্ত হয়।

স্কুলে পড়ানোর সাথে সাথে কলকাতাবাসী দরিদ্র মানুষদের জন্য তার হৃদয় উদ্বিগ্ন হতে শুরু করে। ১৯৪৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তিনি ধর্মীয় নির্জনবাসের জন্য দার্জিলিং যান। এর ফলস্বরূপ তিনি এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা লাভ করেন। যাকে পরবর্তীকালে তিনি ‘আহ্বানের ভেতর আরেক আহ্বান’ নামে আখ্যা দেন। 

১৯৪৮ সালে তিনি কলকাতায় অবস্থিত দরিদ্র শ্রেণির মানুষদের মাঝে ধর্মপ্রচার শুরু করেন। এক্ষেত্রে তিনি পরিধান করেন নীল পাড় দেওয়া সাদা শাড়ি। তারপর ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করে মতিঝিলে একটি স্কুল স্থাপনের মধ্য দিয়ে তার কাজ শুরু করেন। এরপর বস্তি এলাকার ক্ষুধার্ত ও নিঃস্ব লোকজনকে সাহায্য করার জন্য তিনি এগিয়ে আসেন। প্রথমে তার গরীব ও ক্ষুধার্তদের খাবার জোগাড়ের জন্য তিনি ঘরে ঘরে ঘুরতেন, খাবার জোগাড় করতেন। 

এরপর ১৯৫০ সালে ‘ডায়োসিসান ধর্মপ্রচারকদের সংঘ’ করার জন্য ভ্যাটিকানের অনুমতি পান। এটিই পরবর্তীতে ‘মিশনারিস অফ চ্যারিটি’ হিসেবে পরিচিতি পায়। তেরেসা এই চ্যারিটি শুরু করেছিলেন মাত্র ১৩ জন সদস্য নিয়ে। বর্তমানে এখানে ৪০০০ জনেরও বেশি সন্ন্যাসিনী রয়েছেন। এখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শরণার্থী, বিভিন্ন রোগাক্রান্ত মানুষ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, দুর্যোগগ্রস্থ, মানুষদের চিকিৎসাসহ দেখাশোনা করা হয়। ১৯৫২ সালে তিনি কলকাতায় প্রথম একটি আশ্রয় ও সেবা কেন্দ্র গড়ে তোলেন। এছাড়াও একটি পরিত্যাক্ত হিন্দু মন্দিরকে ‘কালীঘাট হোম ফর দ্য ডাইয়িং’ এ পরিবর্তিত করেন যা ছিল একটি দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র। এটিই ‘নির্মল হৃদয়’ নামে পরিচিত।

এরপর তিনি কুষ্ঠরোগীদের জন্য ‘শান্তি নগর’ নামে একটি সেবা কেন্দ্র খোলেন। ১৯৫৫ সালে তার সঙ্ঘের শিশুদের জন্য তিনি ‘নির্মল শিশু ভবন’ নামে একটি ভবন স্থাপন করেন। এছাড়াও ভারতের প্রায় সর্বত্র তিনি প্রচুর দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র, এতিমখানা, শরণার্থী শিবির প্রতিষ্ঠা করেন।

আন্তর্জাতিক কাজ: ১৯৬৫ সালে প্রথম ভারতের বাইরে ভেনেজুয়েলায় তিনি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করেন। এরপর ক্রমে ক্রমে তানজানিয়া, রোম, অস্ট্রিয়াতেও আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলেন তিনি। ১৯৭০ সালে এশিয়া, আফ্রিকা, আমেরিকা ও ইউরোপে এর শাখা খোলা হয়। তিনি মনে করতেন, ‘কষ্টের মাধ্যমেই প্রভু যীশুর কাছে যাওয়া সম্ভব’। 

১৯৮২ সালে বৈরুত অবরোধের সংকটের সময় হাসপাতালে আটকে যাওয়া ৩৭ জন শিশুকে উদ্ধার করেন। সেসময়ে ইউরোপের অনেক দেশে ধর্মপ্রচার নিষিদ্ধ থাকলেও ১৯৮০ তে তার প্রভাব অনেক কমে যায় যার ফলে তিনি তার চ্যারিটির কাজ পূর্ব ইউরোপে শুরু করেন এবং তা সফল হয়। এইসময়েই গর্ভপাত ও বিবাহবিচ্ছেদের বিরুদ্ধে তিনি সরব হন। এই কারণে তাকে অনেক সমালোচিত হতে হয়।

১৯৯১ সালে তিনি তার জন্মস্থান আলবেনিয়াতে আসেন এবং সেখানে ‘মিশনারিস অফ চ্যারিটি ব্রাদার্স হোম’ স্থাপন করেন। ১৯৯৬ সালের মধ্যে মাত্র ১২ জন সদস্যের সাহায্যে তিনি পৃথিবীর প্রায় ১০০ টি দেশে মোট ৫১৭ টি ধর্মপ্রচার অভিযান চালান। ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চ্যারিটির প্রায় ১৯টি শাখা সক্রিয় ভাবে কাজ করা আরম্ভ করে।

২০১৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তাকে ভার্টিক্যান সিটির সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে ‘সন্ত’ উপাধি দেওয়া হয়।

পুরষ্কার ও সম্মান: ১৯৬২ সালে তিনি পদ্মশ্রী ও রামন ম্যাগসেসে পুরস্কার পান। ১৯৬৯ সালে জওহরলাল নেহেরু পুরস্কার পান। ১৯৭১ সালে শান্তি পুরষ্কার, ১৯৭৩ সালে টেম্পলেটন পুরস্কার, ১৯৭৫ সালে আলবার্ট সেটজার আন্তর্জাতিক পুরস্কার, ১৯৭৬ সালে পাসিম ইন টেররিস পুরস্কার, ১৯৭৮ সালে বালজান পুরস্কার, ১৯৭৯ সালে প্যাট্রনাল মেডেল নোবেল শান্তি পুরস্কার, ১৯৮০ সালে ভারতরত্ন, ১৯৮৫ সালে রাষ্ট্রপতি পদক, ১৯৯৪ সালে রাষ্ট্রীয় স্বর্ণপদক এবং ১৯৯৭ সালে কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল প্রভৃতি পুরস্কার অর্জন করেন।

মৃত্যু: ১৯৮৩ সালে রোম সফরের সময় তিনি প্রথম হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এরপর ১৯৮৯ সালে ফের একই কারণে অসুস্থ হন। ফলে তার দেহে কৃত্তিম পেসমেকার প্রতিস্থাপন করা হয়। ১৯৯১ সালে মেক্সিকোতে থাকাকালীন তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। এরপর থেকে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটে। ১৯৯৬ সালের আগস্টে তিনি ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হন। অবশেষে ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান।