শরৎ উৎসব: সম্প্রীতির সমাজ গড়ার প্রত্যয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১১:৪১ এএম, ৫ অক্টোবর ২০২৪ শনিবার
সংগৃহীত ছবি
কয়েক দিন ধরেই বৃষ্টি। কখনো একটানা, কখনো বা থেমে থেমে। এতে শরৎ আকাশের শোভা ক্ষণিকের জন্য চাপা পড়লেও রূপ-মাধুর্য মুছে যায়নি। বৃষ্টি একটু ছুটি নিলে আকাশ নীলে দিচ্ছে উঁকি সাদা মেঘের ভেলা।
যান্ত্রিক এই শহরের প্রান্তে কোনো নদীতীর বা উন্মুক্ত প্রান্তরে মৃদু বাতাসে দোল খায় রাশি রাশি কাশফুল। হৃদয়ে ভালো লাগার অনুভূতি ছড়ানো এই ঋতুর বন্দনায় সরব হলো শুক্রবার ছুটির দিনের সকালটি।
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলার মঞ্চে বরণ করে নেওয়া হয় প্রিয় এই ঋতুকে। গানের সুরে, নাচের ছন্দে কিংবা কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে প্রকাশিত হয় শরতের প্রতি অপার অনুরাগ।
বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনার সঙ্গে বক্তার কথনে সজ্জিত সে শরৎ উৎসবে হিংসার বিপরীতে ব্যক্ত হয়েছে সম্প্রীতির সমাজ গড়ার আকাঙ্ক্ষা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে উচ্চারিত হয়েছে বৈষম্যহীন স্বদেশ গড়ার প্রত্যয়। সময়ের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে এই উৎসবের আয়োজন করে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী।
সাত সকালে সরোদের সুরে শরৎ উৎসবের সূচনা হয়।
পরিবেশনাটি উপস্থাপন করেন যন্ত্রসংগীত শিল্পী মো. ইউসুফ খান। এরপর মঞ্চে হাজির হয় একঝাঁক শিশু-কিশোর। সীমান্ত খেলাঘর আসরের এই শিল্পীরা কবিগুরুর সৃষ্টির নির্যাসে মেতে ওঠে শরতের বন্দনায়। সবাই মিলে গেয়ে ওঠে—‘আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্র ছায়ায় লুকোচুরি খেলা রে ভাই, লুকোচুরি খেলা/নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা রে ভাই...।’
এরপর গেণ্ডারিয়ার কিশলয় কচি-কাঁচার মেলা পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল ‘শরৎ এলেই দূর আকাশে’।
এ ছাড়া খুদে শিল্পীদের গান ও কবিতার পরিবেশনায় অংশ নেয় সুরবিহার ও শিল্পবৃত্তের ছোট্ট বন্ধুরা।
রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের গীতবাণীর সম্মিলনে শ্রোতার হৃদয় রাঙিয়ে তোলে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। সম্মেলক সুরের আশ্রয়ে দলটি গেয়েছে ‘দেখো দেখো শুকতারা আঁখি মেলে চায়’ ও ‘এ কী অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী-জননী’ শীর্ষক সংগীত। দলীয় সংগীত পরিবেশনায় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী পরিবেশন করে ‘আমার রাত পোহালো শারদ প্রাতে’। নির্ঝরণী সংগীত একাডেমির শিল্পীরা শুনিয়েছেন ‘এসো হে সজল শ্যামল ঘন দেয়া’। সমস্বরের শিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল...’।
শরৎ উৎসবের কথন পর্বে অংশ নেন চারুশিল্পী অধ্যাপক সুশান্ত অধিকারী, বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান ও সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সহসভাপতি অধ্যাপক নিগার চৌধুরী। উৎসবের ঘোষণা পাঠ করেন আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট।
উৎসবের ঘোষণাপত্রে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও আগামীর প্রত্যাশার সম্মিলন ঘটিয়ে মানজার চৌধুরী বলেন, ‘চিরন্তন শারদীয় উৎসবে এবার মিশে আছে বেদনার সুর। আমরা সশ্রদ্ধভাবে স্মরণ করি নবপ্রভাতের স্বপ্নবহ ছাত্র-গণ অভ্যুত্থানে আত্মাহুতি দানকারী শহীদদের, ব্যথিত চিত্তে লক্ষ করি ঘৃণা, অসহিষ্ণুতা ও হিংসার বিস্তারে দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু। বৈষম্যহীন মুক্ত স্বাধীন সম্প্রীতির সমাজের স্বপ্নবহ আন্দোলন জীবনে নানাভাবে পল্লবিত হোক, সেই প্রত্যাশাও মিশে থাকে শরৎ-আবাহনে।’
নিগার চৌধুরী বলেন, ‘শরৎ ঋতু আমাদের মাঠে নতুন ফসলের বার্তা আনে, যা ঘরে তুলে নবান্ন উৎসব করি। শুদ্ধ সুন্দর শুভ্রতায় এই শরৎ সবার জীবনে মঙ্গল বয়ে আনুক।’