ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৪, নভেম্বর ২০২৪ ১২:৫১:৫০ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

চায়ের রাজ্য সিলেট থেকে বেড়িয়ে আসুন

আফসা আহমেদ আলমী

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৪:২৭ পিএম, ১০ নভেম্বর ২০২৪ রবিবার

মালনিছড়া চা বাগান:

মালনিছড়া চা বাগান:

আপনারা যারা ভ্রমণ বিলাসী তাদের কাছে আনন্দ ভ্রমণ হিসেবে পছন্দের স্থান হতে পারে সিলেট। কেন না, সিলেট বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এবং বৃহত্তম চায়ের দেশ। সিলেটকে পর্যটন নগরীও বলা হয়। এ যেন চারপাশে সবুজ আর সবুজের সমারোহ।

সিলেটে দেখার মত আরো উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হচ্ছে : হযরত শাহজালালের মাজার, হযরত শাহ পরানের মাজার, ডিবির হাওর, রাতারগুল সোয়াম ফরেস্ট, বিছানাকান্দি, সাদা পাথর, জাফলং, লালাখাল ইত্যাদি।

কিভাবে যাবেন: ঢাকার সায়দাবাদ, মহাখালী থেকে নিয়মিত বাস ছাড়া হয় সিলেটের উদ্দেশ্যে। আপনার সুবিধা মত স্থান থেকে সাড়ে পাঁচ থেকে সাড়ে সাত ঘন্টায় চলে যেতে পারেন সিলেট।

ঢাকা টু সিলেট ভাড়া:

বাস ভাড়া: নন এসি ৭০০ টাকা এবং এসি ১৩০০-১৫০০ টাকা। উল্লেখযোগ্য পরিবহন গুলোর মধ্যে রয়েছে শ্যামলী, এনা, সৌদিয়া, গ্রীন লাইন ইত্যাদি।

ট্রেন ভাড়া: নন এসিতে ৩৭৫ টাকা এবং এসি ৭১৯ টাকা। ট্রেনে যেতে চাইলে অবশ্যই কয়েকদিন আগে টিকিট কেটে রাখা ভালো।

সিলেটে নামার পর আপনি চাইলে সিলেট বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি লেগুনা রিজার্ভ করে ঘুরে আসতে পারেন মালোনিছড়া চা বাগান, রাতারগুল এবং সাদা পাথর। এর জন্য আপনাকে গুনতে হবে ২২০০ - ২৫০০ টাকা। এছাড়াও আলাদাভাবেও আপনি বিভিন্ন জায়গা ঘুরে আসতে পারেন অটো অথবা সিএনজি ভাড়া করে ।

কোথায় থাকবেন:  সিলেটের ভালো মানের আবাসিক হোটেলে থাকতে চাইলে আপনাকে চলে আসতে হবে হযরত শাহজালাল (রঃ) এর দরগার এলাকায়। এখানে আপনি আপনার সুবিধামতো ৩০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে এসি অথবা ননিএসি রুম পেয়ে যাবেন।

মালনিছড়া চা বাগান: দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশে এসে যদি আপনি অল্প সময় সবুজের গালিচায় হারিয়ে যেতে চান তবে আপনার জন্য মালনিছড়া চা বাগান অনন্য। আমাদের দেশের রপ্তানি আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে চা। বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের বৃহত্তম এবং প্রথম চা বাগান সিলেট জেলায় মালানিছড়া। ইংরেজ সাহেব হার্ডসনের হাত ধরে ১৮৪৯ সালে পনের শ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় এই চা বাগান। সিলেট বিমানবন্দর সড়কের পাশেই মালনি ছড়া চা বাগানের অবস্থান। শ্রীমঙ্গলকে চায়ের দেশ বলা হলেও সিলেটের এই মালনি ছড়া থেকে চায়ের চাষের শুরু হয়। 

এই চা বাগানে আসলে আপনারা চায়ের পাশাপাশি আরও দেখতে পাবেন কমলা, রাবার এবং গোলমরিচের গাছ। এখানে ঢুকতেই আপনার কাছে মনে হবে আপনি যেন এক সবুজের রাজ্যে হারিয়ে গেছেন। মাটি থেকে শুরু করে উঁচু উঁচু টিলা পর্যন্ত শুধু চা আর চা এবং বিভিন্ন প্রজাতির গাছ দিয়ে ভরা। 

কিভাবে যাবেন: সিলেট শহরের যে কোন স্থান থেকে রিকশা অটো রিক্সা সিএনজি ভাড়া করে চলে যেতে পারেন মালোনিছড়া চা বাগান দেখতে। আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সিএনজি করে ১০ মিনিটে এবং রিকশায় ২৫ মিনিটে যাওয়া যাবে।

সাদা পাথর: ভোলাগঞ্জ সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জের একটি পাথর কোয়ারী। এখানে এক পাশে মেঘালয়ের সবুজ পাহাড়। পাহাড়ের উপর থেকে বয়ে আসা ঝরনা এবং অপর পাশে পাথরে নদী এই জায়গাটিকে অপরূপ সুন্দর করে তুলেছে। প্রকৃতি প্রেমিকদের কাছে বর্তমানে এই জায়গাটি একটি পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।ভোলাগঞ্জ থেকে নৌকায় করে যখন আপনি স্বচ্ছ পানির উপর দিয়ে যেতে থাকবেন সাদা পাথরের উদ্দেশ্যে তখন আপনার চোখে পড়বে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য। পাহাড় থেকে ঝরনার স্রোতে নদীতে নেমে আসে সাদা পাথর। এখানকার পানি খুবই স্বচ্ছ এবং ঠান্ডা প্রকৃতির।

কিভাবে যাবেন: সিলেট বাসস্ট্যান্ড থেকে লোকাল বাসে করে জনপ্রতি ৭০ টাকা ভাড়া দিয়ে চলে যেতে হবে ভোলাগঞ্জে। সাদা পাথরের যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাদের ভোলাগঞ্জে গিয়ে নৌকা ভাড়া করতে হবে। নৌকা ভাড়া পড়বে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকার মতো। আপনাকে সময় দেওয়া হবে সাদা পাথর ঘোরার জন্য এবং সর্বোচ্চ তিন ঘন্টা পর নৌকা এসে আবার আপনাদের নিয়ে যাবে ভোলাগঞ্জে। সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জ ৩৫ কিলোমিটার।

রাতারগুল: দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জলভূমি হচ্ছে রাতারগুল। সিলেট থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে। এটি সিলেটের ওয়াইন ঘাটে অবস্থিত। এই জলাভূমির পানি মিঠা।  এই জলাভূমিটি ৩৩২৫.৬১ একর জমি নিয়ে বিস্তৃত। রাতারগুল
সিলেটের সুন্দরবন নামে পরিচিত। বর্ষাকালে বনটি ২০ থেকে ৩০ ফুট পানি নিচে ডুবে যায়। ৭৩ প্রজাতির গাছপালা রয়েছে এই বনে। এর ৮০ ভাগই গাছ দিয়ে ঢাকা। পর্যটকেরা বর্ষায় বন দেখতে যান । বন পরিদর্শনের জন্য ফরেস্ট অফিস থেকে অনুমতি নিতে হয়। নৌকা ভাড়া করে জলাভূমি ঘোরা যায়। রাতারগুলে একটি বিল্ডিং টাওয়ার আছে। এর উপর থেকে পুরো বন দেখা যায়। তবে অনেক দিন যাবত এটি বন্ধ রয়েছে।

টিকেট : ৫৭ টাকা জন প্রতি।
নৌকা ভাড়া:  ৭০০ টাকা।

লালাখাল: লালাখাল সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত। সিলেট থেকে দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। থার্টিন নাম লালাখাল হলেও এই খালটির পানির রং হচ্ছে স্বচ্ছ নীল। যেমনটা মালদ্বীপের পানির রং ঠিক তেমনি, ওখানে গেলে মনে হবে আপনি মালদ্বীপে চলে এসেছেন। শীতকালে এ খালের পানির রং স্বচ্ছ নীল থাকে। সারা বছর পানি ঘোলাটে রঙের থাকে। স্বচ্ছ নীল পানির দুপাশে পাহাড়, সবুজ বন, চায়ের বাগান দেখলে আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে। মনে হবে এখানেই রয়ে যাই প্রকৃতির মাঝে। ৪৫ মিনিটের এক নৌকা ভ্রমণের সাথে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের সাথি হয়ে থাকার জন্য একটা দিন লালাখালে কাটানোই যেতে পারে।

কিভাবে যাবেন: প্রথমেই আপনাকে লালাখাল যাওয়ার জন্য সিলেট শহর থেকে জৈন্তাপুর আসতে হবে। ওসমানী শিশু পার্কের সামনে থেকে জাফলংগামী যে কোন বাসে উঠলে আপনাকে সারিঘাট নামিয়ে দিবে। যেতে সময় লাগে দেড় ঘন্টার মত। এছাড়াও আপনি যদি মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে যান তাহলে ভাড়া নিবে ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা। সিএনজি রিজার্ভ ভাড়া ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত।

কখন যাবেন: লালাখাল যাওয়ার জন্য উপযুক্ত সময় শীতকাল। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে লালাখালি গেলে আপনি নীল জলরাশির স্বচ্ছ লেক দেখতে পাবেন। পানি এতটাই পরিষ্কার থাকে যে নদীর তলদেশ পর্যন্ত দেখা যায়।

সতর্কতা: সাঁতার না জানলে পানিতে নামবেন না। কারণ লালাখালির কিছু কিছু জায়গায় পানি অনেক গভীর।