বাংলাদেশ খুব কাছ থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১২:৪৯ পিএম, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪ শনিবার
সংগৃহীত ছবি
সেক্টর ২ ও ৩ এর বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরহাদ মাহমুদ বলেন, দেশে সাম্যের জন্য বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমরা সেদিন গুলির মুখে বুক পেতে দিয়েছিলাম। সাধ করে আমরা পাকিস্তান ভাংগি নাই।
আজকে অনেকে আবার পাকিস্তান বানাতে চায়। দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের সংবিধানে সমাজতন্ত্র এলো পরবর্তীকালে নাই হয়ে গেল। ধর্ম নিরপেক্ষতায় এলো, নাই হয়ে গেল। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের যে আশা -চেতনা ছিল, সেগুলো আর রইল না। যে বাংলাদেশ খুব কাছ থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে ।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৫.২০মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজন এবং জুলাই-আগষ্ট ২০২৪ এ স্বৈরাচারী সরকারের পতনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে নারীপক্ষ’র বিশেষ স্মরণ অনুষ্ঠান ‘আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার’ এ স্মৃতিচারণ করেন সেক্টর ২ ও ৩ এর বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরহাদ মাহমুদ।
এবারের প্রতিপাদ্য “সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদার বাংলাদেশ কতদূর?” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ‘আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে’ গানের সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজন এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে উপস্থিত সকলে একটি করে মোমবাতি জ্বালিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
ঘোষণাপত্র পাঠ করেন নারীপক্ষ’র সদস্য রেহানা সামদানী। তিনি বলেন, সমতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সূচনা হয়েছিলো। স্বাধীনতা পরবর্তীতে এই রাষ্ট্রেটিতে বহু পট পরিবর্তন ও একের পর এক শাসক বদল হয়েছে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে দাঁড়িয়েও আমাদের ভাবতে হচ্ছে, বাংলাদেশটা কি আজও সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদার বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পেরেছে! মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান হয়ে সকল অসমতা দূর করে একটি অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক মর্যাদার বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করবে।
তিনি আরো বলেন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানুষ হিসেবে মর্যাদা পাবার আকাঙ্ক্ষা ভূলুণ্ঠিত হয়।
তিনি বলেন, ২৪ এর জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অপ্রতিরোধ্য আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সংঘটিত রক্তক্ষয়ী গণঅভুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশেও আমরা স্বস্তিতে নেই। প্রতিহিংসার রাজনীতি অব্যাহতভাবে চলছে। সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান এখনও হয়নি। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ন্যায়বিচার এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। বাজার সিন্ডিকেট ভাঙা যায়নি।
দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে স্বল্প আয়ের মানুষ দিশেহারা। নানাবিধ ধর্মীয় উস্কানিতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় মানুষ। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, সাম্য, সামাজিক ন্যায় বিচার ও মানবিক মর্যাদার বাংলাদেশ কতদূর।
বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী সুফিয়া আকতার স্মৃতিচারণে বলেন, এই বাংলাদেশে কোনো ধর্মের বিভেদ থাকবে না। যখন রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হয়, তখন অন্য ধর্মের মানুষদের অসহায়ত্ব বোধ হয়। দেশে ন্যায় বিচার থাকলে সাগর- রুনীর হত্যার বিচার হতো। বিচার বিভাগের সংস্কার দরকার।
দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা/ মুক্তির মন্দিরও সোপানও তলে কত প্রাণ হলো বলিদান ইত্যাদি গান পরিবেশন করেন- জলতরঙ্গের শিল্পীবৃন্দ জাকির হোসেন, তপন, তানভীরা আশরাফ শ্যামা, শান্তনু সাহা রায়, এণা রাশ, রামিশা চৌধুরী, ফয়সাল তানভীর, স্বপ্না নন্দী, ফারজানা ইয়াসমিন ও রণজিত রায় রঞ্জু, তবলায় ভুলু ধর । কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা গাহি সাম্যের গান আবৃত্তি করেন ইকবাল আহমেদ ও মহাদেব সাহার শান্তির গান কবিতা আবৃত্তি করেন ডা: সালমা শবনম। নারীপক্ষ’র সদস্য ফেরদৌসী আখতার এর ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।