শেয়াল ও মুরগি ছানা
আহসান মালেক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৯:২৭ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০২৪ মঙ্গলবার
সংগৃহীত ছবি
গাঁয়ের পুব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট্ট একটা নদী। তার পাড়ঘেঁষা ছোট্ট একটা বন। খুব বেশি গভীর নয়। মোটামুটি বলা যায়। সেখানে বাস করে উদবিড়াল, বেজি, সাপ, খরগোশ, কাঠবিড়ালি, বনমোরগ আর মুরগি। আরো থাকে খ্যাঁকশিয়াল, বাঘডাশা ও বুনো কুকুর। গাছে গাছে দেখা যায় নানা জাতের পাখপাখালি।
ভোরের সূর্যটা পুব আকাশে উঁকিঝুঁকি দিতেই জেগে ওঠে চারপাশ ! জেগে ওঠে নদী পাড়ের জনপদ । পাশের ছোট্ট বন। পাখিদের কিচিরমিচিরে মুখরিত হয় পুরো এলাকা। জেগে ওঠে বনে বসবাসকারী প্রাণীরা । প্রাণ জুড়ানো বাতাস বয়ে যায় ঝিরিঝিরি ।
এমনি এক আলো ঝলমলে দিনে বনমুরগির ছোট্ট ছানাটা গাছের উঁচু ডালে ওদের বাসা থেকে বেরিয়ে এলো বাইরে । উড়ে গিয়ে বসল একটা ডালে ।
সঙ্গে সঙ্গেই মা মুরগি চেঁচিয়ে জানতে চাইল, সাতসকালে কোথায় যাস বাছা ?
- মা দেখে যাও, কী সুন্দর সকাল ! ভোরের সূর্যটা গাছগাছালির ফাঁক গলে কেমন মায়া ছড়াচ্ছে । কী যে ভালো লাগছে !
-ঠিক আছে । বেশি দূর যাসনে বাছা । বিপদ হতে পারে ।
-আচ্ছা মা, যাব না ।
মুরগি ছানাটা একবার এ ডালে আর একবার ও ডালে উড়ে গিয়ে নাচানাচি করছে । আর খুব মজা পাচ্ছে । এই মনোহর সকাল দেখে একসময় মুরগি ছানাটা গুনগুন করে গেয়ে ওঠে---
'ডাকে পাখি
খোলো আঁখি,
দেখো সোনালি সকাল
বহে ভোরেরও বাতাস..............'
খানিক দূরে কেওড়া ঝোপের আড়ালে বসে খ্যাঁকিটা সব দেখছিল। খ্যাঁকি মানে খ্যাঁকশিয়াল ।
মুরগি ছানাটা আপন মনে গাইছে আর পাখা ছড়িয়ে নাচছে ।
খ্যাঁকিটার চোখ চকচক করে ওঠে । জিভে জল আসে ! মনে মনে মতলব আঁটে । যে করে হোক, ছানাটিকে ফুসলিয়ে বাগে আনা চাই । তাহলেই আজ সকালের নাশতা হবে মনের মতো ।
যেই কথা সেই কাজ ।
খ্যাঁকিটা ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেল সামনে । যে গাছের ওপর মুরগি ছানা নেচে নেচে গাইছে, ঠিক সেই গাছের নিচে ।
গাছের নিচে এসে খ্যাঁকিটা মুরগি ছানার দিকে তাকিয়ে খ্যাঁক খ্যাঁক করে হেসে বলল, ওয়াও ওয়া, ওয়াও ওয়া ! ( যেন, হুক্কা হুয়াই ডাকছে ! ) কী দারুণ গানের গলা তোমার ভাগনে ! যেন গলা থেকে মধু ঝরছে ! শুনে মন-প্রাণ জুড়িয়ে গেল ! শাবাশ ! শাবাশ ! এভাবে গাইতে থাকলে একদিন অনেক নাম কুড়াবে তুমি । সবাই বাহবা দিবে ।
ওয়াও ওয়া আর খ্যাঁক খ্যাঁক হাসির শব্দে মুরগি ছানা নিচের দিকে তাকাল । দেখে, বনের পাজি খ্যাঁকশিয়ালটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে । দাঁত বের করে খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসছে ।
আচমকা খ্যাঁকশিয়ালটাকে দেখে ছানাটা ভীষণ ভয় পেয়ে গেল ! মনে মনে ভাবল, পাজিটা আবার কোন কুমতলবে এখানে এসেছে ! বাগে পেলে ঘাড় মটকে খাবে না তো সে !
সামলে নিয়ে মুরগি ছানাটা বলল, কী যে বলছো তুমি মামা ! আমি কী আর তেমন করে গাইতে পারি । এই একটু আধটু গুনগুন করা আর কী । হয় কি না জানি না ।
-হয় হয়, বেশ হয় । নিয়মিত গাইলে আরো ভালো করবে । কী সুরেলা তোমার গলার আওয়াজ । যেন মধু ঝরে !
যতটা পারল ছানাটার সুনাম করতে কসুর করল না খ্যাঁকিটা ! মনে মনে বলল, যে করেই হোক বাগে আনতে হবে ছানাটাকে । এমন নাদুসনুদুস ছানা খাওয়া হয়নি কতদিন । একবার হাতের নাগালে পেলে ঘাড় মটকে মজা করে খাব ।
-কে রে বাছা ? কার সাথে কথা বলছিস ? মা মুরগি বাসা থেকে জানতে চাইল ।
-খ্যাঁকি মামা এসেছে মা । তার সাথেই কথা বলছি ।
-কে, খ্যাঁকশিয়াল ?
-হ্যাঁ, মা ।
-ও কেন এত ভোরে এখানে এসেছে ?
-আমার গান শুনতে ।
-নাকি আর কোনো মতলবে ?
-আমি কী করে বলব মা ।
-ঠিক আছে, আমি দেখছি ।
মা মুরগি বাসা থেকে বাইরে এলো । নিচের দিকে তাকিয়ে খ্যাঁকিকে দেখে বলল, তুমি এসময় এখানে কেন এসেছ ?
- এ পথ দিয়ে যাবার সময় ভাগনের গান কানে এলো । তাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছিলাম বুবু । কী যে মধুর ওর গলার আওয়াজ ! দারুণ সুরেলা ।
-বুঝলাম । এবার আসল মতলবখানা বলে ফেল দেখি ভাই খ্যাঁকি ।
-কী যে বলো বুবু ! মতলব আবার কীসের ! ভাগনের গান মন ছুঁয়ে গেল । তাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছিলাম ।
-তা বেশ করেছ । এবার মানে মানে কেটে পড়ো ।
মা মুরগি শেয়ালটার মতলব বুঝতে পারে । ঠিক তখনই গলা উঁচিয়ে জোরেশোরে হাঁক মারে তিনবার । কুক্কুরুক কুক্ । কুক্কুরুক কুক্ । কুক্কুরুক কুক্ ।
এক নিমেষে অনতিদূর থেকে একটা আওয়াজ ভেসে আসে ঘেউ উ উ উ......!
মা মুরগি আর ছানা কখনো বিপদে পড়লে এভাবেই হাঁক মারে । বাঘাও তাদের বাঁচাতে ছুটে আসে যখন-তখন । ওদের মাঝে দারুণ ভাব ।
খ্যাঁকিটার কান খাড়া হয়ে গেল ওই ডাক শুনে ! বুঝতে তার দেরি হলো না মোটেও, এটা যে বাঘার ডাক ! বাঘা মানে বুনো কুকুর ।
বাঘা ঘেউ ঘেউ করতে করতে তীর বেগে ছুটে আসে । এই না দেখে, খ্যাঁকিটা লেজ গুটিয়ে দিলো ভোঁ দৌড় !
খ্যাঁকিটার পালিয়ে যাওয়া দেখে মা মুরগি বলল, কী হলো চলে যাচ্ছ যে, গান শুনবে না?
-আজ একটু তাড়া আছে বুবু । আরেক দিন এসে শুনব । বলতে বলতেই খ্যাঁকিটা পগারপার !
-তুমি সময়মতো না এলে কী যে হতো বাঘা দাদা ! মা মুরগি কাঁদো কাঁদো গলায় বলে।
-আরে কিছুই হতো না । তবে তোরা সাবধানে থাকিস ।
-তোমার কাছে আবারও ঋণী হয়ে থাকলাম ।
-ঠিক আছে । ঠিক আছে । ভালো থাকিস তোরা । আমি আসছি এবার ।
বিপদ কেটে যেতেই আবার নাচতে নাচতে গান ধরল মুরগি ছানা.......
-ডাকে পাখি
খোলো আঁখি,
দেখো সোনালি সকাল
বহে ভোরেরও বাতাস...