ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৪, নভেম্বর ২০২৪ ২২:২৬:৩৫ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

জরায়ু ক্যানসারের টিকা (এইচপিভি) কেন গুরুত্বপূর্ণ? 

স্বাস্থ্য ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:০৫ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০২৪ সোমবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

নারীদের যেসব ক্যানসার হয়, তার মধ্যে তৃতীয় জরায়ুমুখের ক্যানসার বা সার্ভিকাল ক্যানসার। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে এই ক্যানসারের প্রকোপ ৮০ শতাংশ। জরায়ু ক্যানসার এড়ানোর জন্য জনসচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক বয়সে এইচপিভি টিকা (ভ্যাক্সিনেশন) গ্রহণের মাধ্যমে জরায়ু ক্যানসারের ঝুঁকি কমানো যায়।

এই টিকাটি এইচপিভি ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট ক্যানসার যেমন সার্ভিকাল, অ্যানাল, ভ্যাজাইনাল ও ভালভার প্রিক্যানসার (অস্বাভাবিক কোষ থেকে যে ক্যানসার হতে পারে) থেকে রক্ষা করতে পারে।

জরায়ু ক্যানসার কী? 

জরায়ুর ক্যানসার বলতে জরায়ু মুখের ক্যানসারকে বোঝানো হয়। এটি নারীদের প্রজনন তন্ত্রের একটি অংশ। জরায়ুর মুখে সৃষ্ট এই ক্যানসার ধীরে ধীরে শরীরের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সাধারণত ৩০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের এই ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এর সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো HPV বা হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস।ভাইরাসটি সাধারণত যৌনবাহিত। যৌন মিলনের ফলেই এটি নারীর শরীরে প্রবেশ করে।

জরায়ু ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে যেসব কারণে

অল্প বয়সে বিয়ে অথবা যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া
অল্প বয়সে সন্তান প্রসব
ঘন ঘন এবং অধিক সন্তান প্রসব
একাধিক যৌনসঙ্গী
জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি হিসেবে দীর্ঘদিন পিল খাওয়া এবং কনডম ব্যবহার না করা

সাধারণত নিম্নবিত্তদের মধ্যে এই ক্যানসারের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। 

জরায়ু ক্যানসারের লক্ষণ ও জটিলতা

জরায়ু মুখের ক্যানসারের কিছু প্রাথমিক লক্ষণ হলো- 

মাসিকের মধ্যে দাগ বা হালকা রক্তপাত
অনিয়মিত, বা দুর্গন্ধযুক্ত যোনি স্রাব
মেনোপজের পরে দাগ বা রক্তপাত
যৌন মিলনের পর রক্তপাত

এই ক্যানসারে আরও কিছু লক্ষণ হলো- 

যোনিতে অস্বস্তি
পিঠে, শ্রোণীচক্রে বা উভয় পায়ে অবিরাম ব্যথা
এক পা বা উভয় পা ফুলে যাওয়া

ক্যানসার জরায়ুমুখ থেকে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়লে এসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে। 


জরায়ু ক্যানসার প্রতিরোধের উপায় 

জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধের অন্যতম একটি উপায় হলো টিকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, টিকা গ্রহণের মাধ্যমে ৮৫ শতাংশ ক্যানসার প্রতিরোধ করা যায়। জরায়ুমুখের ক্যানসারের টিকাকে এইচপিভি টিকা বলা হয়। এছাড়া নিয়মিত জরায়ুর মুখ পরীক্ষা করে সহজেই এই ক্যানসার থেকে দূরে থাকা সম্ভব।

এইচপিভি টিকা কারা দিতে পারবেন? 

এই টিকা দেওয়ার উপযুক্ত সময় হলো ৯-২৬ বছর বয়স। বিবাহিত জীবন শুরু করার পূর্বে টিকা অত্যন্ত কার্যকর। এছাড়া ৪৫ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ যারা বিবাহিত, তারাও এই টিকা দিতে পারবেন। আমাদের দেশে জরায়ুমুখ ক্যানসারের টিকা সহজলভ্য।


টিকার ডোজ

৯-১৪ বছর: দুটি ডোজ। প্রথমটি নেওয়ার ছয় মাস পর আরেকটি নিতে হয়। 

১৫-৪৫ বছর: তিনটি ডোজ। প্রথম টিকা নেওয়ার এক মাস এবং ছয় মাস পর বাকি দুটি টিকা নিতে হয়। 

নির্ধারিত ডোজ মিস হলে, দ্বিতীয় ডোজ প্রথম ডোজের ১২ মাসের মধ্যে দিলে ভালো। প্রথম থেকে শুরু করার প্রয়োজন নেই।

এইচপিভি টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

জরায়ু ক্যানসারের এইচপিভি টিকার সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো হলো-

টিকা দেওয়া স্থানে লালভাব বা ব্যথা
জ্বর
মাথা ঘোরা
বমি বমি ভাব
পেশী বা জয়েন্টে ব্যথা

জেনে রাখা ভালো, সরকারিভাবে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে কিশোরীদের এক ডোজ হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে। ২৪ অক্টোবর থেকে ঢাকা বাদে সাতটি বিভাগে স্কুল ও স্কুলের বাইরে বিনা মূল্যে এ টিকা দেওয়া হবে। এ কার্যক্রম চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত।

গত বছর প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে বিনামূল্যে এইচপিভি টিকা দেওয়া শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে যা কেবল ঢাকা বিভাগে এ কার্যক্রম চলেছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (ইপিআই অ্যান্ড সার্ভিল্যান্স) মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন জানান, স্কুলের পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রী এবং স্কুলের বাইরে থাকা ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীরা এ কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হবে।

সময় থাকতে জরায়ু ক্যানসারের টিকা নিয়ে নিন। টিকা নেওয়া থাকলেও নিয়মিত জরায়ুর মুখ পরীক্ষা করুন।