ঢাকা, বুধবার ২৩, অক্টোবর ২০২৪ ৯:৩২:৪৫ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

দেশে বাড়ছে প্রবীণের সংখ্যা; প্রয়োজন সুরক্ষা

আইরীন নিয়াজী মান্না

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৮:০৩ পিএম, ১ অক্টোবর ২০২৪ মঙ্গলবার

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

দেশে মানুষের গড় আয়ু বাড়তে থাকায় প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু এই প্রবীণদের সেবায় প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং জনবল তেমন গড়ে ওঠেনি দেশে।

বাংলাপিডিয়ার তথ্যমতে, বাংলাদেশের ২০ শতাংশ প্রবীণ একাকী থাকেন অথবা স্বামী-স্ত্রী এক সঙ্গে থাকেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিক-২০২৩ সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে এক কোটি ৬৪ লাখের বেশি মানুষের বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি। শতকারা হিসেবে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৯.৭ শতাংশ প্রবীণ জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। 

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল বলছে, বাংলাদেশে ২০৫০ সালের মধ্যে, ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা হবে ৩.৬ কোটি এবং তা হবে মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশ। এটি বৈশ্বিক প্রবণতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সময় একজন বাংলাদেশি গড় আয়ু ছিল প্রায় ৪৭ বছর। এই সংখ্যাটি এখন ৭২-এর উপরে।

বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতি দশজন নাগরিকের একজনের বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি হবে। ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি বাংলাদেশকে পৃথিবীর বৃহত্তম বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার একটিতে পরিণত করবে।

এই প্রবীণদের সেবায় সরকারের পক্ষ থেকে বয়স্কভাতা কর্মসূচি, জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা ও পিতামাতার ভরণপোষণ আইন প্রণয়ন, পেনশন সুবিধা দেয়া হলেও তাদের সার্বিক দেখাশোনায় সরকারিভাবে বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে মাত্র একটি।

এছাড়া সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা কিছু বৃদ্ধাশ্রম মিলিয়ে খুব অল্প কিছু প্রবীণের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

প্রবীণদের দেখভালের জন্য প্রশিক্ষিত সেবাদানকারীও তেমন নেই। আর যাও দুয়েকজন পাওয়া যায় তাদের পারিশ্রমিক অত্যাধিক। ফলে অনেকেই তা বহন করতে পারেন না।

প্রবীণদের এভাবে একাকী ও অরক্ষিত হয়ে পড়ার পেছনে অর্থনৈতিক অগ্রগতি, নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যাওয়া এবং গ্রাম ছেড়ে শহর বা দেশের বাইরে অভিবাসনকে অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

কিন্তু সামাজিক এই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নত বিশ্বগুলো প্রবীণদের জন্য যে নতুন-নতুন সেবা-ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, বাংলাদেশে সেক্ষেত্রে সরকারি সুযোগ যেমন সীমিত তেমনি বেসরকারিভাবেও প্রবীণদের নিয়ে খুব বেশি কাজ হয়নি।

বৃদ্ধ বয়সে সেবা দেয়ার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবাদানকারীও নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক তানিয়া রহমান বলেন, ক্রমবর্ধমান প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য বিনিয়োগ না বাড়ালে তাদের নিরাপত্তা অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে।

এক্ষেত্রে বৃদ্ধাশ্রমকে ঘিরে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করছেন।

তানিয়া রহমান বলেন, বৃদ্ধাশ্রমকে এতো নেতিবাচকভাবে দেখা উচিত না। কারণ সবার পক্ষে সেবাদানকারী রাখা সম্ভব না। এখন বৃদ্ধাশ্রমগুলো যদি ডে কেয়ার সেন্টারের মতো হয়, সকাল সন্ধ্যা রাখার ব্যবস্থা থাকে তাহলে এই প্রবীণরা নিরাপদে থাকবেন। কারণ সেখানে চিকিৎসক থাকবে, নার্স থাকবে, এছাড়া নিজেদের বয়সী লোকজনের সাথে তাদের ভালো সময় কাটবে। আবার বাড়ি ফিরে পরিবারের সাথে থাকার সুযোগও হবে।

এক্ষেত্রে সব শ্রেণী এবং পেশার প্রবীণদের কথা চিন্তা করে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা বাড়ানোর ওপরে জোর দিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, হাসপাতাল যেমন সরকারি-বেসরকারি আছে, বৃদ্ধাশ্রমগুলো এমন হতে পারে। যাদের সামর্থ্য আছে তারা দামী প্রাইভেট বৃদ্ধাশ্রমে রাখবে। যারা একদম গরিব, সরকার তাদের জন্য বৃদ্ধাশ্রমের ব্যবস্থা করবে। এ ব্যাপারে ফান্ড গড়ে তুলবে। যাকাতের ফান্ড বা বিত্তশালীরা দান করতে পারে। আসলে পরিকল্পনা করা গেলে সবই সম্ভব।

এছাড়া প্রবীণদের বোঝা না ভেবে তাদের ব্যাপারে আরও দায়িত্বশীল হয়ে উঠতে নীতি ও মূল্যবোধে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলেও মনে করছেন তানিয়া রহমান।

এক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মের সাথে বিশেষ করে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আগে নানা নানী, দাদা দাদীর কাছে গল্প শুনতাম। এখনকার বাচ্চারা আর এমন নেই। তারা ভিডিও গেম খেলে। এই পরিবর্তন মেনে নিতে হবে। প্রবীণরা যেন তাদের সমবয়সীদের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ পান, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।