বাংলাদেশে বর্ষাকালে যে সব ফুল ফােটে
অনু সরকার
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১০:৪৬ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সোমবার
ফাইল ছবি।
রিমঝিম বৃষ্টিতে তখন নাগরিক জীবনে ফুল যদি কিছুটা মুগ্ধতা ছড়িয়ে বেড়ায় তাতে ক্ষতি কি? মুখগোমড়া কাজল-কালো আকাশ, থাকবে হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টি পড়ার শব্দ। আর বনে-বাগানে সুগন্ধে মাতোয়ারা করা ফুল। বর্ষা ঋতুর আগমনী গান বেজে ওঠে শাখায় শাখায় কদমফুলের উল্লাসে।
কাজলকালো আকাশের কারণে বর্ষায় সাদা ফুলের আসনটা অন্যরকম। বর্ষার জলে সাদা ফুলের পবিত্রতা আরও দ্বিগুণ হয়ে ওঠে। ছাদবাগান বলুন কিংবা বারান্দায় বলুন অথবা নিজের ঘরেই রাখুন, বর্ষায় সাদা ফুলের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। এই পবিত্রতা ও স্নিগ্ধতাকে স্বাগত জানানোর জন্যই জানা প্রয়োজন বর্ষার সাদা ফুলদের।
আজকাল নগরের অনেকেই ফুল চেনেন না। গাছ দেখলে তা শনাক্ত করতে পারেন না। অথচ কত সহজ ও অবলীলায় তা শনাক্ত করা যায়। অথচ প্রকৃতি তার আপন ছন্দে ঠিকই সাদা ফুলকে ফুটিয়ে যায়। আপনার চোখটি কেন ওখানে যায় না। লাইফস্টাইলে কি একটু প্রকৃতির দিকেও তাকানো উচিত না? ভেবে দেখুন।
বর্ষায় যত ফুল ফোটে তার মধ্যে সাদা ফুলের সংখ্যাই বেশি। সাদা ফুলেরা আবার ফোটে রাতে, তার সুগন্ধ বিলিয়ে জানান দেয় যে ওরা এসেছে। রাতে কেন এসব সাদা ফুলেরা ফোটে, সেটাও এক রহস্য! ওদের পরাগায়নের জন্য আকৃষ্ট করতে হয় পতঙ্গদের। রাতে রঙিন ফুলে পতঙ্গদের চোখ পড়ে না, যতটা ওরা দেখতে পায় সাদা ফুলদের। না দেখতে পেলেও ওদের ক্ষতি নেই। ওসব ফুলের সৌরভই পতঙ্গদের কাছে টেনে আনে। আর নিশাচর পতঙ্গেরা সেসব ফুলের পরাগায়ন ঘটায়।
সাদা রঙের সুগন্ধ বিলানো ফুলগুলোর মধ্যে দেখা পাই বেলি, দোলনচাঁপা, কামিনী, সাদা কাঠগোলাপ, মালতি, সুগন্ধি বা অ্যারোমেটিক জুঁই, জুঁই বা যূথী, বকুল, গন্ধরাজ, শ্বেতচাঁপা, শ্বেতরঙ্গন, সুদর্শন বা স্পাইডার লিলি, রজনিগন্ধা ও মেহেদি ফুলের। গন্ধ না থাকলেও দেখা মেলে কাঠ টগর, টগর, চীনা টগর, শাপলা, কুন্দ, শ্বেতকাঞ্চন। এগুলোই বর্ষার শ্বেতবসনা।
তবে শ্বেতবসনাদের মধ্যে যদি সহজেই বারান্দা কিংবা ছাদবাগানে করতে চান তাহলে নিতে তারার মতো পাঁচ পাপড়ির কাঠ টগর। এই ফুল বনে জঙ্গলে হয়। চরকির মতো দেখতে এই ফুল বারান্দায় আনতে না পারলেও চীনা টগর তো আছেই। সমস্যা হলো চীনা টগর এই জাতভাই হয়েও আকারে ছোট।
টগর বাগানে রাখার মজা ঠিক এখানে। গাছ হয় ঝোপালো। আর যখন ফুল ফোটে তখন যেন তারার মেলা বসে। টগর গাছ যদি আবার লাগান তাহলে আরেকটু বড় আকারের ফুল পাবেন। একাধিক সারি পাপড়ির ফুল।
মালতিও লতানো এক ফুল। এখানেও তারার খেল আছে। ছাদবাগানে আরো মজার কিছু ফুলের মধ্যে রয়েছে স্বর্ণচাপা আর শ্বেতচাপা। দুটো প্রায় একই তবে সাদার মধ্যে কেমন মজার খেল দেখুন। স্বর্ণচাপায় হালকা হলদেটে ভাব। আর শ্বেতচাপা নামের মতোই সাদা।
সম্প্রতি আমাদের দেশে অ্যারোমেটিক বা ক্লিমেটিস জুঁই প্রচুর ফোটে। এর ঘ্রাণ বর্ষার ভ্যাপসা ভাব নিমেষেই করে দেয় দূর।
আর যদি একেবারেই ভালো না লাগে তাহলে দোলনচাঁপাও তো আছে। আদা গাছের মতো দেখতে এই উদ্ভিদ আপনার বারান্দায় বেশ মানিয়ে নেবে।
ফুল যদি সঙ্গে রাখেন বর্ষায় আর একদিন ছুটি পেয়ে গেলে বারান্দায় বা ছাদে তাকান। তাহলেই বুঝবেন কবিগুরু কেন লিখেছিলেন, 'আষাঢ় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল/ একলা ঘরের কোণে/ কী ভাবি যে আপন-মনে/ সজল হাওয়া যূথীর বনে/ কী কথা যায় কয়ে/ বাঁধনহারা বৃষ্টিধারা/ঝরছে রয়ে রয়ে।'