ঢাকা, রবিবার ২৪, নভেম্বর ২০২৪ ০:১০:৩২ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

চিনের থ্রি গর্জেস ড্যাম: কমেছে পৃথিবীর গতি 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:৩৯ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ বুধবার

চিনের থ্রি গর্জেস ড্যাম

চিনের থ্রি গর্জেস ড্যাম

এশিয়ার দীর্ঘতম এবং বিশ্বের তৃতীয় দীর্ঘতম নদী চিনের ইয়াংসি। এই নদীর উপরেই গড়ে উঠেছে থ্রি গর্জেস বাঁধ। চিনের ইলিং জেলার সান্ডৌপিং শহরে এই বাঁধ অবস্থিত। জলধারণ ক্ষমতার ভিত্তিতে এই বাঁধ পৃথিবীর বৃহত্তম শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম।

জানা গেছে, প্রায় চল্লিশ হাজার শ্রমিক নিয়মিত কাজ চালিয়ে ১৭ বছর ধরে নির্মাণ করেছে চিনের থ্রি গর্জেস ড্যাম। ১৯৯৪ সালে এই মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০১১ সালে চালু করা হয় বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই ড্যাম। ৩১ মিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করে চিন তৈরি করেছে এই বাঁধ।

২০০৫ সালে আমেরিকার গবেষণা সংস্থা নাসা জানায়, থ্রি গর্জেস ড্যামের বিপুল জলরাশির চাপে আগের চেয়ে কিছুটা নিচু হয়ে গেছে পৃথিবী। শুধু তাই নয়, এই বাঁধের কারণে পৃথিবীর মাঝের অংশ সামান্য ফুলে উঠেছে। এ ছাড়া পৃথিবীর দুই মেরু অঞ্চল চেপে গিয়েছে। ড্যামে আটকে থাকা বিপুল জলের চাপে বদল এসেছে পৃথিবীর আহ্নিক গতির বেগে। ফলে দিনের দৈর্ঘ্য বেড়ে গিয়েছে।

এই বাঁধ চিনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত। আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে এবং নেতৃত্ব দিতে চিন যে কটি বড় পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে, এই বাঁধ নির্মাণ তার মধ্যে অন্যতম। থ্রি গর্জেস ড্যাম পৃথিবীর আহ্নিক গতি থেকে শুরু করে পৃথিবীর আকৃতিতে পরিবর্তন এনেছে।

এশিয়ার সবচেয়ে বড় নদী ইয়াংসি। চিনের পশ্চিম অঞ্চলের পাহাড় বেষ্টিত এই নদী প্রায় পুরো চিনের ভেতর দিয়ে এসে পতিত হয়েছে দক্ষিণ চিন সাগরে। জানা যায়, ১৯১১ সালে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ইয়াংসি নদীর জল বৃদ্ধি পায়। ফলে সৃষ্টি হয় এক ভয়ংকর বন্যা। সেই বন্যার প্রভাবে মৃত্যু হয়েছিল কমপক্ষে দুই লাখ মানুষের।

ঘরবাড়ি হারিয়েছিল লাখ লাখ মানুষ। ১৯৩১ সালে চিনে আবারও এক ভয়ংকর বন্যা দেখা দেয়। এই বন্যার প্রভাব ছিল আরও ভয়াবহ। বন্যাকবলিত হয়ে মৃত্যু হয় প্রায় ৩০ লাখ মানুষের। বন্যার কবল থেকে দেশ এবং দেশের মানুষকে বাঁচাতে এই ব্যায়বহুল প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় চিনা সরকার। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে লেগে যায় দীর্ঘ সময়।

২ কোটি আশি লাখ ইউরিক মিটার কংক্রিট ব্যবহৃত হয়েছে এই বাঁধ নির্মাণে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই পরিমাণ কংক্রিট যদি সুইজারল্যান্ডের মতো দেশে একবার ঢেলে দেওয়া যেত তাহলে দুই ফিট কংক্রিটের নীচে ডুবে যেত সমগ্র সুইজারল্যান্ড। এই ড্যাম এত পরিমাণ জল সংরক্ষণ করে যে এর ফলে পৃথিবী ধীরে ঘুরতে শুরু করেছে। ০.০৬ মাইক্রো সেকেন্ড পর্যন্ত ধীর হওয়ায় পুরো পৃথিবীতে দিনের দৈর্ঘ্য ০.০৬ মাইক্রো সেকেন্ড বেড়ে গেছে।

এই বাঁধের ফলে চিন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা মোকাবিলা করতে পারছে। একই সঙ্গে বিশাল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যাচ্ছে। দেশটি খরা মোকাবিলার প্রয়োজন হলে থ্রি গর্জেস ড্যামের তিনটি জলাধার খুলে দেয়।