ঢাকা, শনিবার ২৩, নভেম্বর ২০২৪ ৫:০২:১০ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে ২ নারীকে নির্যাতন

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:২১ পিএম, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রবিবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

রাজশাহীতে দুই নারীকে প্রকাশ্যে রাস্তার বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

ছাত্র পরিচয়ে একদল শিক্ষার্থী এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় শুক্রবার দিবাগত রাতে নগরীর চন্দ্রিমা থানায় একটি মামলা হয়েছে। 
এর আগে গত বুধবার সকালে নগরীর আসাম কলোনি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী পরিবার বলছে, স্থানীয় একটি পরিবারের সদস্যের পক্ষে ছাত্র আন্দোলনকারীদের পরিচয়ে আসা একদল ছাত্র তাদের মারধর করেন। ছাত্র পরিচয়ে যারা এসেছিলেন তারা গায়ে সবুজ রঙের কোটি পরেছিল। পরে মারধরের বিষয়টি মীমাংসা করার অজুহাতে দুদিন থানায় মামলা করতে দেওয়া হয়নি। মীমাংসা না হলে শুক্রবার রাতে থানায় মামলা করা হয়।

মামলার বাদির নাম রফিকুল ইসলাম। এজাহারে তার স্ত্রী আকলিমা খাতুন ওরফে শাপলা (৩২) এবং তার ছোট ভাই মিজানুর রহমানের স্ত্রী শারমিন আক্তারকে (৩১) বিদ্যুতের খুটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করার অভিযোগ করা হয়েছে। মামলায় আসামি হিসাবে আসাম কলোনির বাসিন্দা শাহিন, তার স্ত্রী সাহিদা বেগম (৪২), মেয়ে স্নেহা (১৬) এবং মনিরের মেয়ে মুক্তার (৩৫) নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আর ছাত্র পরিচয়ে যারা এসেছিলেন তাদের নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাতনামা লেখা হয়েছে।

রফিকুল ইসলামের পরিবার মূলত ফরিদপুরের বাসিন্দা। গত ৪০ বছর ধরে ব্যবসায়িক সূত্রে তাদের পরিবার রাজশাহীতে রয়েছেন। নগরীর আসাম কলোনিতে তারা একটি বাসার একাংশ কিনে নিয়ে এবং একাংশ ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন। এই বাসার মূল মালিক স্বপন হাসান (৩২)। এই বাড়িতে হামলা করে দরজা-জানালা ভাঙচুর ওই দুই নারীকে বাইরে নিয়ে গিয়ে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। আকলিমা ও শারমিনকে বাঁচাতে গেলে বাড়ির মূল মালিক স্বপন হাসানের ভাবি সোনিয়া খাতুনকেও (২৮) মারধর করা হয়। মামলার এজাহারে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটের অভিযোগও করা হয়। 

বাড়ির মালিক স্বপন হাসান জানান, তারা মামলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু দুছাত্র ফোন করে ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত মীমাংসা করে দেওয়ার সময় নিয়েছিলেন। সন্ধ্যায় তারা এসে সব শুনে বলেছিলেন, হামলাকারীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনকারীদের কেউ নন। তারা এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন।

এরপর রাতে তারা থানায় মামলা করতে যান। থানায় ভুক্তভোগী শারমিন, তার জা আকলিমা ও স্বপন হাসানের ভাবি তাদের নির্যাতনের বর্ণনা দেন। 
শারমিন বলেন, প্রতিবেশী শাহিনের অটোরিকশার গ্যারেজের শব্দদূষণ নিয়ে তার সঙ্গে ঘটনার দিন সকালে একটা ঝামেলা হয়। তারপর তারা ওই ছাত্রদের নিয়ে এসে তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। 

শারমিন বলেন, ‘এই ছাত্ররা এসে আমাদের বাইরে যেতে বলে। বলে, ‘ক্ষমতায় এখন আমরা। ভয়ে আমি আমার জা কে মানুষ ডাকতে বলেছি। শুনে ওরা বলল, ‘মানুষ ডাইকি কী করবে, শেখ হাসিনাকেই আমরা গদি থেকে নামাইছি। তোর জা মানুষ ডাইকে কী করবে। ছাত্রদের কিছু করতে পারবে? তোর কোন বাপ আছে নিয়ে আয়।’ আমি বললাম তোমরা না ছাত্র। আমি তোমাদের মায়ের মতো। তখন ধমক দিয়ে বলল, ‘এই চুপ!’ সানিয়া ভাবি (বাড়িওয়ালার ভাইয়ের স্ত্রী) ওদের অনুরোধ করে বললেন, ‘তোমরা একটু থামো বাবা, ওরা বাচ্চাদের একটু খাওয়াচ্ছে।’ ওরা বলল, ‘খাওয়াচ্ছে? এক মিনিট সময় দিলাম। এক মিনিটের মধ্যে বের না হলে আমরা ভাঙচুর করব। ওদের মারধর করব।’ তখন আমরা ভাবিকে বাইরে রেখে দরজা বন্ধ করে দিয়েছি। ওরা ভাবিকে মাটিতে ফেলে নির্যাতন করে। এক মিনিট পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দরজা ভেঙে আমাদের দুই জা কে টেনে হেঁচড়ে বাইরে বের করে বিদ্যুতের খাম্বার সঙ্গে বেঁধে লাঠি দিয়ে পেটাতে লাগল।

স্বপন হাসান জানান, সেই দিনও থানায় মামলা করার সময় ওলিউল্লাহ নামের এক ছাত্র পরিচয় দিয়ে আবার মীমাংসা করে দেওয়ার কথা বলে মামলা না করার জন্য অনুরোধ করেন। তার কথা মতো সেই রাতে রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে তারা চলে আসেন। 
নগরীর চন্দ্রিমা থানার ওসি মো. ইসমাইল হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ছাত্র পরিচয়ে আসা হামলাকারীদের এজাহারে নাম না থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্যাতিতরা ছাত্রদের পরিচয় দিতে পারেননি। তাই তাদের অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে রাখা হয়েছে।