রাজধানীতে চলছে পূজোর কেনাকাটা
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১০:৫৬ এএম, ২ অক্টোবর ২০২৪ বুধবার
রাজধানীতে চলছে পূজোর কেনাকাটা। ছবি: উইমেননিউজ২৪.কম।
দুর্গাপূজার কেনাকাটায় সরগমর রাজধানীর মার্কেটগুলো। পছন্দমত কেনাকাটা চলছে। চলছে দর কসাকসি। পূজোর কেনাকাটায় সনাতন ধর্মের নারী ও তরুণীরা ভিড় করছেন মার্কেটে। দুর্গাপূজো তাদের ধর্মীয় সবচেয়ে বড় উৎসব। তাই অবশ্যই চাই দামি, শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, রংবেরঙের পোশাক। সেই সঙ্গে রয়েছে শাখা-সিদুর, গহণা আর রকমারী জুতো-স্যান্ডেল কেনার চাহিদা।
তবে ক্রেতারা বলছেন প্রতিটি পণ্যেও দাম আকাশচুম্বী। মিরপুর থেকে ঈদের কেনাকাটা করতে বসুন্ধরা সিটিতে এসেছেন জয়ন্তিকা নন্দি। বললেন, সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিস করে সময়ের অভাবে এখনো কেনাকাটা করতে পারিনি। রাস্তার জ্যামের কারণে মার্কেটে আসতেও ভয় লাগে। কিন্তু কি করবো ফ্যামেলির সব কেনাকাটা আমাকেই করতে হবে। আমার সব কেনাকাটাই বাকি।
শুধু জয়ন্তিকা নন্দি নন, এভাবে ভিড়ের মধ্যে চাপাচাপি করে গত দুদিন ধরে রাজধানীর মার্কেটগুলোতে কেনাকাটা করছেন নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণীর দল।
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির এই অকালেও ধর্মীয় উৎসবকে সামনে রেখে চলছে ক্রয়-বিক্রয়। ব্যবসায়িরা বলছেন, ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে মূলত সব শ্রেণীর ক্রেতাই বেশ কেনাকাটা করে। আর পূজো উপলক্ষে প্রতি বছরই একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর ক্রেতা কেনাকাটা করেন। আমাদেরও সেরকম প্রস্তুতি থাকে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর হাতে বেতনের টাকা চলে এলেই তারা শপিং শুরু করে দেয় উৎসবগুলোতে। রাজধানীর নিউ মার্কেট, চাঁদনীচক, গাউসিয়া, রাপা প্লাজা, বসুন্ধরা সিটি, মৌচাকসহ বেশ কিছু মার্কেট, শপিং মল এবং ফ্যাশন হাউজ ঘুরে দেখা গেছে কেনাকাটা চলছে ভালোই। নতুন ডিজাইনের ও হাল ফ্যাশানের জামা, শাড়ি, পাঞ্জাবি, জুতা, গহণা কিনতে ব্যস্ত ক্রেতারা।
চাঁদনীচকের ময়ূরী ফ্যাশনের বিক্রেতা আব্দুর রহমান বললেন, পূজো এবং ঈদ একই সময়ে হওয়ায় অন্যান্যবারের চেয়ে এবছর বিক্রি ভালো। আশা করছি বাকি সময়গুলোও এমনই কাটবে।
এসব মার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে শাড়ি, গহনা, তরুণ-তরুণীদের পোশাক, প্রসাধন সামগ্রী, জুতা সেন্ডেল, ভেনেটি ব্যাগ ও পার্স, অলংকার ও বিদেশী নানা ব্যান্ডের পারফিউমসহ নানা জিনিস।
বিক্রেতারা বলছেন, এসব মার্কেটে বিভিন্ন রকমের শাড়ি রয়েছে ১০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকায়। মার্কেটগুলোতে মেয়েদের পোশাক বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকায়।
নিউমাকের্ট, গাউছিয়া, চাঁদনিচক, বঙ্গ বাজার, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটে মোটামুটি দামে রুচিশীল জিনিস-পত্র পাওয়া যাচ্ছে বলে সব শ্রেণীর ক্রেতাকেই আকর্ষণ করতে পারে মার্কেটগুলো। এমার্কেটগুলোতে সাড়ে ৩শ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিভিন্ন ধরনের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। মেয়েদের শালোয়ার-কামিজ পাওয়া যাচ্ছে ৫শ থেকে ১৫শ টাকার মধ্যে। এছাড়া রয়েছে ছোট ছেলে মেয়েদের জামা ২শ থেকে ৫শ টাকায়। ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট শাড়ির জন্য বিখ্যাত। এখানে নানা দামের ও নানা ডিজাইন ও মানের মঅড়ি উঠেছে দূর্গাপূজা উপলক্ষে। এখানে শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬ শ থেকে ২৫ হাজার টাকায়। চাইলে আরও দামি শাড়ি পাওয়া যাবে। আছে সোনারগাঁয়ের বিখ্যাত জামদানী শাড়ি। আড়াই হাজার থেকে ১ লাখ টাকা দাম। মিরপুরের জামদানী, কাতান ও বেনারশি শাড়িও রয়েছে বিভিন্ন রঙ ও ডিজাইনের। দাম দেও হাজার থেকে ৭০ হাজার পর্যন্ত।
ঢাকা শহরের নিন্ম মধ্যবিত্ত ও নিন্মবিত্ত আয়ের মানুষেজনের প্রিয় মার্কেট গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম, বঙ্গবাজারসহ বিভিন্ন মার্কেটের ফুটপাতগুলোর ভ্রাম্যমান দোকানগুলো। পূজো সামনে রেখে এসব দোকানগুলোতেও বেশ ভালো বিক্রিবাট্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে মার্কেটগুলোর পাশাপাশি রাজধানীর ফ্যাশান হাউজগুলো গত কয়েকদিনে ফ্যাশন প্রিয় তরুণী ও রমনীদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছিলো। নিজেদের ডিজাইনারের ডিজাইনে তৈরি বিভিন্ন রকম শাড়ি ও সালোয়ার কামিজ থেকে শুরু করে মেয়েদের ফ্যাশনাবল বিভিন্ন গহন, ঘর সজ্জার জিনিস, কুটির শিল্প ও হস্ত শিল্পের নানা বৈচিত্রের পণ্য বিক্রি হচ্ছে। আড়ং, মিনি মাইডাস, প্রবর্তণা, অরণ্য, আর্টিষ্টি, কে-ক্রাফট, নারী মেলা, রঙ, সাদা কালো, আলতামিরা, রিজিয়াস বুটিক, বাংলার মেলা, ঘরে বাইরে, নকসাসহ রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তের বুটিকগুলোতে নতুন ডিজাইনের শাড়ি, শালোয়ার-কামিজ, মেয়েদের ফতুয়া ও পাঞ্জাবি কিনতে ক্রেতার ভিড় ছিলো বেশ।
এসব ফ্যাশান হাউজগুলোতে শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে দেড় হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায়, সালোয়ার-কামিজ ৩ হাজার থেকে ২৫ হাজার, মেয়েদের পাঞ্জাবি ও ফতুয়া পাওয়া যাচ্ছে ৫শ থেকে ৭ হাজার টাকায়।
ক্রেতারা বলছেন দাম অনেক বেশি। বংশাল থেকে ধানমন্ডির বাংলার মেলোয় পূজোর শাড়ি কিনতে এসেছেন স্নিগ্ধা ভৌমিক। তিনি বলেন, এবছর শাড়ির অনেক দাম। গত বছর যে শাড়ি কিনেছি ৩ হাজার টাকায় তা এবছর প্রায় ডাবলের বেশি দাম হাকা হচ্ছে। আমাদের একটি নির্দিষ্ট বাজেট। এর বাইরে যাই কি করে। এতো দাম দিয়ে কিভাবে কিনবো। বাধ্য হয়েই লিষ্ট থেকে অনেক কিছু বাদ দিতে হচ্ছে।