ঢাকা, শনিবার ২৩, নভেম্বর ২০২৪ ২:১১:০৪ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

হাসপাতাল ছাড়াই যশোর মেডিকেল কলেজ ১৪ বছর পেরিয়েছে

বাসস

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৩:২৪ পিএম, ২২ নভেম্বর ২০২৪ শুক্রবার

হাসপাতাল ছাড়াই যশোর মেডিকেল কলেজ ১৪ বছর পেরিয়েছে

হাসপাতাল ছাড়াই যশোর মেডিকেল কলেজ ১৪ বছর পেরিয়েছে

হাসপাতাল ছাড়াই যশোর মেডিকেল কলেজের বয়স ১৪ বছর পেরিয়ে গেছে। ফলে এখনও শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ ক্লাসের জন্য ৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় যশোর জেনারেল হাসপাতালে। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, তেমনি বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের ২০ লক্ষাধিক মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন উন্নত চিকিৎসা সেবা থেকে।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় তৎকালীন মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের প্রচেষ্টায় ২০০৬ সালে যশোরে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের অনুমোদন দেয় সরকার।

যশোর শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে হরিণার বিলে ৭৫ বিঘা জমি অধিগ্রহণও করা হয়। ২০১০-১১ সেশনে প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। অস্থায়ীভাবে যশোর জেনারেল হাসপাতালে কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়।

পরে ২০১৬ সালের আগস্টে হরিণার বিলে নিজস্ব ক্যাম্পাসে কলেজের কার্যক্রম চালু হয়। এরপর এত বছর অতিবাহিত হলেও মেডিকেল কলেজচি হাসপাতালের দেখা পায়নি ।

যশোরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে এক পর্যায়ে ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অনুমোদন করা হয়। যশোর, কক্সবাজার, পাবনা ও নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণের জন্য একজন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ দিয়ে টাকা বরাদ্দও করা হয়। তবে আজ পর্যন্ত যশোরে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কোন কাজ শুরু না হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

যশোর মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইসরাত নাজনীন সুমি বলেন, মাসে ২৫দিন থিউরিটিক্যাল ও প্রাকটিক্যাল ক্লাস করতে হয়, ক্যাম্পাস থেকে হাসপাতাল ৫ কিলোমিটার দূরে হওয়ায়  রাতে যাওয়া-আসা করার সময় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়। সব ক্লাসে উপস্থিত হওয়া সম্ভব হয় না। একই বষের শিক্ষার্থী অর্পিতা সরকার বলেন, অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষে বই কেনা সম্ভব হয় না। কলেজের লাইব্রেরিই তাদের একমাত্র ভরসা। কিন্তু একাডেমিক ভবনের সাথে হাসপাতাল না থাকায় প্রাকটিক্যালের সময় তারা লাইব্রেরির সহযোগিতা পান না। তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানও রাতে ৫ কিলোমিটার গিয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালে প্রাকটিক্যাল ক্লাস করতে সমস্যার কথা জানান। তিনি অবিলম্বে কলেজের সাথে হাসপাতাল স্থাপনের দাবি করেন।

যশোর মেডিকেল কলেজের প্যাথলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আযম সাকলায়েন বলেন, হাসপাতাল নির্মাণের জন্য পিডি নিয়োগ করা হয়েছে, উনি ঢাকায় থাকেন। একবার যশোরে এসে হাসপাতালের জায়গা পরিদর্শনও করে গেছেন। এরপর আর কোন অগ্রগতি হয়েছে কিনা তিনি জানাতে পারেননি। 

তিনি আরও বলেন, তৃতীয় বর্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল ক্লাস শুরু হয়। এমবিবিএস পাশ করার পর ইন্টার্ন শুরু হয়। শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের সন্ধ্যায় ক্লিনিক্যাল ক্লাস থাকে। ৫ কিলোমিটার দূরে জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে সীমিত পরিসরে এসব কাজ করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। 

তিনি বলেন, মেডিকেল কলেজের সাথে হাসপাতাল থাকলে যশোর অঞ্চল তথা যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইলের মানুষ উন্নত চিকিৎসা সেবা পেতো, সেটাও হচ্ছে না।

যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, লাল ফিতার দৌরাত্মে যশোরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আটকে পড়েছে। অবিলম্বে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করা না হলে যশোরের মানুষকে সাথে নিয়ে তারা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবেন বলে জানানতিনি।

যশোর, কক্সবাজার, পাবনা, নোয়াখালীতে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আমজাদুল হক বলেন, শুধু পাবনায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণ কাজে ভাল অগ্রগতি হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এক চিঠির প্রেক্ষিতে নোয়াখালীতে ১০ তলা হাসপাতাল ভবন নির্মাণের কাজ এখন বন্ধ আছে। 

প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘যশোর ও কুষ্টিয়ার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়ে আমার যা কাজ সব সাবমিট করেছি। কিন্তু সেটা আবার গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তারা কিছু রিচেক, ইনকোয়ারি করবে। 

তিনি বলেন, আমাদের জটিলতা সব ক্লিয়ার করা আছে। এখন কাজ গণপূর্তের। তারা ইনকোয়ারি শেষ করে কতো দ্রুত কাজ শুরু করতে পারবে, সেটা তাদের বিষয়।