ফেলে দেওয়া কাপড়ে দিনবদলের গল্প
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১২:১৯ পিএম, ১ নভেম্বর ২০২৪ শুক্রবার
সংগৃহীত ছবি
পাবনা পৌর সদরের সাধুপাড়া মহল্লার দেলোয়ারা খাতুনের (৫০) স্বামী মারা গেছেন ১৮ বছর আগে। একটি মাত্র ছেলে তার। তাকেও করিয়েছেন বিয়ে। তার সংসারেও রয়েছে দুটি সন্তান। পাঁচ সদস্যের সংসার চলছিল ছেলের দিনমজুরী করে আনা টাকায়। এমন পরিস্থিতিতে সংসারে আর্থিক সহযোগিতা করতে দেলোয়ারা কাজ শুরু করেন ঝুট কারখানায়। সেখান থেকে তার মাসে আয় হচ্ছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এখন মা ও ছেলের উপার্জনে স্বচ্ছলতা এসেছে সংসারে।
শুধু দেলোয়ারা খাতুনের জীবনেই নয়, এমন গল্প ছড়িয়ে আছে হাজারো হতদরিদ্র মানুষের জীবনে। যাদের অন্ধকার জীবনে আলো ফুটিয়েছে ঝুট কারখানাগুলো। অনেক বৃদ্ধ মানুষও শেষ জীবনে কারো মুখাপেক্ষী না থেকে ঝুট কারখানা থেকে আয় করে নিজের খরচ নিজে চালাচ্ছেন।
ঝুট কাপড় অর্থাৎ গার্মেন্টেসের উচ্ছিষ্ট কাপড় দিয়ে সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে পাবনার হোসিয়ারি শিল্পে। ঝুট কাপড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে গেঞ্জিসহ নানা বস্ত্র। যা সুনাম কুড়িয়েছে বিদেশেও।
পাবনা হোসিয়ারি ম্যানুফ্যাকচারার্স গ্রুপের তথ্য মতে, বর্তমানে ঝুট কাপড় থেকে উৎপাদিত বস্ত্র থেকে বছরে আয় হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। এ শিল্পে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার নারী-পুরুষের।
হোসিয়ারি ব্যবাসায়ীরা জানান, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও গাজীপুরের শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত তৈরি পোশাক কারখানায় প্রতিদিন ফেলে দেওয়া হয় নমুনা ও কাটিংয়ের কাপড়। যা ঝুট কাপড় হিসেবে পরিচিত। সেই ঝুট কাপড় কিনে এনে উন্নতমানের গেঞ্জিসহ নানা বস্ত্র তৈরি করছেন পাবনার হোসিয়ারী ব্যবসায়ীরা।
সাধুপাড়া মহল্লার মামুন হোসিয়ারির মালিক মামুন হোসেন বলেন, ‘প্রথমে ঝুট কাপড় কিনে আনার পর প্রসেসিং ও কাটিং করা হয়। তারপর সেলাই মেশিনে তৈরি হয় গেঞ্জিসহ নানা পরিধেয় বস্ত্র। এরপর বিভিন্ন ডিজাইনের ছাপ দেওয়া শেষে প্যাকেজিং করা হয়। এমনই কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে উৎপাদিত বস্ত্র চলে যাচ্ছে সারা দেশে। সুনাম কুড়িয়ে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও।’
ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য মতে, গত এক দশকে পাবনা সদর উপজেলার আশপাশে বিভিন্ন গ্রামে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা গড়ে তুলেছেন ঝুট কাপড় থেকে গেঞ্জি তৈরির ৫৪২টি হোসিয়ারি কারখানা। প্রতিবছর এসব কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ কোটি পিস গেঞ্জি। যার বাজারমূল্য ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা।
এস এ হোসিয়ারীর স্বত্ত্বাধিকারী আলাল উদ্দিন প্রামানিক বলেন, ‘আমি প্রায় ১৫ বছর ধরে এই ব্যবসা করছি। আমার কারখানায় ৭০ থেকে ৭৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। খরচ বাদে মাসে এক থেকে দেড় লাখ টাকা লাভ থাকে। বলা যায়, ঝুট কাপড়ই আমাদের হোসিয়ারি শিল্পের প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছে। অনেক ব্যবসায়ীর ভাগ্য ফিরেছে এই ব্যবসায়।’
রাসেল গার্মেন্টস-এর মালিক আলহাজ আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আগে গার্মেন্টস চাকরি করতাম। ১০ বছর আগে চাকরি ছেড়ে ২-৩টি সেলাই মেশিন নিয়ে নিজের এলাকায় এসে কাজ শুরু করি। এরপর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন আমার কারখানায় ১০০ মেশিন চলে। ২০০ শ্রমিক কাজ করেন। এখানকার তৈরি পোশাক দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভারত, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছি। সরকার থেকে সুদ মুক্ত ঋণ পেলে এ খাতে আমরা আরো মানুষের কর্মসংস্থান করে দিতে পারবো।’
রুমী খাতুন নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘অনেক বেকার যুবক ও গ্রামের দরিদ্র অসহায় নারীরা কারখানায় কাজ করে মাসে অন্তত ১৫ হাজার টাকা আয় করছেন। ফলে অনেকের সংসারের অভাব চলে গেছে। স্বামী সন্তান নিয়ে সবাই সুখে আছেন। ঝুট কারখানাগুলো আমাদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে।’